বিজ্ঞাপন

থাই ওয়াইল্ড বোয়ার্সের গল্প!

July 14, 2018 | 12:43 pm

|| আন্তর্জাতিক ডেস্ক ||

বিজ্ঞাপন

বন্ধুর জন্মদিনে শনিবার (২৩ জুন) উত্তর থাইল্যান্ডের চিয়াং রাইয়ের ‘থাম লুয়াং নাং নন’ গুহায় বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হয় ‘ওয়াইল্ড বোয়ার’ নামে এক ফুটবল দলের ১৩ সদস্য। গুহায় আটকে পড়ার ১৭ দিন পর তাদের উদ্ধার করা হয়।

পাহাড়ের পাদদেশে অন্ধকার ও বন্যায় প্লাবিত বিপদসংকুল গুহায় আটকে পড়া কিশোরদের ঘটনাটি পুরো পৃথিবীর মানুষকে বিচলিত করে রাখে বেশ কয়েকদিন। তবে তাদের উদ্ধারের ঘটনাটি বন্ধুত্ব, মানুষের ধের্য ও শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ রক্ষায় এক অনন্য গল্প হয়ে থাকবে।

এই সেই ওয়াইল্ড বোয়ারর্সের গল্প:

বিজ্ঞাপন

পিরাপাত সোমপিয়াংজাইয়ের ১৭ বছরে পদার্পণের দিনটিকে উদযাপনের জন্য ‘স্পঞ্জিবুব স্কোয়ারপ্যান্টস’ কেক ও বাহারি কাগজে মোড়ানো উপহার কিনে এনে রেখেছিল মাই সাই জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী তার পরিবারের সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু দুরন্ত কিশোর পিরাপাত সোমপিয়াংজাই বাসায় না ফিরে ফুটবল অনুশীলন শেষে বন্ধুদের সঙ্গে চলে যায় রোমাঞ্চকর ভ্রমণে। উদ্দেশ্য ‘থাম লুয়াং নাং নন’ গুহার ভেতরে রাতযাপন করে নিজের জন্মদিন উদযাপন করা। গুহা মুখে নিজেদের সাইকেল রেখে ও দেয়ালে দলের নবীন সদস্যদের নাম লিখে ভেতরে ঢুকে পড়ে তারা।

এর আগে, গুহাটিতে ভ্রমণের ব্যাপারে মেসেজিং অ্যাপের গ্রুপ চ্যাটে অপর কয়েকজন জন বন্ধুকে জানায় তারা। সে তথ্যের ভিত্তিতেই তাদের খুঁজতে গুহায় গিয়ে তাদের রেখে যাওয়া সাইকেল, জুতাসহ অন্যান্য সামগ্রী দেখতে পাওয়া যায়।

বিজ্ঞাপন

গুহার অনেকটা ভেতরে গিয়ে পানির উপস্থিতি দেখতে পেয়ে কিশোরেরা বেরিয়ে আসার চিন্তা করে। কিন্তু ফেরার পথে তারা এসে দেখে পুরো পথটিই পানিতে ডুবে গেছে। কোনও উপায়ান্তর না পেয়ে ভয়ে তারা আরও ভেতরের দিকে চলে যেতে থাকে। এসময় গুহামুখ থেকে ৪ কিলোমিটার ভেতরের ‘পাতায়া বিচ’ নামে পরিচিত জায়গায় একটি শুকনো পাথরের কার্নিশে আশ্রয় নেয় তারা।

পুরোপুরি অন্ধকার গুহায় আটকে যাওয়ার পর তারা সময়ের হিসেব ভুলে যায়। তাদের ঘিরে ধরে অজানা আশঙ্কা ও তীব্র আতঙ্ক। কিন্তু বেঁচে থাকার ব্যাপারে তারা ছিল অবিচল। এ লক্ষ্যে আশ্রয় ও নিজেদের গরম রাখার জন্য পাথর দিয়ে তারা সেখানে ৫ মিটারের মতো গর্ত তৈরি করে। কোচ এক্কাপোল জানথাওং তাদের ধ্যান করতে শেখায়, যাতে তারা শান্ত থাকে ও কম অক্সিজেন এবং খাবার ছাড়াও বেঁচে থাকার শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে পারে।

অপরদিকে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তাদের সন্ধানে নামে থাই সরকার। গুহামুখে কিশোরদের সাইকেলসহ অন্যান্য সামগ্রী ও তাদের পায়ের ছাপ দেখে সন্দেহ করা হয় যে তারা সেখানেই রয়েছে। এরপরই থাই নেভি সিলের ডুবুরিরা গুহার ভেতরে প্রবহমান পানি পেরিয়ে আরও ভেতরে সন্ধান চালাতে থাকে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় বিদেশি ডুবুরি ও বিশেষজ্ঞরাও।

আটকে পড়ার নয় দিন পর সোমবার (২ জুলাই) রাতে ব্রিটিশ ডুবুরি রিচার্ড স্ট্যানটন ও জন ভলানথেন তাদের তাদের খুঁজে পান। এর পর তাদের জন্য খাবার, পানি ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ব্যাপারটি যে কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল তা দেখিয়ে গেছেন সামান গুনান (৩৮) নামে একজন সাবেক থাই নেভি সিল সদস্য। কিশোরদের জন্য অক্সিজেন ট্যাংক পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসার সময় বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) দিবাগত রাত ২টার দিকে অক্সিজেন স্বল্পতায় তার মৃত্যু হয়।

এরপর শুক্রবার (৬ জুলাই) ব্রিটিশ ডুবুরিদের হাতে তুলে দেয়া চিঠিতে ভালোবাসা ও ফিরে আসার আশ্বাসের সঙ্গে নানান আবদার জানায় বালকেরা।। বাবা-মায়েদের উদ্দেশ্যে তারা লিখে, ‘চিন্তা করো না। আমরা সবাই ভালো আছি।’

গুহায় আটকে পড়ার ১৭ দিন পর স্মরণকালের সবচেয়ে বড় উদ্ধার অভিযান চালিয়ে প্রথম দিন রোববার (৮ জুলাই) চারজন এবং সোমবার (৯ জুলাই) অপর চারজনকে বের করে আনেন ডুবুরিরা। অভিযানের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার (১০ জুলাই) বাকি ৫ জনকেও বের করে আনতে সক্ষম হন তারা।

অবশেষে দেখা মেলে সেইসব থাই কিশোর ফুটবলারদের। শ্বাসরুদ্ধর উদ্ধার অভিযানের দুই দিন পর বুধবার (১১ জুলাই) তাদের ভিডিও প্রকাশ করে থাইল্যান্ডের জনসংযোগ বিভাগ।

তাতে দেখা যায়, চিয়াং রাই প্রাচানুক্রহ হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কক্ষে পাশাপাশি বিছানায় বসে বা শুয়ে আছে তারা। তাদের পরনে হাসপাতালের গাউন এবং মুখে মাস্ক। এ সময় ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোরদের কয়েকজন ক্যামেরার দিকে বিজয়সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখায়।

সারাবাংলা/এএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন