বিজ্ঞাপন

চার সপ্তাহেও খোঁজ মেলেনি সিটি হার্ট থেকে তুলে নেওয়া ব্যবসায়ীর

July 23, 2018 | 12:13 pm

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রাজধানীর নয়া পল্টন সিটি হার্ট সেন্টার থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মোবাইল অ্যাকসেসরিজ ব্যবসায়ী আনিসুর রহমানকে (৩২)। এরপর ২৬ দিন পেরিয়ে গেলেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার সন্ধানে পরিবারের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দফতরগুলোতে ধরনা দিলেও সেখান থেকেও মিলছে না কোনো খবর। প্রায় চার সপ্তাহ ধরে পরিবারের অন্যতম কর্ণধার এই সদস্যকে হারিয়ে সবাই দিশেহারা।

আনিসের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে চোখে কালো গ্লাস পরিহিত তিন ব্যক্তি আনিসকে ধরে মার্কেটের দুই তলা থেকে নামিয়ে নেয়। এরপর একটি নোহা মাইক্রোবাসে করে তাকে তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরদিন ২৭ জুন পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন আনিসের ছোট ভাই ইকবাল হোসেন। তবে আনিসের কোনো সন্ধান বের করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

শনিবার (২১ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে কথা হয় ইকবাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলা’কে বলেন, ভাই (আনিসুর রহমান) পাঁচ বছর ধরে গুলিস্তান সুন্দরবন মার্কেটে মোবাইল অ্যাকসেসরিজের দোকান করে আসছিল। ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় দোকান বন্ধ করে গুলিস্তান থেকে মাল কিনে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করত।

বিজ্ঞাপন

ইকবাল জানান, সিটি হার্ট মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় একটা কাপড়ের দোকানের মালিক ভাইয়ের পরিচিত। সেখানে যাওয়া-আসা ছিল ভাইয়ের। ২৬ জুন রাতে ওই দোকান থেকেই ভাইকে তুলে নিয়ে যায়। রাতে ভাই বাসায় না ফিরলে পরদিন ওই দোকানে গিয়ে এসব কথা জানতে পারি। কালো গ্লাসের একটি নোহা গাড়িতে করে আনিসকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আনিসুরকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পাওয়া দৃশ্য

ফকিরাপুলের যে বাসায় আনিস থাকতেন, সেখানে গিয়ে ইকবাল জানতে পারেন, ওই রাতেই ১১টার দিকে কয়েকজন লোক এসে বাসায় থাকা ল্যাপটপসহ বেশকিছু ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি নিয়ে গেছে। তবে কে বা কারা আনিসকে তুলে নিয়ে গেছে তা ধারণা করতে পারছেন না পরিবারের কেউ।

ইকবাল বলছেন, তার ভাইয়ের কোনো ধরনের নেশা করতেন না। তার কোনো শত্রু আছেও বলেও তাদের জানা নেই। নেই রাজনৈতিক কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। আবার নিখোঁজ হওয়ার পর কোনো মুক্তিপণও কেউ দাবি করেনি। ফলে ভাইয়ের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে তারা অথৈ সাগরে পড়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনায় পরদিন ২৭ জুন ডিজি করার পর পল্টন থানা থেকে শুরু ডিসি মিডিয়া ও ডিসি মতিঝিলের অফিসে ইকবাল ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভাইয়ের খোঁজে। খোঁজ করেছেন র‌্যাব-৩-এর অফিসেও। কিন্তু কোথাও ভাইয়ের খোঁজ পাননি। এতে আনিসের স্ত্রী আর দুই সন্তানের সঙ্গী হয়েছে কান্না। বৃদ্ধ বাবা-মাও সন্তানের সন্ধান না পেয়ে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আনিসুর রহমান চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার মোহনপুর মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করে ঢাকা বাংলা কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিল। তবে আর পড়ালেখা করেননি তিনি। তারা চার ভাই, এর মধ্যে বড় দুই ভাই মধ্যপ্রাচ্যে থাকেন। আনিস ও ইকবাল থাকেন ঢাকায়। বাবা সিদ্দিকুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। অবসরের পর হজ করে এসে বাসায় আছেন। মা গৃহিণী। বাবা-মায়ের সঙ্গে আনিসের স্ত্রী হাওয়া বেগম ও দুই সন্তান আব্দুল্লাহ (৭) আর আরাফাত সানি (৬ মাস) কচুয়াতেই থাকেন।

এদিকে, সিটি হার্ট সেন্টার থেকে আনিসকে তুলে নেওয়ার সময়ের দৃশ্য ধরা পড়ে সিসিটিভি ক্যামেরায়। ওই ফুটেজ পল্টন থানা পুলিশ সংগ্রহ করেছে বলে জানান ইকবাল। ওই ফুটেজের একটি প্রিন্ট এসেছে সারাবাংলা’র হাতেও। তাতে দেখা যায়, কালো সানগ্লাস ও টিশার্ট পরা তিন ব্যক্তি লাল পাঞ্জাবি পরিহিত আনিসকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন।

ইকবাল বলেন, ভাই কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত না বলেই আমাদের বিশ্বাস। তারপরও যদি সে কোনো অপরাধ করে থাকে, তাহলে আইন অনুযায়ী শাস্তি হোক। কিন্তু তার সন্ধানটা আমরা চাই।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হক সারাবাংলা’কে বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজ আমরা পেয়েছি। ফুটেজ দেখে এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে আনিসকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’

এদিকে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি, পূর্ব) উপকমিশনার খোন্দকার নুরুন্নবী চৌধুরী জানিয়েছেন, পল্টন এলাকা থেকে আনিস নামে কাউকে আটক বা গ্রেফতার করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন