বিজ্ঞাপন

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাড়ছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন সুবিধা

June 21, 2018 | 9:10 am

।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বিদ্যুৎ সঞ্চালন সুবিধা বাড়ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আট জেলার ২২ উপজেলায়। এ জন্য ৩ হাজার ২৭৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ হাজার ২১৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বরিশাল এলাকার পাশাপাশি বৃহত্তম কৃষি উৎপাদন এলাকা হিসেবে পরিচিত রাজশাহী এলাকা এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকার মানুষের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর এরই মধ্যে প্রক্রিয়াকরণ শেষ করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আজকের (২১ জুন) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে প্রকল্পটি। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের জুনে মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি)।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সবার কাছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যুৎ সঞ্চালন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পিজিসিবি একটি শক্তিশালী গ্রিড নেটওয়ার্ক নির্মাণের জন্য দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় ট্রান্সমিশন গ্রিড সম্প্রসারণ প্রকল্প শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বরিশাল এলাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের বৃহত্তম কৃষি উৎপাদন এলাকা হিসেবে পরিচিত রাজশাহী এলাকা এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকার মানুষের ক্রমবর্ধমান আবাসিক ও বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করা।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নিয়ামতপুর বাংলাদেশের অন্যতম কৃষি উৎপাদন এলাকা। এই এলাকার মানুষ সেচের জন্য গভীর নলকূপের ওপর নির্ভরশীল। ফলে সেচকালীন প্রচুর বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজন হয়। এই এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন না থাকায় দূরবর্তী বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে ১৩২ কেভি ভোল্টেজ লেভেলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হয়। দীর্ঘ ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, সেচকালীন সময়ে বিদ্যুতের প্রচুর চাহিদা এবং রিঅ্যাক্টিভ পাওয়ারের স্বল্পতার কারণে লো-ভোল্টেজজনিত সেচ পাম্পসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রিক্যাল ইকুইপমেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রকল্পের দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকাগুলো হলো— বরিশাল, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার পর এই এলাকাগুলোতে শিল্প-বাণিজ্যেও ব্যাপক উন্নয়ন আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বরিশাল এলাকায় তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। ফলে কয়েক বছরের মধ্যে প্রকল্পের অধীন দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকাগুলোকে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়বে। এছাড়াও পায়রা ও ভোলা এলাকায় নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে ইভাকুয়েশনের জন্য বিকল্প সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণ করা প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমগুলো হচ্ছে— ১০৪ কিলোমিটার বগুড়া-রহনপুর ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইন, ১১ কিলোমিটার বগুড়া-বড়পুকুড়িয়া ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইন থেকে বগুড়া উপকেন্দ্রে লাইন ইন লাইন আউট, ১২৬ কিলোমিটার বরিশাল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইন, ২৬ কিলোমিটার চাঁপাইনবাবগঞ্জ রহনপুর, ১৩২ কেভি ডাবল সার্কিট লাইন, ১ কিলোমিটার নিয়ামতপুর-রহনপুর ১৩২ কেভি ডাবল সার্কিট লাইন হতে রহনপুর উপকেন্দ্রে লাইন ইন লাইন আউট এবং বগুড়া ৪০০/২৩০ কেভি আউটডোর জিআইএস উপকেন্দ্রে বিদ্যুৎ লাইন দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বে থাকা পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস সারাবাংলা’কে বলেন, প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বরিশাল এবং কৃষি উৎপাদনে দেশের অন্যতম শীর্ষ এলাকা রাজশাহী ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।

এই প্রকল্পের আওতায় যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন দেওয়া সম্ভব হবে, সেগুলো হলো— ফরিদপুর জেলার ফরিদপুর সদর, নগরকান্দা, ভাঙ্গা উপজেলা; গোপালগঞ্জ জেলার মাকসুদপর উপজেলা; মাদারীপুর জেলার মাদারীপুর সদর, রাজৈর, কালকিনী উপজেলা; বরিশাল জেলার গৌরনদী, বাবুগঞ্জ, উজিরপুর, বরিশাল সদর উপজেলা; চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমোস্তাপুর, নাচোল, নবাবগঞ্জ সদর উপজেলা; নওগাঁ জেলার নওগাঁ সদর, মান্দা, নিয়ামতপুর উপজেলা; রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলা এবং বগুড়া জেলার কাহালু, বগুড়া সদর, নন্দীগ্রাম ও আদমদিঘী উপজেলা।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন