বিজ্ঞাপন

চকবাজারে আগুন: গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংকটে বেড়েছে দুর্ভোগ

February 23, 2019 | 7:41 pm

।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: গত বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে দশটায় রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনও থমথমে পুরো এলাকা। ঘটনার তিন দিন পার হলে ৬৭ জনের মৃত্যুর শোক আর আতঙ্কের রেশ বয়ে বেড়াচ্ছেন এলাকাবাসী। পাশাপাশি বাসাবাড়ির গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পানির সংযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে শোকের সঙ্গে দুর্ভোগও বেড়েছে স্থানীয়দের।

স্থানীয়রা বলছেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর তিনদিন পার হলেও এলাকায় এখনও গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ পুরোপুরি সচল হয়নি। এতে খাওয়া-দাওয়া এবং গোসলসহ যাবতীয় কাজে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। প্রতিনিয়তই বাড়ছে দুর্ভোগ।

শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চকবাজারের চুড়িহাট্টার শাহী জামে মসজিদের চারদিকে প্রায় অর্ধশত বাড়িতে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য পাওয়া যায়। এসব বাসায় প্রায় ৫ শতাধিক বাসিন্দা বসবাস করছেন। তারা বলছেন, ‘এতো বড় একটা ঘটনার পর পানি, বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে এটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এতোগুলো মানুষ টানা তিনদিন ধরে এসব ছাড়া কত কষ্টে বসবাস করছে তা দেখতেও কেউ আসেনি।’

বিজ্ঞাপন

তবে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগকারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ খুব শিগগিরই সচল হবে। এরইমধ্যে কিছু কিছু জায়গায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ এবং পানি সরবরাহের কার্যক্রম চলছে।’ স্থানীয়দের একটু ধৈর্য ধরতেও আহ্বান জানিয়েছেন কর্মকর্তারা, নাগরিক দুর্ভোগ এড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে বলেও জানান তারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বাসিন্দাদের জন্য ন্যূনতম খাবার বা পানির ব্যবস্থা করতে পারতো, তাও করেনি। এমনকি করপোরেশনের পক্ষ থেকে খোঁজও নিতে আসেনি কেউ। তাই অতিদ্রুত এ সমস্যার দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

চুড়িহাট্টার ২/১ আজগর লেনের গৃহিনী আয়েশা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ তিনদিন ধরে বাসায় গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি কোনোটায় নাই। বাইরের খাবার কিনে পেট চালাচ্ছি। ৪ বছরের একটা ছেলে আছে আমার, খুব কষ্ট হচ্ছে এখানে থাকতে, কবে যে এগুলোর সমাধান হবে আল্লায় জানে। শুনছি এমন ঘটনা ঘটলে সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে হালকা কিছু খাবার আর পানি দিয়ে যায়। কিন্তু আমগোরে তো কেউ দেখতেও আইলো না।’

চুড়িহাট্টা লেনের ৩৬/১/১ এর আরেক গৃহিনী রোকসানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগুনের পর বহু পরিবার ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় চলে গেছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস-পানি এলে তারা আসবে। আবার কারো কারো আত্মীয়রা বিভিন্নস্থান থেকে তাদের জন্য খাবার আনতেছে। কিন্তু আমরা তো ভাড়া থাকি, হঠাৎ এ ঘটনায় কোথায় যামু। তাই কষ্ট হলেও বাইরের খাবার খেয়ে থাকতেছি। হোটেলে এক প্লেট খাবার কিনতে গেলেও এক/দেড়শ টাকা চলে যায়। টাকা তো আর কুলায় না।’

একই অভিযোগ করেছেন ৩৩/১ এর বাড়ির মালিক মকবুল হোসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুপুরের পর গ্যাস হালকা আসছে। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় ট্যাংকিতে পানি তুলতে পারছি না। যে কারণে পানি বাইরের থেকে এখনও কিনে আনছি। যদি বিদ্যুৎ আসে তাহলে কিছুটা হলেও সমাধান হইতো।’

বিজ্ঞাপন

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর সেবা সংস্থার পক্ষ থেকে নিয়োজিত ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তা মিল্লাতুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগুনের ঘটনার পর থেকে কেউ কিন্তু বসে নেই। সবাই সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন যাতে নাগরিক দুর্ভোগ না হয়। সেজন্য অগ্নিকাণ্ডের পরের দিনই ডিএসসিসির মেয়রের নির্দেশে ধংসস্তুপ অপাসারণ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল বিকেল থেকে গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন সচলের কাছ করা শুরু হয়েছে। পানি তো আছেই শুধু বিদ্যুতের কারণে বাসার ট্যাংকে তুলতে পারছে না হয়তো। কিন্তু এরইমধ্যে অধিকাংশ বাসায় গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন সচল হয়ে গেছে। বাকি বাসায়ও রাতের মধ্যে সচল হয়ে যাবে। তবে একটু ধৈর্য ধরতে হবে বাসিন্দাদের। কারণ ক্ষতিগ্রস্ত লাইনগুলো সংস্কার করতে একটু সময় বেশি লাগছে।’

উল্লেখ্য, গত বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন লাগে চুড়িহাট্টার হাজী ওয়াহেদ ম্যানসনে। পরে তা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কয়েকটি ভবনে। বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন। উদ্ধার পরবর্তী সময়ে ৬৭ জনের মারা যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৪১ জন।

সারাবাংলা/এসএইচ/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন