বিজ্ঞাপন

তারেক মাসুদ হত্যার ক্ষতিপূরণ ৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা

December 3, 2017 | 9:20 am

সারাবাংলা প্রতিবেদক

বিজ্ঞাপন

২০১১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাসচালককে  ৩০ লাখ টাকা ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে গুনতে হবে ৮০ হাজার টাকা । বাকি ৪ কোটি ৩০ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫২ টাকা তিন বাস মালিককে সমান ভাগ করে দিতে হবে। অর্থাৎ প্রত্যেক মালিককে দিতে হবে ১ কোটি ৪৩ লাখ ৬৫ হাজার ১৫১ টাকা।

আগামী তিন মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণের এ টাকা পরিশোধ করতে বলেছেন আদালত। রোববার (০৩ ডিসেম্বর) বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

গত ২৯ নভেম্বর বুধবার থেকে রায় পাঠ শুরু হয়ে আজ শেষ হয়। টানা তিনদিন ধরে রায় পাঠ শেষে এ ঘোষণা আসে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে গত ১৬ নভেম্বর এ মামলার শুনানি শেষে রায়ের দিন ঠিক করে দেয় আদালত।

আদালতে আবেদনকারী নিহত তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, তার মেয়ে ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন ও রমজান আলী সিকদার।

বাস মালিকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুস সোবহান তরফদার। রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স কোম্পানির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক ও ইমরান এ সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট শিশির মো. মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইশরাত জাহান।

বিজ্ঞাপন

রায়ের পরে ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন বলেন, আমাদের দীর্ঘ পাঁচ বছর লড়াইয়ের আজকে সমাপ্তি টানা হলো। ক্ষতিপূরণ দাবি করে পাঁচ বছর আগে তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, ছেলে নিশাদ মাসুদ, তারেক মাসুদের মা নুরুন্নাহার বেগম মামলা করেছিল। আজকে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে এ রায় পেয়েছি।

তিনি বলেন, এই ক্ষতিপূরণের টাকা আমরা কয়েকটি খাতে দাবি করেছিলাম। এক, তারেক মাসুদ তিনি সংসারের মূল উপার্জনকারী ছিলেন; দুই, পরিবার ও সন্তানেরা তার স্নেহ ভালবাসা হারিয়েছে তার মূল্য; তিন, ক্যাথরিন মাসুদ নিজে যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন তার ক্ষতিপূরণ এবং ওই দুর্ঘটনায় যে গাড়ি নষ্ট হয়ে তারও ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছিল। তারই আলোকে আদালত এ রায় দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ক্ষতিপূরণের দাবি সকলের জন্য থাকা উচিৎ। এর মাধ্যমে অন্যরাও ট্রাইবুনালের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন।

তবে আদালত এও বলেছেন, স্নেহ-ভালবাসা থেকে কেউ যদি বঞ্চিত হয়, তাহলে সবার জন্য একই মাপকাঠিতে ক্ষতিপূরণ দাবি করার অধিকার থাকবে।

বিজ্ঞাপন

রায়ে আদালত গাড়ির চালকদের সতর্ক দিয়ে বলেছেন, গাড়ির চালকদেরও ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিপূরণের দায় নিতে হবে। তা না হলে তারা সতর্ক হবেন না।

আদালতের এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ বলেন, এতদিনের যন্ত্রণার পরে এ রায়টা পেয়ে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পেয়েছি। আমি তারেককে ফেরত পাব না। তবে আজকে আমি কিছুটা সান্ত্বনা পেয়েছি আমার সাত বছরের ছেলের জন্য। যে তার বাবার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সান্ত্বনা তারেকের মায়ের জন্য যে, তিনি তার বড় ছেলেকে হারিয়েছেন।

তিনি বলেন, একই সঙ্গে সমবেদনা তাদের জন্য যারা প্রতিদিন মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার মাধ্যমে কাছের মানুষদের হারাচ্ছে।

ক্যাথরিন মাসুদ বলেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে আইনগতভাবে স্বীকৃত হচ্ছে যে, তথাকথিত দুর্ঘটনা আসলেই দুর্ঘটনা নয়। এই সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে চালকদের ও কোম্পানির দায় আছে। এমনকি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিরও দায় আছে। এই আইনের অধীনে আমরাই প্রথমবারের মতো প্রতিকার চেয়েছি। এখন থেকে আশা করি অনেকেই ক্ষতিপূরণ পাবে।

রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মো. মনির বলেন, এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পরে বিশ্লেষণ করে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ‘

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিশুক মনির। তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটির সঙ্গে চুয়াডাঙ্গাগামী একটি বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনিরসহ মাইক্রোবাসের পাঁচ আরোহী নিহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে।

২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জ জেলা জজ আদালতে মোটরযান অরডিন্যান্সের ১২৮ ধারায় বাস মালিক, চালক এবং ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। পরবর্তীকালে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে মামলা দুটি হাইকোর্টে বদলির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন বাদীরা। নিম্ন আদালত থেকে মামলা দুটি স্থানান্তরে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্টে ওই আবেদন দুটি করা হয়। তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথেরিন মাসুদ এবং মিশুক মুনিরের স্ত্রী কানিজ এফ কাজী ও তাদের ছেলে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর হাইকোর্টে ওই দুটি আবেদন করেন। যার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৩ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন।

রুলে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে মামলা দুটি কেন উচ্চ আদালতে বদলি করা হবে না—তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি মামলা দুটির নথি তলব করা হয়। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলা ও মোটর ক্লেইমস ট্রাইব্যুনালে করা মামলা দুটি হাইকোর্টে বদলির আবেদন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে বিচারপতি জিনাত আরার নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য পাঠান প্রধান বিচারপতি।

সারাবাংলা/এজেডকে/একে/ডিসেম্বর ০২, ২০১৭

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন