বিজ্ঞাপন

ডিম দিয়েছে খানজাহান মাজারের কুমির

May 3, 2018 | 2:27 pm

।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

বাগেরহাট: বাগেরহাটে হজরত খানজাহান (রহ.)-এর মাজারের দীঘির মিঠা পানির কুমির আবারও ডিম দিয়েছে। এর সংখ্যা ৬০ থেকে ৭০টি। সেগুলো ‘তা’ দিয়ে বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টা করছে কুমিরটি। ডিম দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে খানজাহানের মাজারের দীঘির পাড়ে।

খানজাহানের মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির জানান, গত শনিবার রাতে ও রোববার সকালে মা কুমিরটি দীঘির উত্তর পাড়ে গর্ত খুঁড়ে ৭০টির মতো ডিম পেড়েছে। ওই ডিম ধুলামাটি দিয়ে ঢেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য এখন ‘তা’ দিচ্ছে কুমিরটি। মাঝে মধ্যে খুব অল্পসময়ের জন্য কুমিরটি দীঘিতে নেমে আবার ফিরে আসছে ডিমে ‘তা’ দিতে। আগামী আগস্ট মাস নাগাদ ডিমগুলো থেকে বাচ্চা ফুটবে— এমনটাই প্রত্যাশা মাজারের প্রধান খাদেমের।

বৃহস্পতিবার (৩ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, রোদের মধ্যে দীঘির উত্তর পাড়ে মা কুমিরটি মাটি আঁকড়ে আছে। সেখানে গর্ত খুঁড়ে ডিম ঢেকে রেখেছে ওই মাদি (মা) কুমিরটি। ডিম পাড়ার পর এখন বাচ্চা ফোটানোর জন্য ‘তা’ দিচ্ছে। দর্শনার্থী কেউ কাছে গেলেই তেড়ে আসছে কুমিরটি। কুমিরটির অবস্থানের আশপাশ বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে মাজারের খাদেমরা।

বিজ্ঞাপন

শের আলী ফকির জানান, এই দীঘিতে ‘কালাপাড়’ ও ‘ধলাপাড়’ নামে দুটি কুমির লালন-পালন করতেন হযরত খানজাহান (রহ.)। ওই জুটির কোনো বংশধর এখন আর বেঁচে নেই। এখন ভারত সরকারের দেওয়া মিঠা পানির কুমির এই দীঘির শেষ সম্বল। কয়েক বছর ধরে এই দীঘির মাদি কুমিরটি ডিম পাড়লেও তাতে বাচ্চা ফুটছে না। কুমিরের বংশবৃদ্ধি না হলে দীঘিটি তার সাড়ে ৬শ বছরের ঐতিহ্য হারাবে। তাই দীঘিতে কুমিরের বংশবৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইফুজ্জামান খান জানান, দীঘিতে বর্তমানে মিঠা পানি প্রজাতির একটি পুরুষ ও একটি মা কুমির রয়েছে। কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিমভাবে চেষ্টা করেও ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো যায়নি। মা কুমিরটিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও নেওয়া হয়েছে। পুরুষ কুমিরটির শুক্রাণু মা কুমিরটির ডিম্বাণুতে যথাযথভাবে প্রতিস্থাপন না হওয়ার ফলে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটছে না। তাছাড়া শতভাগ সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় পুরুষ কুমিরটির শুক্রাণুর সক্ষমতা কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, কুমির খানজাহানের দীঘির ঐতিহ্য। কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য কয়েক বছর ধরে নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। কী কারণে বাচ্চা ফুটছে না, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে দীঘির ঐতিহ্য ধরে রাখতে কুমিরের বংশবৃদ্ধির জন্য সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এরই মধ্যে খানজাহানের দীঘি থেকে দুটি কুমির সুন্দরবনের করমজল কুমির প্রজননকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের করমজল থেকে কুমির এনে দীঘিতে সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগের সাথে আলোচনা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, হযরত খানজাহান (রহ.) আমল থেকে প্রায় সাড়ে ৬শ বছর ধরে মাজারের দীঘিতে ‘কালাপাড়’ ও ‘ধলাপাড়’ নামের মিঠা পানির কুমির (মার্স কোকোডাইল) বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছে। তবে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হযরত খানজাহানের আমলের কুমিরের শেষ বংশধরটিও মারা যায়। পরে ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ কোকোডাইল ফার্ম থেকে পাওয়া ৪০টি মিঠা পানির কুমিরছানার মধ্যে ছয়টি কুমির খানজাহানের দীঘিতে ছাড়া হয়েছে।

সারাবাংলা/এমএইচ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন