বিজ্ঞাপন

ডাকসু নির্বাচন: একটি নির্মোহ পর্যালোচনা

March 17, 2019 | 10:03 pm

।। ড. মো. আব্দুল মুহিত ও সাব্বির আহমেদ চৌধুরী ।।

বিজ্ঞাপন

বহুল প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে গত ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডাকসুকে বলা হয় দেশের দ্বিতীয় সংসদ। এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভোটের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচন করে থাকে। এই নির্বাচনের ফলে দেখা যাচ্ছে, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুর সহসভাপতি (ভিপি) ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রব্বানি জিএস পদে জয়ী হয়েছে। সমাজসেবা সম্পাদক ছাড়া বাকি পদগুলোতে ছাত্রলীগ সমর্থিত প্যানেল জয় লাভ করেছে। বিজয়ী সবাইকেই অভিনন্দন। ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙে এবং অজানা আশঙ্কার ডামাডোলে ডাকসু নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও ধন্যবাদ জানাই।

সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন নির্বাচনে অনিয়ম দেখে নির্বাচনি সংস্কৃতি নিয়ে জনগণের মধ্যে ব্যাপক নেতিবাচক ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে সরকার সমর্থিত প্যানেল ক্ষমতার জোরে জয়ী হওয়ার প্রচেষ্টা করবে— এটাই স্বাভাবিক ধরে নিয়েছে সাধারণ জনগণ। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ডাকসু নির্বাচনের ক্ষেত্রেও। দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার ফলে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। আর সাধারণের সেই চাপা ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী ও রোকেয়া হলের দু’টি অপ্রত্যাশিত এবং বিবেকবর্জিত ঘটনা। অথচ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ত্বরিত ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কুয়েত মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষকে অব্যহতি দিয়ে নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। ভোটের সময় ৪ ঘণ্টা বাড়িয়ে ভোট সম্পন্ন করা হয়। প্রশাসনের এই ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তাই ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমের কল্যাণে দেশের জনগণ যে নেতিবাচক ধারণা পেয়েছে, তা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সৎ ও নির্ভীক শিক্ষকদের মধ্যে একটি বিশাল অনীহার জন্ম দিয়েছে। অথচ জনগণের সামনে যা তুলে ধরা হয়েছে, তা ছিল একেবারেই একটি অধ্যায়ের খণ্ডচিত্র।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের ভোটকেন্দ্রে ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে। এ নির্বাচনে একজন শিক্ষার্থী একাধারে নিজের হলের হল সংসদের নির্বাচন এবং কেন্দ্রীয় সংসদের নির্বাচন— দু’টিতেই ভোট দিয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে হল সংসদের একটি ব্যালট এবং ডাকসুর ক্ষেত্রে তিনটি ব্যালট পূরণ করতে হয়েছে। তাই প্রত্যেকের ক্ষেত্রে ভোট প্রদানের জন্য গড়ে ৫ মিনিট লেগেছে। একেকটি হলের কেন্দ্রে শিক্ষার্থীর সংখ্যানুপাতে যতগুলো ভোটের বুথ দরকার, তার চেয়ে বেশি বুথ করা হয়েছিল। তবুও শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ভোটদানের সময় বিলম্বিত হয়েছে বিধায় ভোটারের লাইন সাময়িক বেড়েছে। তবে একেবারে শেষ ভোটারটিও তার নিজস্ব ভোট দিয়ে যেতে পেরেছে। এমন কোনো শিক্ষার্থীর অভিযোগ পাওয়া যায়নি, যে কিনা দীর্ঘ এই লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভোট না দিয়ে চলে গিয়েছে। অহেতুক ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ভোটের লাইন স্থির হয়ে থাকা, ভোটারদের ঢুকতে না দেওয়া, কোনো কোনো ছাত্র সংগঠনের ছাত্রদের একাধিকবার ভোট দেওয়ার কথা সাধারণ মানুষের মনকে বিচলিত করে দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে রোকেয়া হলে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা কাকতালীয় মাত্র। মিডিয়ার কল্যাণে দেখা গেল, এক ট্রাংক ব্যালট নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। অথচ ট্রাংক খুলে দেখা গেল, ব্যালটগুলো নির্বাচনের জন্য কেন্দ্র থেকে ওই হলে পাঠানো হয়েছে, যা অব্যবহৃত। রোকেয়া হল প্রশাসন ব্যালটগুলোকে নিরাপদে রাখার জন্য বাক্সবন্দি করে অন্য কক্ষে রেখেছিল, ভোটগ্রহণ কক্ষে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি উদ্ভব হলে বেশি ব্যালট পেপার যেন নষ্ট না হয়ে যায়। স্বাভাবিক ভোট গ্রহণের বিভিন্ন পর্যায়ে ভোট কক্ষে ব্যালট সংখ্যা কম হলে সেই ব্যালটগুলো সরবরাহ করা হতো। সাধারণ একটি প্রশাসনিক পদ্ধতিগত প্রক্রিয়াকে জটিল করা হয়েছে। অথচ আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকতুল্য শিক্ষকদের নিয়ে যাচ্ছেতাই ভাষায় স্লোগান দিয়ে একটি জটিল পরিস্থিতি  তৈরি করে ফেলেছিল। আর আমাদের মিডিয়া সমাজ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা না করে, বিষয়টির গভীরে না গিয়ে পক্ষপাতিত্বমূলক সংবাদ পরিবেশন করে, যা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের উসকে দেয়। ফলে সেখানে কিছু হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে, যা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত।

অনেকে বলছেন, ভোটের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত বা ফল নির্ধারণে কারচুপি করা হয়েছে। অথচ তা একেবারেই ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত, ভোটের হিসাব পর্যালোচনা করলেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। ডাকসুর মোট ভোটার ছিল ৪২ হাজার ৯১১ জন। এর মধ্যে ১৬ হাজার ১৪৫ জন ছাত্রী, যা মোট ভোটারের ৩৮ শতাংশ। এরাই আসলে জয়-পরাজয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্রীদের পাঁচটি হলের মধ্যে একটি বাদে সব হলে সাধারণ ছাত্রীরা বিপুল ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হল সংসদে জয়ী করেছে। সেই হলগুলোতে সাধারণ ছাত্রীরা ছাত্রলীগ-সমর্থিত হল সংসদের প্যানেলকে যেমন সমর্থন দেয়নি, তেমনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ভিপি প্রার্থী শোভন এই হলগুলোতে সেরকম আশানুরূপ ভোট পায়নি। নুর এইসব ছাত্রী হলে বিপুল ভোটে এগিয়ে ছিল। অর্থাৎ নারী ভোটারদের অরাজনৈতিক প্রার্থীদের কিংবা নারী প্রার্থীদের পছন্দ করার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। অন্যদিকে অন্তত পাঁচটি ছাত্র হলে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভিপি বা জিএস হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। অর্থাৎ ছাত্রদের হলগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও নুর সেখানে সাধারণ ছাত্রদের ভোট পেয়েছে। যদি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোট দিতে ন্যূনতম বাধাও দেওয়া হতো, তাহলে শোভনেরই এই পদে জিতে আসার কথা ছিল। তাই ভোট সুষ্ঠু হয়নি, সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে পারেনি বলে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তার কোনো ভিত্তি নেই।

প্রার্থীদের ভোটের হিসাব পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে ছাত্রলীগের প্যানেল ভোট পেয়েছে ৯-১০ হাজারের মতো। ছাত্রলীগ সমর্থিত প্যানেলে বিভিন্ন পদের ভোটের সংখ্যা হলো— ভিপি পদে ৯ হাজার ১২৯, জিএস পদে ১০ হাজার ৪৮৪, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৯ হাজার ১৫৪, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১০ হাজার ৬০৪, সাহিত্য সম্পাদক পদে ১০ হাজার ৭০০, সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ১০ হাজার ৭৯৯, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ৯ হাজার ৪৭। বাকি পদগুলোতেও ভোট সংখ্যা কাছাকাছি। অর্থাৎ ছাত্রলীগের নিজেদের কোন্দলের বলি শোভন হয়েছে, এ ক্ষেত্রে তা প্রতীয়মান হয় না। নুর নিজের যোগ্যতাবলে এই পদে জয়ী হয়ে এসেছে। সে কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থন অর্জন করতে পেরেছে। আর সেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে ভোটকেন্দ্রে এসে নিজেদের মতামত ব্যালটের মাধ্যমে প্রকাশ করেছে। আমাদের মিডিয়া যতই বলুক ভোট সুষ্ঠু হয়নি, তা আসলে বাস্তবচিত্র নয়।

বিজ্ঞাপন

ডাকসুতে ভোট হয়েছে ছাত্রলীগ, ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বাম দল সমর্থিত প্রগতিশীল ছাত্র জোট এবং স্বতন্ত্র জোট— মূলত এই চারটি প্যানেলে। অর্থাৎ অধিকাংশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মূল ভোট এই চার দলের সমর্থিত প্রার্থী পেয়েছে, যা মোট ভোটের ৯০ শতাংশ। নুর ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদ প্যানেলে ১১ হাজার ৬২ ভোট পেয়েছে ভিপি পদে। বাম দল সমর্থিত প্রগতিশীল ছাত্র জোটের লিটন নন্দী (১ হাজার ২১৬ ভোট) বা স্বতন্ত্র জোটের অরণি সেমন্তি খান (২ হাজার ৬৭৬ ভোট) এই পদে থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার ভোট টানতে পেরেছে। তাই ভিপি পদে নুর জয়ী। কিন্তু জিএস পদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোট চারটি দলে বিভক্ত হয়ে যায়। রাব্বানী ছাত্রলীগের ভোট পেয়েছে ১০ হাজারের মতো। বাকি তিন দলের মধ্যে রাশেদ ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদ থেকে ৬ হাজার ৬৩ ভোট পেলেও বাম জোট ও স্বতন্ত্র জোটের প্রার্থীরা এখানে মোট ৭ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছে। অর্থাৎ ছাত্রলীগ বাদে অন্যান্য জোটের প্রার্থীদের মোট ভোটের সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজারের মতো। এই পদে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কিছু ভোট বাম জোট এবং স্বতন্ত্র জোটের প্রার্থীরাও পেয়েছে। তাই জিএস পদে রাশেদ জিততে পারেনি। অন্যান্য পদেও একই হিসাব-নিকাশ হয়েছে।

অর্থাৎ ছাত্রলীগের দলীয় ১০ হাজার ভোটের কাছে অন্যান্য দলের প্রার্থীরা দাঁড়াতে পারেনি। তাই ছাত্রলীগ বনাম অ্যান্টি-ছাত্রলীগ— এই দুই প্যানেলে ভোট হলে ছাত্রলীগ হেরে যেত সব কয়টি পদেই। শেষ মুহূর্তে নির্বাচনের আগে ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদের সাথে যেকোনো একটি জোট (বাম বা স্বতন্ত্র জোট) যদি সমঝোতা করে একটি প্যানেল দিত, তারা আরও বেশি পদে জয়ী হয়ে আসতে পারত। বাংলাদেশ সৃষ্টির পরে ডাকসুর ইতিহাসে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন কখনই জয়ী হয়ে আসতে পারেনি। কারণ সরকার সমর্থিত প্যানেলের বিপরীতে বিরোধী ছাত্রসংগঠনের নেতারা একজোট হয়ে নির্বাচন করেছিল। যেমন ১৯৮৮ সালে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের দুদু-রিপন প্যানেলের বিপরীতে সাধারণ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সুলতান মনসুর (ছাত্রলীগ)-ডা. মুশতাক (জাসদ-ইনু) পরিষদ বস্তুত ঐক্যের কারণে জয় লাভ করে। অর্থাৎ সরকারবিরোধী ছাত্রসংগঠন একত্রে জোটবদ্ধ প্যানেল দিলে এবারের নির্বাচনের ফলাফল অন্যরকম হতে পারত।

অন্যদিকে ছাত্রদলের দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে অনুপস্থিতি তাদেরকে অস্তিত্বের সংকটে ফেলেছে। নির্বাচন নিয়ে পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার অভাব এবং প্রার্থী মনোনয়নে দূরদর্শিতার অভাব ছিল। ক্যাম্পাসে পরিচিত মুখ ও নারী প্রার্থীর অনুপস্থিতি ভোটের হিসাব থেকে তাদের যোজন যোজন দূরে ঠেলে দিয়েছে। ছাত্রদলের প্যানেলে একমাত্র নারী প্রার্থী কানেতা ইয়া লাম লাম ৭ হাজার ১১৯ ভোট পেয়েছে, যা ছাত্রদলের প্যানেলের মোট ভোটের চেয়েও বেশি। তাই প্রার্থী মনোনয়নে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে আরও কিছু নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিলে হয়তো তারাও ভোটের হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারত। অন্যদিকে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান/সক্রিয় না থাকায় তাদের সমর্থনের পাল্লা/উপস্থিতি শূন্যের কোটায় নেমে গেছে। ফলে বিভিন্ন হল সংসদে তারা পূর্ণ প্যানেল দিতে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু কয়েকটি ছাত্র হলে ভিপি বা জিএসসহ কয়েকটি সম্পাদক পদে প্রার্থী দিতে পেরেছে। তবে একথা সত্যি যে ছাত্রদল ক্যাম্পাসের হলগুলোতে পর্যাপ্তভাবে নির্বাচনি প্রচারণা চালাতেও পারেনি।

ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিন্দুমাত্র আগ্রহের কমতি ছিল না। যা প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার নজরে আসেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কড়া নির্দেশ ছিল ভোট যেন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। তাই প্রত্যেক হলে ভোটগ্রহণের পূর্বেই সব দলের প্রার্থীদেরকে নিয়ে ব্যালটবাক্স খুলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের সামনেই তা সিলগালা করার বিধান নিশ্চিত করা হয়। আবার ভোটগ্রহণ শেষে তাদের সামনেই সিলগালা খুলে যেন ভোট গণনা করা হয়। ভোট গণনার সময় সকল প্রার্থীর উপস্থিতিও নিশ্চিত করা হয়। কোনো অছাত্র যেন ভোট দিতে না পারে, তাই আইডি কার্ড চেক করে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়। সব দলের প্রার্থীকে ভোটগ্রহণ কক্ষে ভোট চলাকালীন প্রবেশের অধিকার দেওয়া হয়, যেন কেউ যেন নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে। এমনকি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীদের ভোটকেন্দ্রের ভোট কক্ষে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে ভোট কক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার নিষিদ্ধ রাখা হয়, উন্নত বিশ্বের ক্ষেত্রেও এ ধরনের বাধানিষেধ থাকে।

বিজ্ঞাপন

ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার এই যুগে কুয়েত মৈত্রী হলের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডাকসু নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে ঢালাওভাবে মন্তব্য করা কতোটুকু সমীচীন, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও ভোটারদের পবিত্র ভোটের আমানত অধিকাংশ শিক্ষক ন্যায়-নিষ্ঠভাবে সুরক্ষিত রেখেছে। অথচ এই ঢালাও দোষারোপের সংস্কৃতিতে সেসব শিক্ষকের মধ্যে পুনরায় নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে অনীহা তৈরি করেছে। ঢালাও দোষারোপের সংস্কৃতি সবচেয়ে ক্ষতি করেছে ছাত্র-শিক্ষকের শ্রদ্ধার সম্পর্কটিকে। এই নির্বাচনের ধারাবাহিকতা ছাত্রনেতাদের মধ্যে জবাবদিহিতার জন্ম দেবে, ব্যালটের শক্তি মুছে দেবে গণরুম, গেস্টরুমের মতো ছাত্রবিরোধী অনাচার। ক্রিয়াশীল দলগুলোর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের জন্ম দিয়েছে পাশাপাশি উড়ন্ত ব্যানার, হাতে হাতে হ্যান্ডবিল কিংবা মধুর ক্যান্টিনে চায়ের কাপের দুরন্ত আড্ডা। স্বপ্ন দেখি ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচনের এই আলো ফিরিয়ে আনবে ৫২, ৬৯, ৭১, ৯০-এর ছাত্র আন্দোলনের গৌরবোজ্জল দিনগুলো।

লেখক

 ড. মো. আব্দুল মুহিত, সহযোগী অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (E-mail: muhit@du.ac.bd)

 সাব্বির আহমেদ চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (E-mail: sabbir.ahmed@du.ac.bd)

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন