বিজ্ঞাপন

চিঠিতে ১৩ ভুল শনাক্ত বিএনপির

April 24, 2018 | 12:05 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সোশ্যাল মিডিয়ায় সোমবার (২৩ এপ্রিল) থেকেই একটি চিঠি ঘুরপাক খাচ্ছে। অনেক মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও এসেছে চিঠিটির ছবি ও খবর। সেটি প্রথম প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি।

যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বহাল থাকা না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি জানান, তার কাছে প্রমাণ রয়েছে যে, তারেক রহমান তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব সারেন্ডার করে সবুজ পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের হোম অফিসে।

আর হোম অফিস থেকে সে পাসপোর্টের কপি এরইমধ্যে লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাঠানোর সময় হোম অফিস থেকে একটি কাভার লেটার পাঠানো হয়। যাতে স্বাক্ষর করেন পাসপোর্ট ব্যাংক ম্যানেজার।

বিজ্ঞাপন

২০১৪ সালের ২ জুন তারিখে পাঠানো চিঠিটির কপি ও পাসপোর্টের প্রথম পাতাগুলো পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুক পাতায় দেওয়ার পর সেটি ভাইরাল হয়।

তখনই প্রশ্ন ওঠে একটি বিষয় নিয়ে। হোম অফিস বাংলাদেশ হাই কমিশনে পাঠানো চিঠিতে হাই কমিশন না লিখে এম্বাসি লিখেছে। এমনটা হবার কথা নয়।

ওই চিঠিটির ওপর লাল কালিতে মার্ক  করে বলা হয়, এই চিঠিতে ১৩টি ভুল রয়েছে। ভুল ধরতে ‘কমা’ ও বোল্ডলেটার প্রসঙ্গও বাদ দেওয়া হয়নি।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির পক্ষ থেকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরতে মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১ টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে চিঠিটি তার ফেসবুক এবং গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন, সেটি অন্তত ১৩টি ভুল পাওয়া গেছে, যা ব্রিটিশ গভর্মেন্টের পক্ষে এ ধরনের ভুল করা খুব অস্বাভাবিক। যেমন, প্রথমেই লিখেছেন ডিপার্টমেন্টের নাম, ‘Immigration and Enforcement’ কিন্তু এটির আসল নাম হচ্ছে ‘Immigration Compliance and Enforcement’.

`58 যে ঠিকানা দিয়েছে— এখানে কমা  নেই, `Hounslow Middlesex’ যে ঠিকানাটা দিয়েছে, সেখানে ফুলস্টফ নেই। এর পরে `Bangladesh Embassy’ সুডনট বাংলাদেশ এম্বাসি। এখানে হাইকমিশন হবার কথা। কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রকে সব সময় হাই কমিশন বলা হয়’— বলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘Queens Gate’ বানান ভুল লিখেছে। আননেসেসারি বোল্ডেড ওয়ার্ডিং করেছে। এটা টেলিফোন এবং ফ্যাক্স নম্বরের ক্ষেত্রে আনকমন। ব্রিটিশ চিঠিগুলোতে ফ্যাক্স-টেলিফন নম্বর থাকে না। নেক্সট পয়েন্ট, `Dear Sirs’—  এটা অবশ্যই হবে Dear Sir. ওপরে বলেছে ৪টা পাসপোর্টের কথা— তারেক রহমান, জায়মা জামান রহমান, জুবাইদা রহমান এবং মাইনুল ইসলামের কথা।’

বিজ্ঞাপন

‘কিন্তু শেষে গিয়ে লিখছে `Please find enclosed a passport for your retention’ পাসপোর্ট-এ এস নেই। `Faithfully’-এর ‘F’ টা বড় হাতের। যেটা ব্রিটিশরা কোনো অবস্থাতেই লিখবে না এবং যিনি সই করেছেন তার কোনো নাম নেই। সুতরাং এই চিঠি নিয়ে যথেষ্ঠ রহস্য রয়েছে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘ভুলে ভরা এই চিঠি পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ফেসবুকে আছে। আমাদের আইন বিষয়ক সম্পাদক কাইসার কামাল চিঠি সম্পর্কে ডিটেলস জানতে চেয়েছেন। তিনি জবাব দিলেই আমরা আপনাদেরকে আবার জানাব।

কায়সার কামাল বলেন, ‘ব্রিটিশ আইনে একটা ধারা আছে। সেই ধারা অনুযায়ী পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ কোনো ডকুমেন্ট থার্ড পার্টির কাছে কোনো অবস্থাতেই যাবে না— কেবলমাত্র হোল্ডার ছাড়া। এখন আমাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে দাবি করছেন পাসপোর্ট হাইকমিশনে দেওয়া হয়েছে। আমাদের মহাসচিব ইতোমধ্যেই বলেছেন, এটা রহস্যজনক। আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট যে, ব্রিটিশ আইন অনুসারে এই পাসপোর্টটা বাংলাদেশ হাইকমিশনে যাওয়ার কথা না।’

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা এরইমধ্যে এই চিঠি এবং পাসপোর্টের ব্যাপারে  ব্রিটিশ হোম অফিসে জানতে চেয়েছি। দেখি সেখান থেকে কী উত্তর আসে।’

তিনি বলেন ‘তারেক রহমান বিশ্বের অসংখ্য বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সরকার বিরোধী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ’র মতোই সাময়িকভাবে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন এবং তা পেয়েছেন। এই প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ হিসেব তিনি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রবিভাগে তার পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার পাসপোর্ট জমা নিয়ে তাকে ট্রাভেল পারমিট দেওয়া হয়েছে।’

‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তার কোনো কাজে লাগছে না। যখনই তিনি দেশে ফেরার মতো সুস্থ হবেন তখনই তিনি দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতো পাসপোর্ট ফেরত পাবেন’— জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘মূলত, খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার জন্য আমরা যে আন্দোলন করছি,  সেটি থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতেই এই ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে। দেশের মানুষ ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, তাদের কষ্টার্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে লন্ডন সফরকারী বিশাল বহরের একমাত্র অর্জন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সংগ্রহ করা তারেক রহমানের পাসপোর্টের ৩টি পাতা এবং অসংখ্য ভুলে ভরা এক লাইনের রহস্যজনক একটি চিঠির ফটোকপি।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ ভুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন