বিজ্ঞাপন

জেন্ডার এজেন্ডা নারী-পুরুষ-ছেলে-মেয়ে সকলের: মিয়া সেপ্পো

December 13, 2018 | 8:32 am

।। এম এ কে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ‘জেন্ডার এজেন্ডা শুধু নারীদের এজেন্ডা নয়। জেন্ডার এজেন্ডা সকলের এজেন্ডা। নারী-পুরুষ-ছেলে-মেয়ে সকলের জন্যই জেন্ডার এজেন্ডা। বিষয়টা এমন হওয়া উচিত যে একজন নারীর অধিকার রক্ষায় পুরুষরা এগিয়ে আসবে। আবার পুরুষের অধিকার রক্ষায়ও নারীরা এগিয়ে আসবে। প্রকৃত অর্থে নারী-পুরুষ উভয়ে উভয়ের জন্য।’

সারাবাংলা.নেটের সঙ্গে একান্ত আলাপে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো এমন মন্তব্য করেন।

 

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘ জানাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী প্রতি তিন জনে এক জন নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের চিত্র আরও ভয়াবহ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ নারী জীবনে একবার হলেও নির্যাতনের শিকার হয়। ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ নারী তাদের জীবনসঙ্গীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়, যাদের কেউই নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খোলে না। শুধুমাত্র ২ দশমিক ১ শতাংশ নারী প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় পর্যায়ে এবং ১ দশমিক ১ শতাংশ নারী পুলিশের কাছে অভিযোগ করে।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে বিশেষ আইন, গাইডলাইন আছে। সমস্যা হচ্ছে, নির্যাতিত এবং আক্রান্ত নারীরা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে কারও কাছে নিরাপত্তা চেয়ে মুখ খুলতে পারছে না। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে মুখ খোলা জরুরি। ভিন্ন কিছু ক্ষেত্রে পুরুষরাও নির্যাতনের শিকার হয়। তাই আমাদের নির্যাতন বিষয়ে না বলা কথাগুলো সমাজে আলোচনা করা জরুরি।’

সারা হোসেন বলেন, ‘প্রধান সমস্যা হচ্ছে, নির্যাতিত নারীকে সমাজে নেতিবাচক চোখে দেখা হয়। ভুক্তভোগী নারী মুখ খুললে ন্যায় বিচারের পরিবর্তে উল্টো তার ওপরই দায় চাপানো হয়। সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দূর করা জরুরি। আবার নির্যাতিত নারীর বিচার পাওয়ার পথও মসৃণ নয়।’

বিজ্ঞাপন

যৌন হয়রানি বা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা রুখতে বিশ্বব্যাপী প্রচারের সঙ্গে বাংলাদেশেও #হিয়ারমিটু বা ‘আমার কথা শোনো’ প্রচার নারীদের সাহস যোগাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১১ জন নারী তাদের না বলা কথা এই প্ল্যাটফর্মে বলেছেন।

#হিয়ারমিটু বা ‘আমার কথা শোনো’ প্রচারণা সম্পর্কে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো সারাবাংলাকে বলেন, ‘#হিয়ারমিটু প্রচারণার মূল প্রতিপাদ্য না বলা কথা প্রকাশ করা। যেসব নারীরা মুখবুজে অত্যাচার বয়ে বেড়াচ্ছে, প্রতিরোধের শক্তি পাচ্ছে না, এই প্রচারণায় নারীরা না বলা কথাগুলো তুলে ধরবে। আমরা নির্যাতিত নারীদের শক্তি যোগাতে চাই।’

মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী মিটু প্রচারণা ভালো সাড়া জুগিয়েছে। নারীদের অমর্যাদা, নির্যাতনের কথা তুলে ধরছে মিটু প্রচারণা। যার ছোঁয়া বাংলাদেশেও লেগেছে। নাগরিক সমাজ এবং নারীরা এই আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সমর্থন জানিয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর মতে, বাংলাদেশের নারীরাও এখন মুখ খুলছেন। তবে দেখতে পাচ্ছি যে সেভাবে নারীরা মুখ খুলছেন না। তার কারণ হয়তো সামাজিক প্রেক্ষাপট, পরিবারের সম্মানসহ বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধকতা। এসব কারণে মানুষ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

#হিয়ারমিটু বা ‘আমার কথা শোনো’ প্রচারণা সম্পর্কে সারা হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ‘#হিয়ারমিটু’ বা ‘আমার কথা শোনো’ প্রচারণা গুরুত্বপূর্ণ। এই প্ল্যাটফর্ম প্রতিটি নারীকে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে উৎসাহ যোগাবে। এই প্রচারণায় কিছুটা ঝুকিও রয়েছে, যেখানে নারীরা নিজে উদ্যোগী হয়ে মুখ খুলছে, সম্ভাব্য ঝুকি সম্পর্কেও সাবধান থাকতে হবে। কেন না বাংলাদেশ এমন একটি প্রেক্ষাপট যেখানে আইনের অপব্যবহার সাধারণ ঘটনা। এখানে পুলিশের হয়রানি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক হয়রানিতেও আইনের অপব্যবহার হয়। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ‘#হিয়ারমিটু’ প্রচারণায় সতর্ক থাকতে হবে। এই প্রচারণা রাজনৈতিক স্বার্থে যেন ব্যবহৃত না হয় সতর্ক থাকতে হবে।’

সারাবাংলা/জেআইএল/এমআই

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন