বিজ্ঞাপন

ঘর সাজাতে অনেক টাকা নয়, শখটাই আসল

August 26, 2018 | 11:53 am

তিথি চক্রবর্তী।।

বিজ্ঞাপন

শাহানা হুদা, একটি বেসরকারি সংস্থায় বড় পদে কাজ করছেন। মূলত ঘর সাজানোই তার নেশা এবং প্রিয়তম শখ। তাই সত্যিকারের শিল্পীমন নিয়েই সাজিয়েছেন তার বসার ঘরটি। যেখানে আছে অসাধারণ সব শিল্পকর্ম।

কখন থেকে ঘর সাজানোর আগ্রহ জন্মালো, জানতে চাইলে অতীতটা অল্প কথায় তুলে ধরেন তিনি।  শ্বশুড় বাড়িতে যাওয়ার পর ঘর সাজানোর আগ্রহ শুরু হয় শাহানা হুদার। তখন ছোট্ট একটি বাড়িতে থাকতেন তারা, দামি জিনিস কেনার সামর্থ্যও তেমন ছিল না। তাই অল্প দামে মাটির শো পিস, গাছ, কাগজের জিনিস কিনতেন ঘর সাজানোর জন্য। সেখান থেকেই শুরু। ঘর সাজানোর জন্য টাকার চেয়ে শখ থাকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

 

বিজ্ঞাপন

অনেকেই ঘর সাজানোর জন্য নামিদামি ডিজাইনারের সহযোগিতা নেন। কিন্তু শাহানা হুদা নিজেই গুছিয়েছেন সব। তার মতে, ঘর সাজানো মানেই অনেক খরচ নয়। একটুখানি বুদ্ধি খাটালে সাধারণ বা কম দামি জিনিস দিয়েও ঘর সাজানো যায়। এতে রুচিশীলতার প্রকাশ ঘটে। কিসের সাথে কী মানাবে সেটা বুঝতে পারাই আসল কথা।

 

বিজ্ঞাপন

শাহানা হুদার বসার ঘরটি অত্যন্ত ছিমছাম। স্থাপত্যশৈলী, আকর্ষণীয় অন্দরসাজ, দারুণ সব হাতের কাজসহ নানান শিল্পশৈলীতে সাজানো তার ঘর। দেশীয় ‍জিনিসকেই প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। তবে দেশের বাইরে থেকে আনা বেশ কিছু শিল্পকর্ম ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে।

ঘরময় সাজানো হয়েছে দেশ, বিদেশ থেকে আনা নানা ধরনের শো পিস, মুখোশ, পুতুল, দেয়ালে ঝুলানোর ম্যাট, মাটির তৈজসপত্র, গিরগিটি আর হাতির মুখ। কোন দেয়ালে টাঙ্গানো বিশ্বখ্যাত চিত্রকর ভ্যানগঘের আঁকা ছবির প্রিন্ট। এদেশের শিল্পী গৌতম চক্রবর্তী ও শম্ভু আচার্যের তৈরি করা ম্যাট সাজিয়ে রাখা হয়েছে দেওয়ালে।

বিজ্ঞাপন

চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক জিনিস আমাদের কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। কিন্তু ওগুলো দিয়েও সুন্দর করে ঘর সাজানো যায়। এই প্রসঙ্গে শাহানা বললেন, একবার শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে গিয়ে দুটি গাছের গুঁড়ি চা বাগানে পড়ে থাকতে দেখে ওগুলো নিয়ে আসেন ঢাকায়। সুন্দরভাবে কেটে নতুন রূপ দেন।

এখন দেখে বোঝার উপায় নেই যে একদিন ওগুলো কুড়িয়ে এনেছিলেন। একটি গুঁড়ির ওপর রেখেছেন বহুদিনের পুরনো একটি কাপড়ের ইস্ত্রি, আরেকটি ব্যবহার করছেন ল্যাম্প শেড সাজিয়ে রাখার জন্য।

 

পুরনো জিনিসের একটা আলাদা সৌন্দর্য্য আছে বলে মনে করেন শাহানা হুদা। এজন্য তার বাবার ব্যবহার করা ট্রাঙ্ক, টেবিল ল্যাম্প ও কলমদানি খুব যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছেন বসার ঘরে। পুরনো ট্রাঙ্ক রং করেছেন এমনভাবে যা দেখতে একেবারে নতুনের মতই লাগছে। ট্রাঙ্কের ওপর সাজিয়ে রেখেছেন নানা ধরনের শো পিস। সোফায় বসলে এই ব্যতিক্রমধর্মী শৈল্পিক জিনিসটি চোখে পড়বে সবার।

ঘর সাজানোর কাজে পরিবারের অন্যান্যরাও সহযোগিতা করেন শাহানাকে। একমাত্র মেয়ে থাকেন দেশের বাইরে। মায়ের শখ যেহেতু ঘর সাজানো, তাই মেয়ে দেশের বাইরে থেকে শো পিস, মুখোশ পাঠিয়ে দেন মায়ের জন্য। শুধু তাই নয়, মেয়ে ভাল ছবি আঁকেন। মেয়ের আঁকা ছবিও বাঁধিয়ে রেখেছেন তিনি। দেওয়ালে টাঙ্গানো এই ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে মেয়ের কথা মনে করলেন শাহানা। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও ঘর সাজানোর জিনিস কেনেন।

বসার ঘরে খুব বেশি আসবাবপত্র রাখার পক্ষপাতি নন শাহানা। এজন্য বসার ঘরে রেখেছেন তিনটে কাঠের সোফা। সোফার কভার, পর্দা ও কুশন কভার তৈরি করেছেন সুতি কাপড় দিয়ে।

তিনি গাঢ় রং পছন্দ করেন। তাই কভার নির্বাচনের ক্ষেত্রে গাঢ় রঙ প্রাধান্য দিয়েছেন। এছাড়াও ঘরের এক কোনায় জানালার পাশে আরেকটি বসার জায়গা আছে। সেটি সাজিয়েছেন কুশন দিয়ে।

তার আরেকটি শখ হল রান্নাঘরের জিনিসপত্র কেনা। নানা ডিজাইনের গ্লাস, কাপ, মগ, প্লেট, ট্রে কিনেছেন তিনি। এগুলো বেশিরভাগ সিরামিক ও মেলামাইনের।

বিদেশে গেলেও কমদামে ঘর সাজানোর জিনিস কিনে আনেন। ‍তার বসার ঘরের বিশেষত্ব হল ঘরের দেওয়াল জুড়ে রয়েছে নানা ধরনের মুখোশ। এর মধ্যে কয়েকটি বাংলাদেশ থেকে এবং বাকিগুলো ইন্দোনেশিয়া ও ব্যাংকক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

দেওয়ালে রাখা মাটির গিরগিটি ঘরের সৌন্দর্য আরেকটু বাড়িয়ে তুলেছে। কোথা থেকে এটি সংগ্রহ করেছেন- জানতে চাইলে বলেন, ম্যাক্সিকো থেকে গিরগিটি আনা হয়েছে। ওই দেশে গিরগিটিকে মঙ্গলের প্রতীক হিসেবে মানা হয়। ওখানে প্রায় সবার ঘরে গিরগিটি শো পিস হিসেবে রাখা হয়। ঘরে সাজিয়ে রাখলে দেখতে ভাল লাগে, তাই আমিও নিয়ে আসলাম।

 

গাছ ও ফুল খুব ভালবাসেন তিনি। তাই বসার ঘরের এককোণে কাঁচের ফুলদানিতে তাজা ফুল রেখেছেন। আর ছোট্ট বারান্দায় শোভা এনেছে নানা ধরনের গাছ।

শাহানা হুদা মাঝে মাঝে পুরান ঢাকায় যান ঘর সাজানোর জিনিস কিনতে। রাস্তার ধারে বিক্রি করা কাঁচের বোয়াম, পাখি, মাটির সরা কিনতে ভালবাসেন। দাম কম হলেও ঘর সাজাতে এগুলো অতুলনীয়।

শিল্পী মাত্রই রূপবিলাসী। তার সৃষ্ট রুপই হল শিল্প। শাহানা হুদার ঘরটি দেখলে তার ভেতরে থাকা শিল্পীমনের পরিচয় পাওয়া যায়।

 

ছবি- আশীষ সেনগুপ্ত

 

সারাবাংলা/টিসি/ এসএস

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন