বিজ্ঞাপন

জনস্রোত বিদায় জানাল আইয়ুব বাচ্চুকে

October 19, 2018 | 3:36 pm

প্রতীক আকবর ।।

বিজ্ঞাপন

এই শেষ সুযোগ, শেষবার দেখা যাবে আইয়ুব বাচ্চুকে। শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তাই ভক্ত ও সাধারণের লাইন ছাড়িয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফটক।

সবাই শেষবার দেখতে চান আইয়ুব বাচ্চুকে। দেশের ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তি তিনি। কণ্ঠে, সুরে, লেখায় ও গিটারে যিনি শ্রোতাদের মাত করে রেখেছেন দশকেরও বেশি সময়।

এই কিংবদন্তি অদেখালোকে পারি জমিয়েছেন গতকাল (১৮ অক্টোবর) সকালে সাড়ে ৯টায়। শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ রাখা হয় শহীদ মিনারে। তাকে শ্রদ্ধা জানাতে কে আসেননি! সব শ্রেণী-পেশার মানুষ এসেছেন ব্যান্ড লেজেন্ডকে শেষবার শ্রদ্ধা জানাতে।

বিজ্ঞাপন

আইয়ুব বাচ্চু শুধু একজন ব্যান্ড তারকা বা কিংবদন্তি নন। আইয়ুব বাচ্চু এক অনুপ্রেরণার নাম। নব্বই দশক থেকে এখন পর্যন্ত সংগীতে আসা বা আসতে চাওয়া অনেক তরুণের অনুপ্রেরণা আইয়ুব বাচ্চু। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসা বহু মানুষের মধ্যে তাই সিংহভাগই ছিলেন নবীন ব্যান্ড শিল্পীরা।

মৃত্যু অনিবার্য। তাই কেউ হয়তো প্রশ্ন করছেন না, কেন এমন হলো? কিন্তু মাত্র ৫৬ বছর বয়সে আইয়ুব বাচ্চুর চলে যাওয়াকে ক্ষতি বলে মনে করছেন অনেকে। বিশেষ করে নবীনদের জন্য।

বিজ্ঞাপন

সংগীত শিল্পী হাসান আবিদুর রহমান জুয়েল আইয়ুব বাচ্চুকে নতুন করে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চুর কম্পোজিশন, গান লেখা বা গিটার- এই তিনটি জায়গায় তাকে আলাদা করা যায় সহজেই। এসব ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্নভাবে অবদান রয়েছে এই লোকটার। আমি জীবনে খুব অল্প গান করেছি। তার মধ্যে বাচ্চু ভাইয়ের সুর-সঙ্গীত ও লেখা অনেকগুলো। তাকে আমার বাবার মতোই মনে হয়। তাকে হারিয়ে আমি যেন আমার বাবাকে হারালাম।’

ব্যান্ড করতে যারা আগ্রহী, তাদের কাছে আইয়ুব বাচ্চু বাবার মতোই ছিলেন। অরেক ব্যান্ড তারকা তুহিন জানালেন তাদের আশ্রয়স্থল ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। ‘শিল্পীরা কাজ করে যাপিত জীবনের মধ্যে থেকেই। আর সেই যাপিত জীবনের মধ্যে থেকে বাচ্চু ভাই আমাদের আশ্রয় দিয়ে এসেছেন বরাবরই। তার গানে শুধু যে অমরা আশ্রয় পেয়েছি তা নয়। আমরা তার গান শুনে সংগীতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি।’ বলেন তুহিন।

একই কথা জানালেন সংগীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী বেলাল খান। তিনি জানান, তাদের বয়সী বা তাদের চেয়ে একটু বড়, সবাই আসলে আইয়ুব বাচ্চু দ্বারা প্রভাবিত। বেলাল খান আরও বলেন, ‘আমার পরের আরও তিন চার প্রজন্মেও বাচ্চু ভাইয়ের প্রভাব থাকবে।’

তবে এসবের মধ্যে নতুন করে কিছু কথা বললেন সংগীতশিল্পী জয় শাহরিয়ার। তিনি বললেন, ‘বাচ্চু ভাইকে আমরা সুরকার, কণ্ঠশিল্পী বা গিটারিস্ট যা-ই বলি না কেন, তিনি একজন অসম্ভব ভালো গীতিকারও। তার লেখা গান নিয়ে নিশ্চয়ই পরে অনেক কথা হবে। অনেক ধরনের গবেষণা হবে।’

বিজ্ঞাপন

পরিচিত শিল্পী ও কলাকুশলিরা ছাড়াও আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন নাট্য পরিচালক ও অভিনয় জগতের মানুষরা।

ছোট পর্দার জনপ্রিয় পরিচালক ও অভিনেতা সালাহউদ্দিন লাভলু। পাশাপাশি বাড়িতেই থাকতেন আইয়ুব বাচ্চু ও লাভলু। যৌবনে বাচ্চুর গান শুনেই কেটেছে লাভলুর। যখন পরিচালনায় এলেন তখন কাজ করা হয়েছে একসঙ্গে। লাভলু জানালেন, আইয়ুব বাচ্চুর একটি মিউজিক ভিডিওতে ক্যামেরা ধরেছিলেন সালাহউদ্দিন লাভলু। পরে লাভলু যখন বিজ্ঞাপন বানান, তখন তার জন্য জিঙ্গেল করে দিয়েছিলেন আইয়ুব বাচ্চু।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘আমরা অন্য পেশার মানুষ হলেও তার শিল্পে মুগ্ধ ছিলাম আমরা।’

সময়ের আলোচিত নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল, নাটক পরিচালনায় আসার আগে মিউজিকের সঙ্গে ছিলেন তিনি। ‘মেঘদল’ নামে ব্যান্ড ছিল তাদের। তারাও অনুপ্রাণিত হতেন আইয়ুব বাচ্চুর সংগীতে, গানে। উজ্জ্বল বলেন, ‘বাচ্চু ভাইয়ের একটা মিউজিক ভিডিও দেখেছিলাম। যেখানে তিনি সাদা পোশাক পরে হাঁটু ভেঙে গিটার বাজাচ্ছিলেন। ওই দৃশ্যটা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল তার মতো হওয়ার জন্য।’

এভাবে লাখো মনে স্বপ্নের বীজ বুনে দিয়ে গেছেন আইয়ুব বাচ্চু। তিনি চলে গেছেন কিন্তু তার স্বপ্ন, দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন সংগীতের মাধ্যমে।

যাদের মাঝে সেই স্বপ্ন-অনুপ্রেরণা প্রবাহিত হচ্ছে তারাই আইয়ুব বাচ্চুকে শেষ বিদায় দিয়েছেন বাদ জুমা। জাতীয় ঈদগাহ মাঠে হয়েছে আইয়ুব বাচ্চু প্রথম নামাজে জানাজা। এরপর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মগবাজারে। সেখানে আইয়ুব বাচ্চুর স্টুডিও এবি কিচেনে তার মরদেহ রাখা হয় কিছুক্ষণের জন্য।

বাদ আসর আইয়ুব বাচ্চুর দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে চ্যানেল আইতে। তার মরদেহ রাখা হবে স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে। শনিবার (২০ অক্টোবর) মরদেহ নেওয়া হবে চট্টগ্রামে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হবে আইয়ুব বাচ্চুকে।

সারাবাংলা/পিএ 

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন