বিজ্ঞাপন

নতুন বছরের মিশন সাইবার অপরাধ দমন

January 3, 2019 | 9:07 pm

।। জামশেদ নাজিম, অতিথি সংবাদদাতা।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নতুন বছরের মিশন সাইবার অপরাধ দমন। গত এক দশকের হুমকি জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে এলেও সাইবার অপরাধের কাছে অসহায় পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

অপরাধ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত এক দশকে প্রধান অপরাধ ছিল জঙ্গিবাদ ও মাদকদ্রব্য। এসব অপরাধ দমনে পুলিশের তৎপরতায়, ছিনতাই, খুন, চাঁদাবাজিসহ নিয়মিত অপরাধ প্রশংসিতভাবে কমে আসছে। তবে বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়াসহ সামাজিক অপরাধ বেড়েছে কয়েকগুণ। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মোবাইল ফোনকেন্দ্রিক অপরাধ বেড়েই চলছে।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালের শেষ দিকে এসে ইয়াবা সেবন ও বিক্রি বন্ধনের অভিযানে ‘ক্রসফায়ারে’ মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িদের নিহত হওয়ার খবরে অনেকই এই পেশা থেকে সরে আসছেন। তবে এই সময়ের মধ্যে সাইবার অপরাধ বেড়েছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশি ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে অপরাধের ধরন বদলাচ্ছে। প্রযুক্তিনির্ভর এ ধরনের চতুর-ধূর্ত অপরাধীদের মোকাবিলায় পুলিশ কতটা প্রস্তুত, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্বরত কর্মকর্তারাও বলছেন, আগামীতে সাইবার অপরাধীদের মোকাবিলায় প্রযুক্তিনির্ভর পুলিশিং ব্যবস্থা এগিয়ে নেওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের মতে, দেশে সাইবার অপরাধের প্রধান ক্ষেত্র হয়ে উঠছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারী। প্রতিকারের উপায় নিয়ে স্বচ্ছ ধারণার অভাব, লোকলজ্জা ও ভয়ভীতির কারণে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিসংখ্যান বলছে, আইসিটি আইন সংশোধন হওয়ার পরে ২০১৩ সালে ২৫টি, ২০১৪ সালে ৬৫টি, ২০১৫ সালে ৬৫টি, ২০১৬ সালে ১৫ টি, ২০১৭ সালে ৫০টি ও ২০১৮ সালে ৬২টির মতো আইসিটি আইনে মামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪২টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তদন্তে বেশিরভাগ অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এদিকে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় ২০১৮ সালে ৪০টির মতো মামলা দায়ের হয়েছে। অনেক মামলার প্রাথমিক অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালতে অভিযোগপত্রও দাখিল করা হয়েছে। বাকিগুলোর তদন্ত কাজ এগিয়ে চলছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সারাদেশের অপরাধ পর্যালোচনা করে তিনটি অপরাধকে প্রধান অপরাধ ও দেশের জন্য হুমকি হিসাবে চিহ্নিত করেছি। এগুলো সরকারকেও জানানো হয়েছে। মাদক ও জঙ্গি দমনের জন্য সরকার ও প্রশাসন কাজ করছে। অনেকটা সফলতাও দেখিয়েছে। তবে সাইবার অপরাধ দমনের জন্য নতুন বছের মিশন হিসেবে দেখতে হবে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশ এখন ডিজিটাল হতে চলছে। একটি দেশ উন্নয়নের পাশাপাশি আধুনিক হয়। একসময় আমরা টাকা পকেটে নিয়ে ঘুরতাম। এখন ক্রেডিট বা ডেভিড কার্ড ব্যবহার করি। একইসঙ্গে বিকাশের মতো মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করি। এসব ক্ষেত্রে অপরাধীরাও তাদের অপরাধের ধরন পাল্টাবে।’

বিজ্ঞাপন

ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘বিশেষ করে, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, গুগল ও স্কাইপে ভুয়া আইডি খোলাসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল, ব্লগে মিথ্যা মানহানিকর তথ্য প্রচার, অশ্নীল ছবি, ভিডিও ও ম্যাসেজ পাঠিয়ে উত্ত্যক্ত করছে সাইবার অপরাধীরা।’ এসব বন্ধে সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের এখনই পরিকল্পনা করতে হবে হলেও মনে করেন তিনি।

এসব বিষয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (অ্যাডমিন ও অপারেশন) মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন সময় অপরাধের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। জঙ্গিবাদ ও মাদক নিয়ন্ত্রণের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে কাজ করছে পুলিশ।’ নতুন বছরের মিশন হিসেবে সাইবার অপরাধকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সারাবাংলা/এমএনএইচ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন