বিজ্ঞাপন

দুরন্ত সূচনা স্বাগতিকদের

June 15, 2018 | 12:04 am

আবদুল আজীজ, সাবেক ফিফা রেফারী
২০০৬ সাল থেকে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ স্বাগতিকরা খেলে আসছে। এদের মধ্যে দুর্বলতম স্বাগতিক দল ছিল ২০১০ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা। একমাত্র তারাই ড্র দিয়ে শুরু করেছিল, এছাড়া স্বাগতিকদের দুরন্ত সূচনা দিয়েই খেলা শুরু হত এবং সেগুলার মধ্যে সব থেকে দুর্দান্ত উদ্বোধনী খেলায় স্বাগতিকদের সূচনা ছিল এবারেরটা।
খেলার শুরুতে বলা হয়েছিল র‍্যাংকিং এর দিক দিয়ে দুর্বলতম দুই দলের খেলা। দুই দলের র‍্যাংকিং এরও খুব বেশি পার্থক্য নেই। এমনকি খেলা শুরুর বাঁশি বাজানোর পর সৌদি আরব খেলা গোছানো শুরু করেছিল। ছোট ছোট পাস দিয়ে নিজেদের মধ্যে বল রাখার প্রচেষ্টা দিয়ে শুরু। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় যখন লম্বা পাস দেওয়া শুরু হয়। রুশদের দৈহিক গঠন আর  কৌশলের  কাছে এখানেই ধরা খেতে শুরু করে সৌদিরা।
রুশরা ১২ মিনিটে প্রথম গোল পায় গাজিন্সকির হেডের মাধ্যমে। এই গোলের জন্য দায়ী সৌদি ডিফেন্স। দেখা যায় যে সেখানে দুটি খেলোয়াড় আনমার্ক অবস্থায় আছে। এমনকি ক্রস করার সময় তারা হাত উঁচিয়ে নিজেদের অবস্থানও জানায়। নিখুঁত ক্রসে ঠাণ্ডায় মাথায় বল জালে জড়ান গাজিন্সকি।
প্রথম গোল খাওয়ার পর থেকেই সৌদি আরব নিজেদের হারিয়ে ফেলে। তাদের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল লম্বা পাসের মাধ্যমে খেলার নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করা। দৈহিক সুবিধা নিয়ে রুশরা লম্বা বলের দখল সহজেই নিয়ে নেয়।
৪৩ মিনিটে চেরিশেভের করা গোলটি ছিল চমৎকার দলগত সমন্বয়। চেরিশেভও চমৎকার ভাবে বলটি দখলে এনে দুইজন ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে বল জালে ঢুকিয়ে দেন, আরও একটি গোল! এভাবেই রাশিয়া বিরতিতে যায় ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত প্রথমে গোল খেয়ে সেই ম্যাচ জিততে পারেনি সৌদি আরব। এছাড়া বিশ্বকাপের প্রথম খেলায় (উদ্বোধন) শুরুতে ২ গোল খেয়ে এখন পর্যন্ত কোনো দল জিতেনি।  কাজেই কিছু করতে হলে সৌদি আরবকে করতে হতো, বিশেষ কিছু। সাধ্যের মধ্যে কিছু করার চেষ্টা করলেও ফিনিশিং মসৃণ ছিল না তাদের। একটা ক্রস স্ট্রাইকার ঠিক মতো পা লাগাতে পারেননি, আর স্ট্রাইকারদের এন্টিসিপেশন ক্ষমতা কম ছিল।  প্লে-মেকারের সাথে স্ট্রাইকারের সমন্বয়ের অভাব দেখা যায়। তাই সেরকম ভীতি জাগানো কোনো আক্রমণই সৌদিদের থেকে পাওয়া যায়নি।
রুশদের আধিপত্য বজায় রেখেই ৭১ মিনিটে হেড দিয়ে গোল করেন যুবা। যে ক্রস থেকে হেড করা হয় ক্রসটাও সুন্দর ছিল আর যুবাকে ডিফেন্ডার মার্ক করতে পারলে বেশি লম্বা হওয়ায় হেডে সুবিধা পায় যুবা।
৮৮ মিনিটে রাশিয়ার গোলোভিন হলুদ কার্ড পান, কোনো কারণ ছিল না যদিও, একটি দল ৩ গোলে এগিয়ে থাকা অবস্থায় তাদের প্লেয়ারের তেমন কোন ফাউলের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। হলুদ কার্ডের জবাবে অবশ্য গোলোভিন ৫ম গোলটিও করে ফেলেন চমৎকার এক ফ্রিকিক থেকে। ‘ব্যানানা’ শটটি ছিল একদম যেরকম হওয়া দরকার ছিল ঠিক সেরকম, নিখুঁত মাপা শট। মন ভরে যায় এরকম গোল দেখলে। গোলের সময় হচ্ছে ৯৫ মিনিট অর্থাৎ ইনজুরি টাইমে। মজার ব্যাপার হচ্ছে ৪র্থ গোলটিও ছিল ইনজুরি টাইমে। চমৎকার এক শট, দ্রুত গতির শট, যে কোন গোলকিপারের পক্ষেই এটা ঠেকানো প্রায় অসম্ভব।
খেলায় রেফারীর মান ছিল খুব ভালো। অবশ্য তেমন চ্যালেঞ্জিং কিছু আজকের খেলাতে ছিল না। মজার ব্যাপার হচ্ছে বল পজিশন সৌদি আরবের বল পজিশন বেশি ছিল। অর্থাৎ বলের দখল তারা রেখেছিল, কিন্তু সেই বলগুলিই লম্বা পাস দেওয়ার সময় খেই হারিয়ে ফেলে, আর তাদের আক্রমণ ভাগের কোনো পরিকল্পনা চোখে পড়েনি, তাই পোস্টে তেমন কোন শটও নিতে পারেনি। রাশিয়া পোস্টে শট নিয়েছে ৭ টা, গোলকিপার ঠেকাতে পেরেছে ২ টা, বাকি ৫ টা পারলে তো আর ৫ গোলে হারা লাগে না, তবে সেগুলা কোনটিই শুধু গোলকিপারের দোষ না।
শ্রুতিলিখন- রাসয়াত রহমান জিকো

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন