বিজ্ঞাপন

তিন পার্বত্য জেলায় ৩১৭ কি.মি. সীমান্ত সড়ক হচ্ছে

March 20, 2018 | 8:53 am

।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : তিন পার্বত্য জেলায় সীমান্ত সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। এসব জেলার সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমারের ৫৪০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণ করা হবে ৩১৭ কিলোামিটার চারটি পৃথক সড়ক। ফলে সীমান্ত সুরক্ষা বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম সোমবার (১৯ মার্চ) সারাবাংলাকে বলেন, এ প্রকল্পটি আমরা প্রস্তাব করেছি। তবে এই মুহূর্তে মিটিংয়ে রয়েছি। না দেখে প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে পারছি না।

পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এ উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে সীমান্তের দুই পাশে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও মানব পাচার বন্ধ করা সম্ভব হবে। এছাড়া প্রতিবেশি দুই দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের ও প্রসার ঘটবে। এজন্য ‘সীমান্ত সড়ক (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দবরবান পার্বত্যজেলা) নির্মাণ-১ম পর্যায় হাতে নেয়া হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৯৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আজ মঙ্গলবার প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

বিজ্ঞাপন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি বাংলাদেশের এক দশমাংশ এলাকা জুড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল গঠিত। এ তিনটি জেলার মোট আয়তন ১৩ হাজার ২৯৫ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ১৫ লাখ ৮৭ হাজার জন। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রায় সব ক্ষেত্রে এখানকার মানুষ সমতলের তুলনায় অনগ্রসর এবং পশ্চাৎপদ। এ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নীচে হওয়ায় অধিকাংশ লোক নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা থেকে বঞ্চিত এবং স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থাও আশানুরুপ নয়।

এছাড়াও দীর্ঘ দিনের বিদ্যমান ভূমি সমস্যা, বিনিয়োগের সমস্যা, আঞ্চলিক রাজনৈতিক সমস্যা ও সর্বোপরি দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা এ অঞ্চলের কাঙ্খিত অগ্রগতির প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের অনগ্রসরতার বিষয়টি নিয়ে এখানকার বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের অভিপ্রায়ে পার্বত্য অঞ্চলকে বাংলাদেশের অপরাপর এলাকার উন্নয়নের সমান্তরালে নিয়ে আসার জন্য সরকার যুগোপযোগী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

এরই ধারাবাহিকতায় এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতোমধ্যেই উন্নতি সাধন করছে। তবে বিপুল পরিমাণ সীমান্ত এলাকা এখনো রয়েছে এই উন্নয়নের ছায়া থেকে বঞ্চিত। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম ও ভারতের সঙ্গে প্রায় ৩৩০ কিলোমিটার এবং পাবর্ত্য চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারের সঙ্গে প্রায় ২১০ কিলোমিটারসহ সর্বমোট ৫৪০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, যেখান থেকে দুস্কৃতিরা অবাধে চোরাচালান, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসাসহ মানব পাচারের মত ধ্বংসাত্বক কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও এই দুর্গম সীমান্ত বরাবর অরক্ষিত যে সব এলাকা রয়েছে সেখানে সন্ত্রাসীরা আস্তানা গেড়ে পুরো দেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ পাচ্ছে। তাই সীমান্ত এলাকায় সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগোষ্ঠী কৃষি কাজ, ফলদ উদ্যান ও জুমচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখানে বড় কোন শিল্প কলকারখানা গড়ে ওঠেনি। পার্বত্য অঞ্চলের অর্থনীতিকে দেশের মূল অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারলে সার্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। এর জন্য প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন এবং নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়াও দেশের অন্যান্য জেলা হতে পণ্য সামগ্রী পার্বত্য জেলায় এনে পাশর্^বর্তী দেশের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করার জন্য সীমান্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হলে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে, শিল্প কারখানা নির্মিত হবে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবার প্রভূত উন্নতি সাধন হবে। সর্বোপরি পর্যটন শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটবে যা দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

পার্বত্য অঞ্চলের ৩১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪টি সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, উখিয়া-আশারতলি-ফুলতলি সড়ক নির্মাণ, সাজেক-শিলাদাহ-বেতলিং সড়ক, সাজেক-দোকানঘাট-থেগামুখ সড়ক এবং থেগামুখ-লইতংপাড়া-থাচ্চি-দুমদুমিয়া-রাজস্থলি সড়ক নির্মাণ করা হবে। সড়কগুলো নির্মাণের মাধ্যমে সব অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশ সাধনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়া এই সড়ক গুলো নির্মাণের ফলে পাবর্ত্য এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আইন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে নিরাপত্তা অভিযান পরিচালনা ও কৃষিজাত পণ্যেও বিপণন ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করবে।

তাই সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ১ হাজার ৮৮০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৬ সালের জুলাই হতে ২০২১ সালের জুনে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের উপর ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়।ওই সভার সিদ্ধান্তে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ৬৯৯ কোটি ৮৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম গুলো হচ্ছে, ৬টি ক্যাম্প নির্মাণ, ১৭টি মটর যান ক্রয়, ২৩টি মেশিনারিজ অন্যান্য ইক্যুইপমেন্ট, ৪৯টি ইঞ্জিনিয়ারিং ইক্যুইপমেন্ট, ২৬টি কম্পিউটার, ৭৪টি অফিস ইক্যুইপমেন্ট, ১১৯টি ল্যাবরেটরী ইক্যুইপমেন্ট এবং ১ হাজার ১০৫টি রেডিও ওয়ারলেস ইক্যুইপমেন্ট ক্রয়সহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেকে/এসআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন