বিজ্ঞাপন

টিআর-কাবিখায় হরিলুট, ১০ সুপারিশ দুদকের

May 29, 2018 | 10:15 pm

।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: হতভাগাদের জীবন পাল্টাতে সরকারের নেওয়া কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও টেস্ট রিলিফ (টিআর) কর্মসূচি বাস্তবায়নে হরিলুটের চিত্র পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। কাবিখা ও টিআরর কর্মসূচির হরিলুটের চিত্রের সার-সংক্ষেপ এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চলতি মাসে দুদক ১০টি সুপারিশ পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের কাছে গত ২১ মে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের কাছে লেখা আনুষ্ঠানিক চিঠিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাবিখা, টিআর ও কাবিটা প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের বিভিন্ন অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি কমিশন অনুসন্ধান ও তদন্ত চালিয়ে অনিয়মের বিশদ বিবরণ পেয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

দুদক সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন আরো বলেন, ‘এ ছাড়া গণমাধ্যমে এ বিষয়ে অনিয়মের প্রতিবেদনসহ দুর্নীতি দমন কমিশন পরিচালিত গণশুনানির সময়ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এসব অভিযোগ ও কমিশনের অনুসন্ধানের বর্ণনা থেকে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচি (কাবিখ, কাবিটা, টিআর) প্রকল্পের যেসব অনিয়ম হয়ে থাকে, তা রোধের জন্য দুদক তাদের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু সুপারিশ করেছে।’

সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন চিঠিতে আরও উল্লেখ করেন, ‘গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা/কাবিটা/টিআর) কর্মসূচি নীতিমালা অনুসরণ করে এ সব সুপারিশ জনস্বার্থে বিবেচনায় নেওয়ার কথা ভাবতে পারে সরকার।’

দুদকের ১০ সুপারিশ

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো সুপারিশগুলোয় দুদক বলেছে, নীতিমালা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়— তেমন পর্যাপ্ত সময় দিয়ে দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর অর্থ ছাড় করবে। অর্থবছর শেষে জুন মাসের শেষ সপ্তাহে অর্থ ছাড় করা হলে আত্মসাতের সুযোগ তৈরি হয়। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ ছাড় করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয়ত, বিশেষ প্রকল্পে অর্থ/সম্পদ বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর প্রকল্প প্রস্তাব সরেজমিন যাছাই করতে যেতে পারে এবং প্রকল্পের আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা, তাও নির্ধারণ জরুরি।

তৃতীয়ত, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরকে কেন্দ্র করে দালাল চক্র সক্রিয়। এই চক্র ও দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা তাদের এজেন্টদের নিষ্ক্রিয় করা দরকার।

চতুর্থত, বিশেষ কোনো প্রকল্পের বরাদ্দের কোনো প্রস্তাব প্রয়োজনীয়তার নিরিখে সর্তকতার সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। জেলা প্রশাসকরা এ ধরনের বিশেষ প্রকল্পের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর ক্ষেত্রে শতভাগ সরেজমিন যাছাই করে পাঠাবেন। এর ফলে ভুয়া প্রকল্পের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে।

বিজ্ঞাপন

পাঁচ নম্বর সুপারিশে বলা হয়েছে, বিশেষ ও সাধারণ বরাদ্দের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে কিনা তা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে শতভাগ নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে। এমন উদ্যোগ নিতে পারলে  স্থানীয় পর্যায়ে প্রকল্প লুটপাটে গঠিত ভুয়া কমিটি রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

ষষ্ঠত, নীতিমালা মোতাবেক প্রকল্প এলাকায় একাধিক সাইনবোর্ড সহজে দৃষ্টিগোচর হয়— এমন জায়গায় স্থাপন নিশ্চিত করবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি। সেই সঙ্গে সামাজিক অডিট কার্যক্রম নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সপ্তম সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হলে এবং এর ফলে কোনো প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটলে সমানভাবে দায়ী হবে মর্মে পরিপত্র জারি করার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে কাজে স্বচ্ছতা আসবে।

অষ্টমত, অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রজেক্ট ইমপ্লিমেনটেশন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে বাস্তবায়িত কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের অর্থ সরাসরি পিআইসি’র ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে দুদক।

নবম সুপারিশে দুদক বলছে, বিশেষ বরাদ্দের ক্ষেত্রে দুর্নীতির সুযোগ বেশি হয়। তাই প্রয়োজন ছাড়া অর্থাৎ কোনো প্রাকৃতিক দুর্বিপাক না হলে বিশেষ বরাদ্দ নিরুৎসাহিত করা উচিত।

সর্বশেষ সুপারিশে দুদক বলছে, প্রত্যেকটি উপজেলায় অন্তর্গত সকল রাস্তা, খাল, নালা, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ডাটাবেজ প্রণয়ন ও সংরক্ষণ করা যেতে পারে। যেন সংশ্লিষ্ট রাস্তা ও প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নকারী সংস্থার নাম ও উন্নয়নের সন আবশ্যিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। কোন বছরে কোন সংস্কার করা হলো— তা আগের বছরের সংস্কার কাজের সঙ্গে তুলনা করে একটি তুলনামূলক বিবরণী পেশ করার ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এর মাধ্যমেও ভূয়া প্রকল্প ও একই জায়গায় বারবার প্রকল্প সাজানোর দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে দুদক।

সারাবাংলা/জেআইএল/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন