বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে নতুন প্রজন্মের ৭ লাখ ভোটার হবেন ‘জয়-পরাজয়ের’ নিয়ামক

September 18, 2018 | 10:50 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম জেলায় এবার ভোটার ও ভোটকেন্দ্র উভয়ের সংখ্যা বেড়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়ার যোগ্য হয়েছেন প্রায় ৭ লাখ ভোটার, যাদের মধ্যে প্রায় সবাই নতুন প্রজন্মের ভোটার। এসব তরুণ ভোটার এবারের নির্বাচনে নিয়ামক হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকদের মতে, তথাকথিত স্লোগানের রাজনীতি দিয়ে নতুন প্রজন্মের সিংহভাগ ভোটারের মন জয় করা যাবে না। মেধা ও যুক্তিনির্ভর অর্থবহ বক্তব্য তুলে ধরতে না পারলে তাদের সমর্থন পাবে না ক্ষমতার রাজনীতিতে এগিয়ে থাকা দেশের রাজনৈতিক দলগুলো।

সচেতন নাগরিক কমিটি-ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলায় সাত লাখের মতো ভোটার বেড়েছে। প্রতি আসনে বেড়েছে ৫০ হাজার কিংবা তার চেয়ে কিছু কম। এই যে তরুণ প্রজন্মের ভোটাররা, তারা কোন সৃজনশীল, ভালো রাজনীতি দেখে বড় হয়নি। আমরা রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ যে তরুণ প্রজন্মকে দেখি, এই ভোটাররাই সেই প্রজন্ম। তারা তথাকথিত যে রাজনীতি বাংলাদেশে চলমান, সেটার বিরুদ্ধে। কোটা আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে আমরা এটার প্রমাণ দেখেছি। আমি বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যাবে তারা সেটা বলছি না, তবে তাদের মধ্যে এন্টি স্টাবলিশমেন্ট মনোভাব আছে।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান সারাবাংলাকে বলেন, চট্টগ্রামে এবার ভোটারের মোট সংখ্যা ৫৬ লাখ ৩৯ হাজার ৩৬৩। বেড়েছে ৭ লাখ ১৬ হাজার ৮৮৬ জন। ফলে নতুন ৫৮টি ভোটকেন্দ্র ও ৮১৬টি বুথ বাড়াতে হয়েছে।

চট্টগ্রামে সংসদীয় আসন ১৬টি। সেগুলো মহানগরীর ছয়টি থানা ও ১৫টি উপজেলা নিয়ে।

সূত্রমতে, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনের চট্টগ্রাম জেলায় ভোটার সংখ্যা ছিল ৪৯ লাখ ২২ হাজার ৪৭৭ জন। তারমধ্যে পুরুষ ভোটার ২৫ লাখ ১৪ হাজার ৫৭৫ ও মহিলা ভোটার ২৪ লাখ ৭ হাজার ৯০২ জন।

বিজ্ঞাপন

এবার ৫৬ লাখ ৩৯ হাজার ৩৬৩ জনের মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৯ লাখ ১৪ হাজার ৪২১ ও মহিলা ভোটার ২৭ লাখ ২৪ হাজার ৯৪২।

চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪৫৯, চান্দগাঁওয়ে ৩ লাখ ১ হাজার ৬৯১, কোতোয়ালীতে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৯১৪, ডবলমুরিংয়ে ৪ লাখ ৮ হাজার ৫০, পাহাড়তলীতে ২ লাখ ৫২ হাজার ৯০৪ ও বন্দর থানায় ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৬৬৭ জন ভোটার আছেন।

চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলার মধ্যে মিরসরাইয়ে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৩, সন্দ্বীপে ২ লাখ ৩ হাজার ২৮৫, সীতাকুণ্ডে ২ লাখ ৯১ হাজার ৬১৪, হাটহাজারীতে ৩ লাখ ৭ হাজার ৯৪০, রাউজানে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮২, রাঙ্গুনিয়ায় ২ লাখ ৫৩ হাজার ১২২, বোয়ালখালীতে ১ লাখ ৮০ হাজার ২৪৭, পটিয়ায় ২ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৭, কর্ণফুলীতে ১ লাখ ১০ হাজার ৭৫৭, আনোয়ারায় ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৪২, চন্দনাইশে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৫, সাতকানিয়ায় ২ লাখ ৮৩ হাজার ৪৬৭, লোহাগাড়ায় ১ লাখ ৯০ হাজার ৩২০ ও বাঁশখালীতে ৩ লাখ ৩ হাজার ৯ জন ভোটার আছেন।

নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন খান সারাবাংলাকে বলেন, যে সাত লাখ ভোটার বেড়েছে তাদের মধ্যে ২-১ শতাংশ বাদে পুরোটাই নতুন ভোটার। কেউ কেউ বিদেশে থাকায় বা নিজস্ব সমস্যার কারণে ভোটার হতে না পারায় এবার যুক্ত হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

রোটারি ক্লাব অব চিটাগং অ্যারিস্ট্রোক্রেসি’র সাবেক সভাপতি, অনলাইন একটিভিস্ট তানভির শাহরিয়ার রিমন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নতুন যারা ভোটার তারা শিক্ষিত, মেধাবী। তারা আওয়ামী লীগ-বিএনপি বোঝে না। তারা স্বচ্ছতা বুঝে, কাজ বুঝে। ইন্টারনেটের কারণে তাদের সামনে এখন পুরো বিশ্ব। তথাকথিত রক্ত দেব, রক্ত নেব কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা- এসব পিলে চমকানো স্লোগান দিয়ে তাদের টানা যাবে না। তাদের সামনে অর্থপূর্ণ, মেধানির্ভর, নতুন ধারার রাজনীতি নিয়ে যেতে হবে। কথার ফুলঝুরি দিয়ে তাদের কনভিন্স করা যাবে না।’

‘আমার কাছে যতটুকু তথ্য আছে, ৪০ শতাংশ ভোটারই এবার তরুণ। তারা কি করতে পারে সেটা তারা নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে দেখিয়ে দিয়েছে। আমাদের রাজনীতিকরা, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গত ৪৭ বছরে যেটা করতে পারেনি, সেটা তারা করে দেখিয়েছে। সুতরাং তারা তথাকথিত স্লোগাননির্ভর রাজনীতিতে ভুলবে না এবং তারা জয়-পরাজয়ে অবশ্যই বড় ফ্যাক্টর হবে।– যোগ করেন এই তরুণ কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব

অ্যাডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের যেসব ভোটার তাদের বেড়ে ওঠাটা ক্ষমতাসীন সরকারের আমলেই। সরকার তাদের সামনে ভালো কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি। স্বাভাবিকভাবেই তারা সরকার বিরোধী মনোভাবের হবে। কিন্তু তার অর্থ এটা নয় যে, তারা বিএনপির দিকে ঝুঁকবে। কারণ বিএনপিও তাদের সামনে কোন ভালো রাজনীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি।’

বেড়েছে ভোটকেন্দ্র

চূড়ান্ত তালিকায় এবার চট্টগ্রামের ভোটকেন্দ্র বেড়েছে ৫৮টি। দশম সংসদ নির্বাচনের চট্টগ্রাম জেলায় ভোটকেন্দ্র ছিল ১৮৪০টি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে মোট ভোট কেন্দ্র থাকবে ১৮৯৮টি।

পাশাপাশি বেড়েছে বুথের (ভোটকক্ষ) সংখ্যাও। দশম সংসদ নির্বাচনের চট্টগ্রাম জেলার কেন্দ্রগুলোতে বুথ ছিল ৯ হাজার ৮৬৭টি। নতুন যুক্ত হওয়া ৮১৬টি বুথ মিলিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বুথ থাকবে ১০ হাজার ৬৮৩টি।

সূত্রমতে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভোটকেন্দ্র বেড়েছে ১১টি আর ভোটকক্ষ বেড়েছে ১৭২টি।

এর মধ্যে নগরীর পাঁচলাইশে একটি কক্ষ বেড়ে ১০১টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভোটকক্ষ আগের চেয়ে ২০টি কমে হয়েছে ৫৬৭টি।

চান্দগাঁও থানায় পূর্বের একশটি ভোটকেন্দ্র অপরিবর্তিত আছে। ভোটকক্ষ ৬৩টি বেড়ে হয়েছে ৫৯৮টি।

কোতোয়ালীতে একটি কেন্দ্র বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯টি। ভোটকক্ষ ৩৩টি বেড়ে হয়েছে ৪৪৯টি।

ডবলমুরিং এ ১০৩টি ভোটকেন্দ্র অপরিবর্তিত রয়েছে। ভোটকক্ষ ১৬টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪৩টি।

পাহাড়তলীতে আটটি ভোটকেন্দ্র বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১টি। ভোটকক্ষ ৬৮টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮৬টি।

বন্দর থানায় একটি কেন্দ্র বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০১টিতে। ১২টি ভোটকক্ষ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩৬টিতে।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলায় ভোটকেন্দ্র বেড়েছে ৪৭টি আর ভোটকক্ষ বেড়েছে ৬৪৪টি।

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় ৭টি ভোটকেন্দ্র বেড়ে আগামী নির্বাচনের জন্য ১০৩টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভোটকক্ষ ৮০টি বেড়ে করা হয়েছে ৬৫০টি।

ফটিকছড়ি উপজেলায় তিনটি ভোটকেন্দ্র বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৬টি। ৯৩টি ভোটকক্ষ বেড়েছে দাঁড়িয়েছে ৬৯০টি।

সন্দ্বীপ উপজেলায় ৭৯টি ভোটকেন্দ্রের পরিবর্তন হয়নি। ৫টি কক্ষ বেড়ে হয়েছে ৩৬৫টি।

সীতাকুণ্ড উপজেলায় ৮২টি ভোটকেন্দ্র ও ৫০৪টি ভোটকক্ষ অপরিবর্তিত রয়েছে।

হাটহাজারী উপজেলা ১০৬টি ভোটকেন্দ্র বহাল রয়েছে। ৫৮টি ভোটকক্ষ বেড়ে হয়েছে ৫৫৯টি।

রাউজানে একটি কেন্দ্রে বেড়ে হয়েছে ৮৪টি। ভোটকক্ষ ৪৫৫টি অপরিবর্তিত রয়েছে।

রাঙ্গুনিয়ায় তিনটি ভোটকেন্দ্র বেড়ে ৮৮ টিতে দাঁড়িয়েছে। ভোটকক্ষ ২১টি বেড়ে হয়েছে ৪৪৩টি।

বোয়ালখালীতে ৭৭টি ভোটকেন্দ্র বহাল রয়েছে। ভোটকক্ষ ৫৩টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১১টি।

পটিয়ায় ১২টি ভোটকেন্দ্র বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১১টি। ভোটকক্ষ ১৫০টি বেড়ে হয়েছে ৬৭৯টি।

কর্ণফুলী উপজেলায় ভোটকেন্দ্র ৩২টি থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৯ টি। আর ভোটকক্ষ ৬৬টি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৫টি।

আনোয়ারায় একটি ভোটকেন্দ্র বেড়ে হয়েছে ৬৭টি। ১৫টি ভোটকক্ষ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০১টি।

চন্দনাইশ উপজেলায় একটি কেন্দ্র বেড়ে হয়েছে ৬৮টি। ভোটকক্ষ ৩৫৫টি অপরিবর্তিত রয়েছে।

সাতকানিয়ায় ১৩টি ভোটকেন্দ্র বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৪টি। ভোটকক্ষ ২৮টি বেড়ে হয়েছে ৫৭০টি।

লোহাগাড়ায় একটি কেন্দ্রে কমে হয়েছে ৫৯টি। ৪০টি কক্ষ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭৭টি।

বাঁশখালীতে ১১০টি ভোটকেন্দ্র অপরিবর্তিত রয়েছে। ৩৫টি ভোটকক্ষ বেড়ে হয়েছে ৫৯০টি।

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন