বিজ্ঞাপন

জইতুনের ছায়ায়

May 27, 2018 | 1:39 pm

উগান্ডাতে আসার পরে সব থেকে আনন্দের বিষয় ছিলো অনেক পুরনো সহকর্মী ওমর আর স্যামুয়েলের সাথে দেখা হওয়া। আমরা তিনজন একই সংস্থার হয়ে প্রায় এক যুগের কাছাকাছি কাজ করেছি। ওমর এখনো পুরনো সংস্থায়ই কাজ করছে আর স্যামুয়েল আরেকটি নুতন সংস্থায় যোগ দিয়েছে। কাকতালীয়ভাবে আমরা তিনজন চাকরিসূত্রে একই শহরে থাকছি এখন। উগান্ডাতে একটা সার্ক গ্রুপও আছে। ওমর, স্যামুয়েল আর নেপালি বন্ধু রাজ শ্রেষ্ঠা মিলে আমাদের একটা ক্লোজ গ্রুপ, সেখানে যুক্ত হয়েছে নাটালিয়া।

বিজ্ঞাপন

নাটালিয়াও একটা আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করে। নাটালিয়ার সাথে পরিচয় নাটকীয়তার মধ্যেদিয়ে। গিয়েছিলাম কাম্পালা থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে সাউথ সুদানের বর্ডার ঘেঁষা শহর আরুয়াতে। রিফিউজি সেটলমেন্ট থেকে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে, টিপটিপে বৃষ্টি, হাইওয়েতে একটি বিকল মোটরসাইকেলের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে স্কার্ফ নাড়িয়ে হেল্প চাইছে এক শ্বেতকায় তরুনী। আফ্রিকাতে থাম্ব রুল হলো হাইওয়েতে কোনভাবেই গাড়ি থামানো যাবে না, বিশেষ করে কেউ লিফট চাইলে সেটা আরো আতংকের। নাটালিয়াকে পার করে চলে এসে আমার মনে হলো, দেখা উচিত ব্যাপারটা। গাড়িতে ড্রাইভারসহ আমরা তিনজন, আর মেয়েটি একা, কিই বা করতে পারবে। ড্রাইভারের অনিচ্ছা সত্ত্বেও পেছনে ফিরলাম। গাড়িতে উঠে মেয়েটি বলল, “আমি মনে মনে ঠিক জানতাম এই এশিয়ান মেয়েটা আমাকে বিপদে রেখে চলে যেতে পারবে না।!”

সেই পরিচয় খুব দ্রুতই বন্ধুত্বে রূপ নিয়েছে। নাটালিয়া আমাদের ছোট গ্রুপের একজন মেম্বার হয়ে গিয়েছে। এই গ্রুপে রাজ হিন্দু, ওমর মুসলিম, স্যামুয়েল ক্যাথলিক ক্রিস্টান, নাটালিয়া ইহুদি। কারোর ধর্ম বিশ্বাস আমার কাছে কখনোই প্রাধান্য পায় না। কিন্তু এই বন্ধুদের ধর্মের ব্যাপারে উল্লেখ করার পিছনে কারণ হলো তাদের তিনজন ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলের নাগরিক। ওমর অধিকৃত ফিলিস্তিনের গাজার অধিবাসী, স্যামুয়েল নিজে ইউরোপের একটি দেশের নাগরিকত্ব ধারন করলেও তার মা বাবা এবং পরিবার ফিলিস্তিনে থাকে। নাটালিয়ার পরিবারের এক অংশ থাকে তেল আবিবে আর তার দাদা দাদী থাকেন জেরুজালেমে। এখানে ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে সংগত কারনেই।

ভূমধ্যসাগরীয় আলো হাওয়ায় জইতুন গাছের ছায়ায় বেড়ে ওঠা আমার এই তিন বন্ধুর কাছ থেকেই ফিলিস্তিন, গাজা, পশ্চিম তীর, তেল আবিব আর জেরুজালেমের কত যে গল্প শুনেছি। হাসি, আনন্দ, যুদ্ধ, বেদনা, স্বাধীনতার তীব্র আকাংখা, পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস সবই সেই গল্পে উঠে আসে। ভাত ডাল বেগুনভর্তা দিয়ে বাংলা নতুন বছরের আনন্দ যেমন আমার ডেরায়, ঠিক তেমনি মধুতে ডুবিয়ে আপেল আর ঘরে বানানো পাউরুটি জইতুন (জলপাই) তেলে ভিজিয়ে আমরা ইহুদিদের নববর্ষ উদযাপন করলাম নাটালিয়ার সাথে,  আবার শবই বরাতের রাতে ওমর আমাদের জন্য ফিলিস্তিনি খুসখুস রান্না করলো গাজা থেকে নিয়ে আসা জইতুন তেল আর জলপাই দিয়ে, খাওয়ার পরেও বক্স বোঝাই করে সেই খাবার আমি আর নাটালিয়া বাড়ি নিয়ে আসি। ক্রিসমাসের সময় সবাই ছুটিতে যাবে বলে স্যাম এডভান্সড ক্রিসমাস পার্টি আয়োজন করে। নেপালী বন্ধুর দশাইনের পানাহারও বাদ যায় না।

বিজ্ঞাপন

গত সপ্তাহের শুরুতে যখন ইসরায়েলের আমেরিকান দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষোভ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে ফিলিস্তিনিরা, তখন প্রথমেই আমার ওমর আর নাটালিয়ার কথা মনে পড়লো। এই প্রতিবাদ দমন করার জন্য মার্কিন মদদপুস্ট ইসরায়েলি সৈন্যদের গুলিতে প্রতিবাদরত প্রায় ষাট জন ফিলিস্তিনি সাধারন জনগন প্রাণ হারায়। ইসরায়েলি স্নাইপারের লক্ষ্য থেকে নারী শিশুরাও বাদ যায় নাই। টিভিতে টিয়ার গ্যাসের বিষাক্ততায় শিশু লায়লার মৃতদেহ বা ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীর দিকে পাথরের গুলতি ছুঁড়তে থাকা পঙ্গু আবু সালেহর ছবি দেখে বেদনাকাতর হয় নাই এমন মানবহৃদয় বোধহয় পাওয়া যাবে না। ফিলিস্তিনের রাজনীতি বা উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার মতন জ্ঞান আমার নাই। বরং সবাই জানে গত সত্তর বছর ধরে কি হচ্ছে ফিলিস্তিনে এবং কারা দায়ী।

ওমর আর স্যামুয়েলকে ফোন করে জানলাম তাদের পরিবারের সবাই সেইফ আছে আছে কিনা। স্যামুয়েল জানালো সবাই ঠিক আছে। ওমর ভারী গলায় বলল, “অখুত (আপা), আমার ভাতিজা মারাত্মক আহত অবস্থায় হাসপাতালে আছে!”

ফিলিস্তিনিদের উপরে ইসরায়েলি হামলার পরে নাটালিয়ার সাথে ফোনে কথা হয়েছিলো, জানিয়েছিলো যা হচ্ছে তা মানবতার লংঘন এবং সে এটা নিয়ে মর্মাহত, আমেরিকাপ্রবাসী তার ভাই ইসরায়েলবিরোধী নিন্দা মিছিলে যোগ দিয়েছে। নাটালিয়ার বেদনাহত ফেসবুক স্ট্যাটাসও দেখেছি।

বিজ্ঞাপন

আমরা প্ল্যান করে রেখেছিলাম রোজার প্রথম উইকএন্ডে ক’জন কাছের বন্ধু একসাথে ইফতার করবো। ওমরকে ইফতারের কথাটা মনে করিয়ে দিতে বাধল কোথায় যেন। রবিবার বিকেলে আগে থেকেই ঠিক করে রাখা আমাদের পছন্দের সোমালীয় রেস্টুরেন্টে হাজির হয়ে দেখি স্যামুয়েল আর রাজসহ আরো তিনজন বন্ধু উপস্থিত। আমার ঠিক পেছন পেছন ঢুকল নাটালিয়া। ইফতারের সময় প্রায় হয়ে এসেছে, এখনো ওমরের দেখা নাই, আমরা কেউ মুখে কিছু না বললেও বুঝতে পারছিলাম ওমর হয়তো আসবে না। নাটালিয়াও খুবই চুপচাপ আজকে, অন্য সময়ে তার গলা সবার উপরে শোনা যায়। আজান শুরু হয়েছে, আমাদেরকে শরবত আর খেজুর দেয়া হয়েছে, আমার পাশে কারো বসার আভাসে তাকিয়ে দেখি ওমর। আমি চোখ তুলে তাকাতেই স্যামুয়েলের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো। দুজনেই বুঝলাম আজ আড্ডা তেমন জমবে না। ওমর নাটালিয়াকে প্রায় অগ্রাহ্য করে অন্যদের সাথে টুকটাক কথা বলছিল। এভাবেই আমাদের ইফতার শেষ হলো। আমি উঠে গেলাম কাউন্টারে বিল চুকাতে, আমার পাশে ওমর এলো।

ওমর, অল ওকে?

ইয়েস আপা, অল ওকে!

দেন হোয়াই আর ইউ সো কোয়ায়েট? ইওর নেফিউ ইজ আউট অফ ডেঞ্জার, রাইট? ইয়েস, বাট দি উন্ড অফ আওয়ার হার্ট ইজ দেয়ার, ইট ব্লিডস মোর ইভেন হোয়েন উই মিট আওয়ার এনিমি!

বিজ্ঞাপন

আমি ধমকে বলাম, চুপ করো ওমর, নাটালিয়া মোটেই তোমার শত্রু নয়। কোন দেশের সরকারের সিদ্ধান্তে সেই সব দেশের সাধারন নাগরিকের কোন ভূমিকা থাকে? তুমিই বলো! আর তুমিতো জানতেই নাটালিয়া আসবে!

ওমর ঘাড় ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকায়, বিড়বিড় করে কি জানি বলে, ভুলও হতে পারে, আমি যেন শুনলাম, খুনি ইবলিসের দল!

ভিক্টোরিয়া লেকের উপরে প্রায় ঝুলে থাকা একটা কফি শপে আমাদের ঘন ঘন যাতায়াত। আজ আর কেউ যাবে বলে মনে হলো না, কিন্তু স্যাম বলল যাওয়া যায়, নাটালিয়া ঘাড় নাড়লো যাবে সে, রাজ শ্রেষ্ঠা প্রথমে না করলেও রাজি হলো যেতে, অন্যরা যাবে না। ওমরের দিকে তাকালে সে বললো তার তারাবীহ’র সালাহ আছে! ওদেরকে বাই বলে হাঁটা দূরত্বের কফিশপে রওনা হলাম। পায়ের শব্দে পেছন ফিরে দেখি ওমর আসছে। আবার আমার আর স্যামুয়েলের চোখাচোখি। বুঝতে পারছি ওমরের মনের মধ্যে কি ঝড় চলছে, এদিকে নাটালিয়াও নিজের ফর্মে নাই, অপরাধী ভাব না হলেও কেমন যেন একটু লুকিয়ে থাকার মতন। ভাবছিলাম ইফতারের এই জমায়েত বাদ দিলেই হতো। কিন্তু এটাও ঠিক, জীবন থেমে থাকে না, গাজাতেও জীবন থেমে নাই।

রোস্টেড বীনের সুবাসিত এরাবিকা কফিতে চুমুক দেই চুপচাপ। তেমন কোন কথা হয় না আমাদের মধ্যে, লেক থেকে ঠাণ্ডা হাওয়া আমাদেরকে একটু কুঁকড়ে দেয়, আকাশে চিকন একফালি চাঁদ।

অনেকক্ষণ বসে থাকার পরে হঠাৎ নাটালিয়া বলে ওঠে, তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?

ওমরের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে। আমরা তিনজন একটু শংকিত হয়ে উঠি।  ওমর ঝট করে তাকিয়ে বলে, নাহ, তোমার সাথে কি কথা! তোমরা কি কথা বলবার যোগ্য? তুমি মনে করো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেই সব মাফ হয়ে যায়?

আমি বলবার চেষ্টা করি, আহ ওমর থামো তো ভাই। নিজেদের মধ্যে এসব করলে কিভাবে হবে?

রাজ উঠে গিয়ে ওমরের পাশে দাঁড়ায়।

স্যামুয়েল বলে, আচ্ছা, ব্যাপারটাকে এত ব্যক্তিগত পর্যায়ে না নিলেই তো হয়।

ওমর যেনো ফুঁসে ওঠা ভলকানো, প্রায় ধমকে বলে স্যামুয়েলকে, তুমি চুপ করো স্যাম। পুরো ব্যাপারটাই যে কোন ফিলিস্তিনির জন্য ব্যাক্তিগত! আর তুমি কী বলছো? তোমরা তো প্রথম থেকেই উস্কাচ্ছো, এখন আমেরিকানদের সাথে তাল মিলিয়ে খুনিদের মদদ দিচ্ছো ফিলিস্তিনি হত্যার চক্রান্তে। তোমাদেরই সরাসরি সমর্থনে এইসব হচ্ছে! তোমাদের বিশপরাই তো বলছে যে, জেরুজালেম ঈশ্বরের প্রিয় জায়গা আর এখানে ইহুদিদের দখল স্থায়ী করার সাথে সাথে খ্রিস্টানদেরও ভাগ দিতে হবে! কিন্তু জেনে রাখো ফিলিস্তিন স্বাধীন হবেই! যায়নবাদীদের কোন চক্রান্ত সফল হবে না!’

যদিও স্যাম ক্যাথলিক কিন্তু বলা বাহুল্য ওমরের কথার মধ্যে কিছু সত্যতা আছে কারণ ইভাঞ্জেলিকান খ্রিস্টানরা ইসরায়েলি হামলায় সমর্থন দিচ্ছে । স্যাম চুপ হয়ে গেলো। রাজ ওমরের কাঁধে হাত রেখে বলে, শান্ত হও বন্ধু!

নাটালিয়া উত্তেজিত হয়ে তার দুই হাত ওমরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, তাহলে তুমি বলতে চাচ্ছো আমি খুনি, আমার হাতে ফিলিস্তিনি রক্ত?

বলতে বলতে শব্দ করে কেঁদে উঠে নাটালিয়া। আমি হতভম্বের মতন হয়ে আছি। নাটালিয়া বলতে থাকে, সবাই আমার ইসরায়েলি পরিচয় নিয়ে ঠাট্টা করে, উগান্ডান কলিগরা যারা জানেও না ইসরায়েল ফিলিস্তিনের ইতিহাস, আমাকে বলে, কিভাবে তোমরা শিশুদের খুন করছো? তোমাদের স্নাইপাররা এমনকি পঙ্গু মানুষকেও বাদ দিচ্ছে না। যেন আমিই সৈন্যদের কে গুলি করবার জন্য বলেছি, যেন আমিই শিশুদেরকে মেরেছি! আমার মা বলেছে ইসরায়েলি পরিচয় না দিয়ে আমার অন্য পরিচয় দিতে! কিন্তু কেন? সরকারের দায়ে আমাকে কেন দায়ী করা হবে! আমিতো এই আক্রমন সমর্থনও করি না!

আমি হুঁশ ফিরে পেয়ে নাটালিয়াকে জড়িয়ে ধরে থামাবার চেষ্টা করি। একটু শান্ত হয়ে চলে আসবার জন্য রেডি হই। বাই বলবার জন্য ওমরকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিতে গেলে সে আমাকে ঠেলে দেয়, নাহ, অখুত (আপা), তুমি আর কখনো আমাকে ওর (নাটালিয়ার) সাথে একসাথে ডাকবে না! খুনি দুশমনের সাথে আমি বসি না!

আমি খানিক রেগে গিয়ে বলি, ওমর যথেষ্ট হয়েছে থামো তো এবার! বোকার মতন কথা বলো না।

পিছন থেকে দৌড়ে এসে নাটালিয়া আমাকে প্রায় ধাক্কা মেরে বলে ওঠে, আমিও ওর (ওমরের) সাথে আর কখনো একসাথে বসবো না।

তর্জনী তুলে শাসায় আমাকে, তুমি আর কোনদিন আমাকে এর মধ্যে ডাকবে না!

রাস্তার লোকজন আমাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে! রাজ ওমরকে সরিয়ে নিতে চায়। রাস্তার উপরে শব্দ করে থুথু ফেলে ওমর যেন ইসরায়েলিদের উপরেই ঢালল তার সমস্ত ঘৃণা। নাটালি আবার কেঁদে ওঠে, আমার পাশেই ওমরের ফোঁস ফোঁসানি শোনা যায়, রাজ ওকে থামাতে পারছে না…বিশালদেহী স্যাম এসে আমাদের সবাইকে একসাথে জড়িয়ে ধরবার চেষ্টা করে।

এত সব নাটকীয়তার মধ্যেও আমি সবার হৃদয়ের ধুকপুক শুনতে পাচ্ছি, কি আশ্চর্য! ফিলিস্তিনি মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি, নেপালি হিন্দু আর বাংলাদেশের মানুষের হৃদপিণ্ড একইরকম ভাবে বিট করে চলেছে…একই ছন্দ…লাব ডাব…লাব ডাব…! সেখানে থেকে কোন রাজনীতি, ধর্মনীতি বা ভূরাজনৈতিক কোন দ্বন্দ্বের আওয়াজ আসে না, কেবলি শোনা যায়…দেয়ার ইজ এ জুয়েল ইন দ্য হার্ট অফ এ লোটাস…ওম মনি পদ্মে হুম…মানব হৃদয়ের গভীরে আছে সেই লুকানো রত্ন…লাব ডাব!

 

 

সারাবাংলা/এসএস

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন