বিজ্ঞাপন

জামরুল ফুলের প্রেমে…

May 4, 2018 | 3:40 pm

জৈষ্ঠ্য মাস, মধুর মাস। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুর মতন সব রসালো ফলের আগমণী বার্তায়, চারিদিকের বাতাসে মধুর ঘ্রাণ ছড়ায়। জৈষ্ঠ্য আসবার আগ দিয়ে আরেকটি রসালো ফল বাংলাদেশে প্রচুর দেখা যায়। যদিও তার আগমণী বার্তা খুব একটা মধুর নয়। রসালো হলেও তেমন মিষ্টি নয় বলে সবার তেমন পছন্দের ফল নয় সে। আমি খুবই অজনপ্রিয় ফল আমরুল বা জামরুলের কথা বলছি। আমার চেনা কাউকে পাইনি এখনও যার কিনা জামরুলের কথা শুনলে জিভে জল আসে। আর সেখানে আমার ছাদবাগানে দুই দুইটা জামরুল গাছ। কারণ তো আছেই। সে কথাই জানাবো আজকে।

বিজ্ঞাপন

সে প্রায় ছয় সাত বছর আগের কথা। বেইলী রোডে তখন টিপুর অডিও স্টুডিও ছিল। সেখানে ঢোকার বড় গেটটার পাশে বিশাল এক ঝাঁকড়া পাতার গাছ ছিল। তখনও জানতাম না সেটা কিসের গাছ। চৈত্রের শেষে দেখতাম তার নীচের সবুজ ঘাস ঢেকে থাকতো সাদা সাদা ফুলের কেশর দিয়ে। গাছের মাথা অনেক উঁচুতে থাকার কারণে ফুলগুলো তেমন স্পষ্ট দেখতে পেতাম না। একদিন দুই তলার ছাদে উঠে, ফুলগুলো দেখতে গেলাম। ফুলগুলো দেখে এক নিমিষেই প্রেমে পড়ে গেলাম তাদের।

বিজ্ঞাপন

এরপর ধীরে ধীরে ফুলগুলো থেকে সাদা সাদা ফল হতে দেখলাম। পাখিদের আনাগোনায় অস্থির থাকতো গাছটি তখন। দেশী জামরুল হওয়ায় তেমন মিষ্টি না হলেও, খারাপ লাগতো না খেতে। সরাসরি গাছ থেকে যে কোন ফল পেড়ে খাওয়া অন্যরকম এক আনন্দের নাম। জামরুল ফুলের প্রেম আমাকে ছাদবাগানে তার জন্য একটা জায়গা করতে বাধ্য করেছিল এক সময়। প্রায় তিন বছর আগে ব্র্যাক নার্সারীতে জামরুল গাছ খুঁজতে গিয়ে থাই লাল জামরুল পেয়েছিলাম। সেখানকার মালী দেশী জামরুল গাছ অনেক বড় হয় বলে আমাকে ছাদের জন্য থাই লাল জামরুল গাছ নিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

বড় ড্রামে তিনভাগ জৈবসার আর একভাগ মাটিতে তার বাসস্থান করে দিয়েছিলাম। ছোটখাটো ঝাঁকড়া পাতায় ভরপুর ছিল সে। বছর খানেক যেতেই প্রায় চার ফুট লম্বা হয়ে গিয়েছিল। তবে প্রতি বছরই আমি যে কোন গাছের আঁধ হাত গোড়ার মাটি সরিয়ে সেখানে জৈবসার দিয়ে থাকি। জামরুলের জন্যও এই পদ্ধতি বিদ্যমান। হয়তো বা এই কারণেই ছাদবাগানের গাছগুলো নিয়মিত তাদের ফল বা ফুল দিয়ে থাকে আমাকে। গত বছর চৈত্রের শেষে নতুন পাতার সাথে আমার অপেক্ষার জামরুল ফুলের দেখা পেয়েছিলাম প্রথম। অপার্থিব সৌন্দর্য্যের অধিকারী এই জামরুল ফুল। ঝিরিঝিরি কেশর দিয়ে ভরে থাকা হালকা সবুজাভ সাদা ফুলগুলো গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত হয়। এবার অতিবৃষ্টি আর কালবোশেখী ঝড়ের কারণে আমার গাছের জামরুল ফুল তিনভাগের এক ভাগ আছে মাত্র।

বিজ্ঞাপন

ফুল থেকে কেশর ঝরে যাওয়ার পর ফলের দেখা পাওয়া যায়। বৈশাখ শেষ হবার আগেই পরিপূর্ণ ফলন শেষ হয়। ফল একেবারে শেষ হয়ে গেলে গাছের আগাগুলো ছেঁটে দেয়া ভালো, যদি আপনি ঝাকড়া গাছ পছন্দ করে থাকেন তাহলে। নতুন পাতায় শুঁয়োপোকার আক্রমণ হয় মাঝেমধ্যে। সে সময় একটু খেয়াল রাখতে হয় তাই। থাই জামরুল বছরে দুবার ফলন দেয়। আমার দুটো গাছের মধ্যে একটা একটু ছোট হওয়ায় এখনও ফলন দেয়নি। দ্বিতীয় গাছটির জামরুল টুকটুকে লাল রঙের হবার কথা। অপেক্ষায় আছি তাই। আপাতত সবুজ আর লালের মিশ্রণে অদ্ভুত রঙের জামরুল দেখেই আমি খুশী। তারও চেয়েও খুশী তাদের ফুলের জন্য।

থাই জামরুল দেশী জামরুলের মতন পানসে স্বাদের নয়। বেশ মিষ্টি হওয়ায় টিয়াদের আনাগোনা বেড়ে যায়, জামরুলগুলো বড় হবার সাথে সাথে। তাই হালকা নেট দিয়ে ঢেকে রাখলে টিয়াদের নজর থেকে বেঁচে থাকে জামরুল ফল। ছাদবাগানে রসালো ফলের সহজ চাষাবাদের জন্য জামরুল সবচেয়ে ভালো। মধু মাস আসবার আগে নিজের গাছ থেকে জামরুল খেতে খারাপ লাগবার কথা নয়। হয়ে যাক না আপনার ছাদবাগানে জামরুল চাষ, আমার মতনই। এক বছরের মাথায় নিজ হাতে জামরুল খেতে খেতে নগর চাষীর কথা মনে রাখবেন জানি। ফুলের সৌন্দর্য্যেও মুগ্ধ হবেন, ঠিক।
চাষী পরিবার, সুখী পরিবার।

ছবি – লেখক 

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন