বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে বিএনপির ঈদ উদযাপনে খালেদার কারামুক্তি ইস্যু

June 17, 2018 | 2:08 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঈদুল ফিতরের পরদিন ঐতিহ্যবাহী মেজবানের আয়োজন করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাদের দীর্ঘদিনের দিনের রীতি। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকায় এবার সেই রীতিতে কিছুটা হলেও ভিন্নতা এসেছে। আয়োজন থাকলেও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়, হইহুল্লোড়ের চেয়েও তাতে প্রাধান্য পাচ্ছে খালেদার কারামুক্তির ইস্যু। নেতারা কর্মীদের কাছে ডেকে খালেদার কারামুক্তির আন্দোলন জোরালো করার তাগিদ দিচ্ছেন। দিকনির্দেশনাও দিচ্ছেন।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে প্রতিষ্ঠা পাবার পর থেকে বর্ষীয়ান বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের মেজবান নেতাকর্মীদের কাছে ছিল খুবই আগ্রহের আয়োজন। এইদিনে নেতাকে নিজের মতো করে কাছে পান বিএনপির কর্মীরা। একেবারে তৃণমূলের কর্মী থেকে পদ-পদবিধারী নেতা সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যান এদিনে। শুধু বিএনপির নেতাকর্মী নন, চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনদেরও দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যান নোমান। এমনকি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী লোকজনেরও ভিড় থাকে নোমানের আয়োজনে।

কিন্তু নোমান এবার মেজবানের আয়োজন করেননি। ঘরোয়া পরিবেশেই শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। মেজবানের বদলে তিনি খালেদার জন্য দোয়া মাহফিল ও এতিমদের জন্য খাবার বিতরণ করছেন।

বিজ্ঞাপন

আবদুল্লাহ আল নোমান সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের নেত্রী জেলে। নেতাকর্মীদের মন ভালো নেই। এই অবস্থায় মেজবানের আয়োজন করতে মন সায় দেয়নি। তারপরও নেতাকর্মীরা বাসায় আসছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলছি। নেত্রীকে মুক্ত করতে হলে রাজপথের বিকল্প নেই, সেটা তাদের বলছি।

নোমানের একান্ত সচিব নুরুল আজিম হিরু সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্যারের নির্দেশ এবার আমরা কাজির দেউড়ির ভিআইপি টাওয়ার মসজিদে নেত্রীর মুক্তির জন্য খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছি। এতিমদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আর যেসব নেতাকর্মী বাসায় এসেছেন তাদের সাধ্যমতো আপ্যায়ন করা হয়েছে। তবে বড় পরিসরে কিছু করতে স্যার মানা করেছেন।’

বিজ্ঞাপন

ঈদুল ফিতরের পরদিন প্রতিবছর নেতাকর্মী, সমর্থকদের ভিড় লেগে যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নগরীর মেহেদিবাগের বাসায়। নগরীর কাট্টলীতে পিতৃভূমিতে ঈদের দিনটি কাটিয়ে পরদিন মেহেদিবাগের বাসায় আসেন খসরু। এবারও এসেছেন। নেতার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে প্রতিবছরের মতো এবারও লোকে লোকারণ্য খসরুর মেহেদিবাগের বাসা। সেই বাসার সামনের সুবিশাল আঙিনা পেরিয়ে দুপুরে লোক সমাগম দেখা গেছে সামনের সড়কেও। পরোটা-গোশত দিয়ে আপ্যায়ন করা হচ্ছে লোকজনকে।

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা আমার দীর্ঘদিনের পারিবারিক ট্র্যাডিশন। কাউকে বলতে হয় না। সবাই ঈদের পরদিন বাসায় চলে আসেন। এবার নেতাকর্মীদের আসাটা আমার কাছে বেশি গুরুত্ববহ। কারণ আমাদের নেত্রী জেলে। সরকার বিএনপি নেত্রীকে জেলে রেখে একটা নির্বাচন করে ফেলতে চাইছে।’

‘যদিও আমাদের নেতাকর্মীরা কখনোই সেই নির্বাচন হতে দেবে না, তবুও তাদের সংগঠিত করে দিকনির্দেশনা দেওয়ার একটা সুযোগ পেয়েছি। নেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। আরেকটি পাঁচ জানুয়ারি মার্কা নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না। এসব বিষয়ে কর্মীদের মনোভাবও জানতে পারছি।’ বলেন খসরু

খসরুর একান্ত সচিব মোহাম্মদ সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার এত বেশি লোক হয়েছে, আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। হাজার হাজার মানুষ শুধু আসছেন। প্রতিবারের মতো এবারও আমরা পরোটা, মেজবানির গোশতের ব্যবস্থা করেছি।’

বিজ্ঞাপন

খসরুর বাসা থেকে বের হওয়া সময় নগর বিএনপির সহ-সভাপতি জেসমিনা খানম সারাবাংলাকে বলেন, ‘নেতার কথা একটাই। নেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। নেত্রীকে ছাড়া নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না। আমরা নেতাকে কথা দিয়েছি, নেত্রীর মুক্তির জন্য রাজপথে থাকব।’

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন মেজবানের আয়োজন করেছেন নগরীর রীমা কনভেনশন সেন্টারে। প্রতিবছর তিনিও মেজবানের আয়োজন করে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এবার শাহাদাত শুভেচ্ছা বিনিময়ের বদলে বেগম খালেদা জিয়ার কারা ও রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল এবং মেজবানের আয়োজন করেছেন।

শাহাদাৎ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের নেত্রী, আমাদের মা, গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি হয়ে আছেন। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। বেদনা নিয়েই আমরা ঈদের নানা অনুষ্ঠান পালন করছি। একইসঙ্গে আমরা শপথ নিচ্ছি, দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের নেত্রী গণতন্ত্রের মাকে কারামুক্ত করব।’

নগরীর বাটালি রোডে নিজ বাসায় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের আয়োজন করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর।

বক্কর সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের সময় মেজবান, খাওয়া-দাওয়া, জনসমাগমের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় এটা অন্তত চট্টগ্রামে আমাদের দলের একটা রীতি। কিন্তু এবার আমরা আগের মতো আনন্দ নিয়ে ঈদ করতে পারিনি। কারণ আমাদের নেত্রী যতদিন মুক্ত হতে পারবেন না, ততদিন আমরা শান্তি পাচ্ছি না। সেজন্য আমাদের ঈদ আয়োজন আমাদের নেত্রীর মুক্তিকে কেন্দ্র করেই। এর বাইরে কিছু আমরা ভাবতে পারছি না।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম মামুন মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও আমাদের নেত্রী জেলে ছিলেন। তখনও আমরা ঈদ করেছি। কিন্তু এবার নেত্রী জেলে যাবার পর বর্তমান সরকার আমাদের নেত্রীর উপর যে ধরনের মানসিক অত্যাচার করছে এটা অকল্পনীয়। অত্যন্ত বেদনাহত মন নিয়ে আমরা ঈদ করছি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতে শুধু একটি বিষয়ই প্রাধান্য পাচ্ছে, কত দ্রুত নেত্রীকে মুক্ত করা যাবে। এজন্য জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়টিই আমাদের কাছে এখন মুখ্য বিষয়।’

সারাবাংলা/আরডি/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন