বিজ্ঞাপন

‘নতুন ব্যাংক অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা ডেকে আনতে পারে’

February 18, 2019 | 11:40 pm

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দেশে নতুন কোনো ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, ভালোভাবে চলতে না পারলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হলেও তা অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা ডেকে আনবে। এতে করে ব্যাংকিং খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, নতুন তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কোনো যুক্তি নেই। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এই অনুমোদনে ব্যাংকিং খাতে মঙ্গলজনক কোনো প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই।

তিনি বলেন, বিদ্যমান ব্যাংকগুলোই ঋণ খেলাপিসহ বিভিন্ন কারণে ঠিকমতো চলতে পারছে না। এই অবস্থায় নতুন ব্যাংকের অনুমোদন এই খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। নতুন ব্যাংক না দিয়ে বরং পুরনো ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনা দরকার ছিল। বিদায়ী অর্থমন্ত্রী কয়েকটি ব্যাংককে একীভূত করার কথা বলেছিলেন। অথচ বর্তমানে তার উল্টোটা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- তিন ব্যাংকের অনুমোদন কীভাবে, ‘জানেন না’ অর্থমন্ত্রী

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেউদ্দিন আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, নতুন তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার আগে পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল। বিশেষ করে সরকারের টানা তিন মেয়াদের প্রথম মেয়াদ দেওয়া ৯টি নতুন ব্যাংকের বেশিরভাগই কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি। তারা জনগণের কোনো আস্থাও অর্জন করতে পারেনি। উল্টো ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনায় নানা ক্রটি দেখা গেছে। এই অবস্থায় নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক বিবেচনা ছাড়া যদি রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্যাংক দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে এসব ব্যাংক পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে। আগের ব্যাংকগুলো যেভাবে চলছে এগুলোও হয়তো সেভাবেই চলবে। এতে কোনো লাভ হবে না।

বিজ্ঞাপন

সালেহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এতগুলো ব্যাংক সুপারভিশন ও মনিটরিং করতে পারা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আবু আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, দেশের সিভিল সোসাইটি, ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ— সবাই নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে আগেই বিরোধিতা করেছে। এরপরও রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক অনুমোদন দিলে কী করার আছে?

তিনি বলেন, এসব ব্যাংক চালানো যে কত কষ্টকর, যারা ব্যাংক নিয়েছেন তারা বুঝবেন। দেশে ব্যাংকের অবস্থা ভালো না। অনেক ব্যাংককে সরকার টাকা দিয়ে রক্ষা করছে।

আবু আহমেদ বলেন, নতুন ব্যাংককে অনেক বেশি সুদের হার দিয়ে আমানত সংগ্রহ করতে হবে। কারণ, মানুষ এখন অনেক সচেতন। ফলে এই সব ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে। এতে করে ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। যেটা হয়েছিল ফারমার্স ব্যাংকের ক্ষেত্রে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, অনেক ব্যাংক অনিয়ম করলে সরকার পাবলিকের কথা চিন্তা করে দায়টা কাঁধে নেয়। এতে করে যারা ব্যাংক লুট করে, তারা বেঁচে যায়।

উল্লেখ্য, রোববার বেসরকারি খাতে নতুন করে আরও তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়।

তিন ব্যাংকের মধ্যে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রস্তাবিত চেয়ারম্যান হিসাবে রয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি জসীমউদ্দিন। সিটিজেন ব্যাংকের প্রস্তাবিত চেয়ারম্যান আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হক। আর পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা এম এ কাশেমের। এর আগে, গত বছরের ২৯ অক্টোবর পুলিশের কমিউনিটি ব্যাংককে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

নতুন অনুমোদন পাওয়া তিন ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশে মোট তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬২টিতে। এর মধ্যে ৪৪টি বেসরকারি খাতের, ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত ও ৯টি বিদেশি মালিকানার ব্যাংক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। টানা তিন মেয়াদ ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সালে ৯টি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়। পরে ‘সীমান্ত ব্যাংক’ নামের আরেকটি ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত জুলাই মাসে বিশেষায়িত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে বাণিজ্যিক লেনদেনের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে পদ্মাসহ (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) বেশ কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা খুবই নাজুক।

সারাবাংলা/জিএস/জেএএম/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন