বিজ্ঞাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসে ছাপানো হোক ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র

November 10, 2018 | 11:57 am

।। শান্তা তাওহিদা।।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে জরুরি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অর্থাৎ ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ফের নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের জন্য আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আখতার হোসেন একাই রাজু সন্ত্রাস বিরোধী ভাস্কর্যের সামনে অনশন করে। পরে তার দাবির প্রতি সমর্থন করেন ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক সংগঠন এর শিক্ষার্থীরাও।

এখন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক কীভাবে? কোথা থেকে ? কারা? কোন মাধ্যমে ? – প্রতি বছর এই ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটে? যতদূর জানি বা বিশ্বাস করি প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে ঢাবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো অংশেই কমতি থাকে না। বিশেষত আমাদের শিক্ষকদের কাছে প্রশ্ন আসার পর সেটি ফাঁস হওয়ার কোনো সুযোগ আমরা রাখি না। প্রশ্ন বহন, পরীক্ষা নেওয়া ও উত্তরপত্র সংগ্রহ করে যথাযথভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেই। এই ধাপগুলোতে প্রশ্নফাঁসের কোনো সুযোগ নেই।

আমি ব্যক্তিগত ভাবে ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার শিক্ষকদের মূল দায়িত্ব পালনের টিমে কাজ করেছি। এছাড়াও ডিনের প্রতিনিধি হিসেবে ঢাবির বাইরের কেন্দ্রগুলোতে গিয়েছি। অত্যন্ত নিরাপত্তার সঙ্গে আমরা কাজগুলো করে থাকি। তাহলে কোথা থেকে, কার মাধ্যমে, কোন মাধ্যমে হচ্ছে এ প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে? আমার ব্যক্তিগত অনুমান ছিল প্রেস থেকে কী সম্ভাবনা থাকতে পারে?

বিজ্ঞাপন

এ প্রশ্নের পূর্ণাঙ্গ উত্তর পাই চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানমুলক অনুষ্ঠান ‘সার্চলাইট’ এ। প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের মুখোশ উন্মোচন করেছে চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের অনুসন্ধান টিম। টেলিভিশনটির অনুসন্ধান টিম এবং সাংবাদিক ইমরানের দক্ষতায় বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের শুক্রবার রাত সাড়ে আটটায় অনুসন্ধানীতে দেখানো হয় প্রশ্ন ফাঁসের আদ্যপান্ত। ইউটিউবকে অনুসন্ধানমুলক অনুষ্ঠান সার্চলাইট দেখলাম আজ। একদম যা সন্দেহ করেছিলাম।

শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান সার্চলাইটের ‌‌’পিতা-পুত্রের প্রশ্ন ফাঁস’ পর্বে দেখানো হয়, কীভাবে পিতা-পুত্র মিলে প্রশ্ন ফাঁসের একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে তুলেছিল এবং ফাঁসকৃত প্রশ্ন কীভাবে শেষ পর্যন্ত ভাইরাল হয়ে যায়।

অনুসন্ধানের পুরো ঘটনাটি চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল ইমরানের ব্যক্তিগত ফেইসবুক টাইম লাইন থেকে সংগ্রহ করে দেখানো হলো:

বিজ্ঞাপন

অনুসন্ধানে দেখানো হয়, চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ছাপা হয় সরকারি একটি প্রেসে। ওই প্রেসের সিটিপি টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন হাবিবুর রহমান জাভেদ। ঘ ইউনিটের প্রশ্ন ছাপার আগে তিনি এর একটি কপি নিজের কাছে রেখে দেন। পরে সেটি হাতে লিখে পৌঁছে দেন একই প্রেসের সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর স্যামুয়েল সুমিত মণ্ডলের কাছে। এরপর সুমিত মণ্ডল সেই প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেন সহকর্মী বিদ্যুৎ আলীর কাছে। যিনি সরকারি ওই প্রতিষ্ঠানে উচ্চমান সহকারী হিসেবে কাজ করেন। বিদ্যুৎ আলীর হাত থেকে সেই প্রশ্ন চলে যায় তার ছেলে মোহাইমেনুল ইসলাম বাঁধনের হাতে। এই বাঁধনের মাধ্যমেই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছে ভাইরাল হয় চলতি বছরের ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র।

এই অনৈতিক কাজের জন্য বিদ্যুৎ আলীকে তার ছেলে বাঁধন দেয় ৩০ লাখ টাকা। সুমিত মণ্ডল পায় ১৯ লাখ এবং জাভেদ পায় ৫ লাখ টাকা। এছাড়াও এই তিনজনের কাছ থেকে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের দেওয়া দুই কোটি সাতাশ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, সিআইডি। অনুসন্ধানে দেখানো হয়, ফাঁসকৃত রাজধানীর প্রশ্ন পশ্চিম শ্যাওড়া পাড়ার এবং উত্তরার দুটি বাসায় পরীক্ষার আগের রাতে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ভর্তিচ্ছুদের পড়ানো হয়।

গত মাসে চলতি বছরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে- তথ্য-প্রমাণসহ এমন রিপোর্ট করে চ্যানেল টোয়েন্টিফোর। এরপর পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে অনশন, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে উত্তীর্ণ সাড়ে আঠার হাজার শিক্ষার্থীর পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগামী ১৬ নভেম্বর এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

এর আগে গত বছরও সার্চলাইটের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে রাজধানীর ইন্দিরা রোডের একটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে পর পর দুই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল।’…

বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে দুঃখজনক লেগেছে যেই বিষয়টি তা হল, এই প্রশ্ন ফাঁসের মূল ভুমিকায় আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাইমেনুল ইসলাম বাঁধন। তবে পাশাপাশি এও সত্য যে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থী সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল ইমরান বের করে আনল পুরো ঘটনা। এই অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন সত্যিকার অর্থে আমাদের আশা জাগায়।

তবে আমাদের এখানে থেমে গেলে চলবে না। কারন যারা প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতির সাথে যুক্ত তারা প্রতিবারই নতুন নতুন পদ্ধতি বের করে। তাই প্রশ্ন ফাঁসকে চিরতরে রুখতে হলে আমাদের আরও সাবধান হতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আবারও ধন্যবাদ ঘ ইউনিটের পরীক্ষা পুনরায় নেবার সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। তবে ঢাবি প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজটিও যেন আমাদের তত্ত্বাবধানে কঠোর নিরাপত্তার সাথে আমাদের ক্যাম্পাসেই করার পদেক্ষেপ নেওয়া হয়। এটি একটি বিশাল দায়িত্ব বাড়াবে। কিন্তু মেধাবীদের কথা মাথায় রেখে এ দায়িত্বটিও আমাদের নিজেদের কাঁধে নিতে হবে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন