বিজ্ঞাপন

ড্রেসিংয়ের নামে যৌন হয়রানির শিকার রোগীরা!

January 18, 2018 | 8:18 am

সোহেল রানা, মেডিকেল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: আগুনে পোড়া রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর এক নারীকে (২৫) ড্রেসিং করায় কালাম নামের এক বহিরাগত (স্পেশাল) ওয়ার্ড বয়। এ সময় ওই ওয়ার্ডবয় রোগীটিকে ড্রেসিংয়ের নামে যৌন হয়রানি করে বলে অভিযোগ করেন অগ্নিদগ্ধ ওই নারী।

বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক তানভীর ইমামের কাছে অভিযোগটি গেলে ওই ওয়ার্ডবয়কে বার্ন ইউনিট থেকে বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু একদিন বাদেই জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আবার কাজ শুরু করেছে কালাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. তানভীর সারাবাংলাকে জানান, বার্ন ইউনিটে রোগীর তুলনায় আয়া, ওয়ার্ডবয় বা নার্সের সংখ্যা অনেক কম। তাই বহিরাগত (স্পেশাল) ওযার্ড বয়দের দিয়ে কাজ চালাতে হয়। কিন্তু রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা মেডিকেলের ছয় তলার বার্ন ইউনিটে সরকারি আয়া-ওয়ার্ডবয়ের চাইতে বহিরাগত কর্মীই (স্পেশাল) বেশি কাজ করছে। এতে বেশির ভাগই রোগীই প্রতারিত হচ্ছে।

রোগীর স্বজনরা জানান, ড্রেসিং সহ নানা অজুহাতে এরা ভাগিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এ ছাড়াও নারী রোগীদের নানাভাবে হয়রানি করছে পুরুষ ওয়ার্ড বয়রা। এসব ওয়ার্ডে পর্দা দিয়ে ঘেরা অংশে পুরুষদের হাতে ড্রেসিংয়ের মতো সেবা নিতে নারীরা ইতস্তত বোধ করলেও অসহায় মূহূর্তে তাদের কিছুই করার থাকে না।

হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ছয় তলার  বার্ন ইউনিটে কাজ করে ১০ জন সরকারি ওয়ার্ডবয় আর আয়া। কিন্তু সেখানে বহিরাগত হিসেবে কাজ করে আরও ৬৫ জন। এর মধ্যে ১০ জন বাদে সবাই পুরুষ।

বিজ্ঞাপন

ছয় তলায় কেবিন ব্লকে কাজ করে পলাশ, রমজান ও রবি নামের তিন জন। পাঁচ তলায় ছোট নাজমুল। চার তলায় বড় নাজমুল ও সিরাজ। তিন তলায় সুরুজ। আইসিইউতে দিপংকর।  জরুরি বিভাগে কাজ করে হাফিজ, মানিক, খবির মল্লিক, অপারেশন থিয়েটারে কাজ করে তাজদির, সাদ্দাম, জামাল ও ইভা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ওয়ার্ডবয় জানান, ‘বার্ন ইউনিটের ওয়ার্ড মাস্টার আব্দুর গফুর আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে থাকে । কেউ যদি তার কথা না শুনে, তখন সে তাকে নিজের খুশীমত  এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে বদলি করে দেয়। ঘুষ খাওয়ার জন্যই সে এসব কাজ করে থাকে। টাকার বিনিময়ে গফুর অনেক লোককেই বার্ন ইউনিটে চাকরী দিয়েছে।’

ওয়ার্ড মাস্টার গফুরের সাথে যোগাযোগ করলে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সারাবংলাকে বলেন, ‘আমি কোন লোককে ঢুকাইনি। আর টাকা খাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমি এখনো অনেক ওয়ার্ড বয়ের চেহারাও ভাল করে চিনি না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘জরুরি বিভাগের কালামের নামে অভিযোগ পেয়েছিলাম। পরে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এখন সে কাজ করছে কিনা আমার জানা নাই।’

বিজ্ঞাপন

ড্রেসিংয়ের ব্যাপারে ডা. সামন্ত বলেন, ‘অনেক সময় রোগীর চাপ থাকলে পুরুষরা  মহিলাদের ড্রেসিং করে থাকে। কিন্তু কোনো মহিলার সাথে খারাপ আচরণ করবে সেটা তো হতে পারে না। কালামের বিষয়টা জানার সাথে সাথে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কারও নামে যদি এমন অভিযোগ পাওয়া যায়, সাথে সাথে তাকে বার্ন ইউনিট থেকে বের করে দেওয়া হবে ‘

ডা. সামন্ত লাল আরও বলেন, ‘আমরা নারী রোগীদের আয়া দিয়ে ড্রেসিংয়ের ব্যবস্থা করছি।’

সারাবাংলা/এসআর/জেডএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন