বিজ্ঞাপন

দেশে কেমন ছিল রেডিও যুগের বিশ্বকাপ?

June 20, 2018 | 9:12 pm

জাহিদ-ই-হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রঙিন পর্দা। প্রযুক্তির ছোঁয়া। বিশ্বকাপকে আরও রঙ দিতে কোনও কিছুরই কমতি নেই। কিন্তু একটাবার ভাবুন তো- টেলিভিশন যুগের আগে ফুটবল সমর্থকরা কীভাবে বিশ্বকাপ উন্মাদনায় মাততেন। গভীর রাতে জটলা হয়ে শুধু ধারাভাষ্য শুনেই মেতে উঠতেন! কাউকে না দেখেই দল আর প্রিয় ফুটবলারের আলোচনায় মেতে উঠতেন!

বলছি টেলিভিশন যুগের আগে দেশের রেডিও ফুটবল প্রেমিদের কথা। এক বিশ্বকাপের ম্যাচ শোনার জন্য দলবল নিয়ে প্রস্তুতির কথা শুনবো সেই সোনালী ‍যুগের ফুটবল ভক্তদের কাছ থেকে। সেই সময়ের উন্মাদনার কথা শুনবো তেমনই তিনজন শ্রোতার কাছ থেকে।পঞ্চগড়ের ইকরামুল হক পুতুল নামে এক ফুটবল ভক্ত জানালেন, ‘দেশের টেলিভিশন এসেছে অনেক পরে। আশির দশকে রঙিন টিভি আসলেও ম্যাচ দেখার সুযোগ ছিল না গ্রাম পর্যায়ে। প্রান্তিক পর্যায়ে টিভি পৌঁছেছে অনেক পরে। তাই টেলিভিশনে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখার সুযোগ ছিল না। তাই রেডিওই ভরসা ছিল। ধারাভাষ্যে বিশ্বকাপের ম্যাচ শুনতে হতো। এ এক অন্য উত্তেজনা।’

‘মনে আছে তখন ১৯৭৪ সাল। স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম বিশ্বকাপ। আমরা সেই উপলক্ষে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে একসঙ্গে বসে যেতাম রেডিওর চারপাশে। ফুটবলারদের নিয়ে পেপারে সংবাদ দেখতাম। আর কল্পনা করতাম। কেমন দেখতে সেটা প্রথমে বুঝতাম না। নিজেও ফুটবলার ছিলাম বলে উন্মাদনাটা আরও বেশি ছিল।’ যোগ করেন পুতুল।

বিজ্ঞাপন

শুধু তাই নয়। বিশ্বকাপ নিয়ে মজার মজার কাণ্ড ঘটতো সেইসময়। সেই গল্প শুনিয়েছেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আমবাড়ী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আফসার আলী খান, ‘আমরা তখন রেডিওতে শুনতাম। গ্রাম এলাকায় টিভি ছিল না। টিভি সম্পর্কে ধারণাও ছিল না। আমরা ১৯৮২ সাল থেকে শুনছি বিশ্বকাপ। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ শুনেছি। তখন আমরা আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল-ইংল্যান্ড-জার্মানির সমর্থন করতাম। গোল হলে দারুণ মজা করতাম। দলগুলোর নাম বললে আমরা লাফ দিয়ে উঠতাম। বেশির ভাগ ম্যাচ রাতের দিকে হতো। আমরা জটলা হয়ে রেডিওর চারদিকে বসে পড়তাম।’

পেলের খেলা না শুনলেও ১৯৮২ সালের ম্যারাডোনা ও ৮৬’র আর্জেন্টিনার শিরোপা অর্জন শুনেছেন এই কলেজ প্রভাষক, ‘৮৬’তে ম্যারাডোনার ঐ খেলাটা আমরা উপভোগ করতাম রেডিওর মাধ্যমে। ধারাভাষ্যে ম্যারাডোনার নাম নিলেই আমরাও চিৎকার করতাম।’

রেডিও যুগের ঠিক পরপরই সেই প্রিয় ফুটবলারদের খেলা দেখার উদ্দীপনা বেড়ে গেলো সাদাকালো টেলিভিশন আসার পর। একটা ম্যাচ দেখার জন্য ১০-১৫ কিলো পাড়ি দিতেন পায়ে হেঁটেই। ম্যাচ দেখার অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন আফসার আলী, ‘সবার দ্বারে দ্বারে টিভি ছিল না। আমরা পাঁচ-দশ কিলো হেঁটে যেতাম খেলা দেখার জন্য। আবার হেঁটে আসতাম। পুরো থানায় হাতে গোনা টিভি ছিল। টিভি দেখার জন্য ভিড় করতাম।’

বিজ্ঞাপন

‘আমরা টিভিতে প্রথম নব্বই বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখি। বগুড়ার ইসলামিক স্টাডিজ নামে একটা সংগঠন আছে, ওইখানে সাদা-কালো টিভিতে খেলা দেখতাম। তখন বুঝতে পারতাম। এই তাহলে ম্যারাডোনার খেলা। রেডিওর প্রতি উৎসাহটা কমে গেল। কারণ, প্লেয়ারটা কেমন, দেখতে কেমন এগুলো টিভিতে প্রথম দেখতে পাই।’ যোগ করেন তিনি।

তবে, রেডিওতে বিশ্বকাপ ম্যাচ শোনার আনন্দ এখনও মিস করেন তারা। একই উপজেলার ৮ নং সাইতাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজাহান সরকার জানালেন সেই কথা, ‘রেডিওতে সারারাত জেগে যে মজাটা পেয়েছি সেটা আর পাই না এখন। টিভির দিকে ‍ঝুঁকে গেছে সবাই। সবই দেখা যাচ্ছে এই টিভি স্ক্রিনে। তখন খেলাটা শুনে অনুভব করতাম। ৮৬ সালের খেলাটা এখনও মনে আছে। তখন তরুণ ছিলাম।’

সারাবাংলা/জেএইচ

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন