বিজ্ঞাপন

গেরিলা যোদ্ধা ও সাংবাদিক রইসুল হক বাহারের জীবনাবসান

September 19, 2018 | 8:20 am

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ১৯৭১ সালের মার্চে বাঙালির উপর নিধনযজ্ঞ চালানোর জন্য পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা অস্ত্রবোঝাই সোয়াত জাহাজ প্রতিরোধের অন্যতম বীর সেনানী, গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা রইসুল হক বাহার আর নেই।

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে দশটায় এই মুক্তিযোদ্ধার জীবনাবসান হয়েছে। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সাংবাদিকতা পেশায় ছিলেন রইসুল হক বাহার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।

রইসুল হক বাহারের নিকটাত্মীয় মো. আলাউদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দৈনিক পূবর্কোণে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হন রইসুল হক বাহার। এরপর তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া রইসুল হক বাহার ১৯৭১ সালে ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের জুনিয়র ক্লার্ক। ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম’ গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বেলা আড়াইটায় বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে পাকিস্তানের এমভি সোয়াত নামে একটি জাহাজ আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। পাকিস্তানি সেনারা সেই জাহাজের অস্ত্র খালাসের উদ্যোগ নিলে বন্দরের শ্রমিকরা বুঝে যান, সেগুলো চালানো হবে বাঙালির বুকে।

শ্রমিকরা অস্ত্র খালাসে অপারগতা জানালে পাক সেনারা তাদের বুকেই গুলি চালিয়ে দেয়। সোয়াত জাহাজে করে অস্ত্র আসার খবর ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রামের সর্বস্তরে। দাবানলের মতো জ্বলে উঠে মুক্তিকামী বাঙালি। অস্ত্র খালাস প্রতিরোধের ডাক আসে। প্রতিরোধ করতে গিয়ে আবারও পাক সেনাদের গুলির মুখে পড়েন জনতা। অকাতরে বিলিয়ে দেন প্রাণ।

‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম’ গ্রন্থের ২৬৯ পৃষ্ঠায় সোয়াত জাহাজ প্রতিরোধ করতে গিয়ে ২৩ জন নিহতের তথ্য উল্লেখ আছে। মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর আগেই ২৪ মার্চ সোয়াত জাহাজের অস্ত্র খালাস প্রতিরোধের সেই দিনটি ব্যাপক আকারে ‘বাঙালির জনযুদ্ধ’ হিসেবে স্থান পেয়েছে ইতিহাসের পাতায়।

বিজ্ঞাপন

মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমানের মতে, ২৪ মার্চ সোয়াত জাহাজ প্রতিরোধের জন্য যে রক্তস্নাত আন্দোলন হয়েছিল সেটা জনযুদ্ধে ব্যাপকতা দেয়। কারণ এই আন্দোলনে শ্রমিক, ছাত্র, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সাধারণ জনতা সবাই ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে এটা পাকিস্তানীদের বাঙালির প্রথম সম্মুখ প্রতিরোধ হিসেবে সেসময় ব্যাপক উদ্দীপনার জন্ম দিয়েছিল।

‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে, সেদিন সোয়াত জাহাজ প্রতিরোধের সমাবেশ আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের নেতা শামসুদ্দিন, চট্টগ্রাম বন্দরের জুনিয়র ক্লার্ক আ ক ম রইসুল হক বাহার, তরুণ ছাত্র আব্দুস সাত্তার ও তারেক।

রইসুল হক বাহার মুক্তিযুদ্ধেও সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তিনি গেরিলা কমান্ডার হিসেবে চট্টগ্রামের কৈবল্যধাম রেল স্টেশন উড়িয়ে দেয়ার অভিযানে নেতৃত্ব দেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের চাকরির পাশাপাশি রইসুল হক বাহার সাংবাদিকতা শুরু করেন। দৈনিক সেবক পত্র, দৈনিক গণকণ্ঠ, দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায় তিনি কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের বার্তা সম্পাদক, ডেইলি স্টার পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান হিসেবেও কাজ করেন। সবর্শেষ তিনি পূর্বকোণের সহযোগী সম্পাদক হিসেবে কাজ করছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে অবসরে যান।

বিজ্ঞাপন

অবসরে রইসুল হক বাহার নির্মিতব্য ‘অপারেশন জ্যাকপট’ চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপি প্রণয়নের সাথে যুক্ত ছিলেন। ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দর’ বইয়ের সম্পাদনাও করেন তিনি। এছাড়া ‘পশ্চিম পাকিস্তানের শেষ রাজা’ বইয়ের অনুবাদও করেন তিনি।

রইসুল হক বাহারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ও যুগ্ম মহাসচিব মহসিন কাজী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি কলিম সরওয়ার ও সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস।

সারাবাংলা/আরডি/এনএইচ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন