বিজ্ঞাপন

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নতুন ভবন পাচ্ছে আওয়ামী লীগ

June 22, 2018 | 7:45 pm

।। নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: টানা মেয়াদে হ্যাটট্রিক জয়ের মিশনের আগে দৃষ্টিনন্দন ও ১০ তলাবিশিষ্ট নতুন ভবন উপহার পাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। শনিবার (২৩ জুন) ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ভবনটির উদ্বোধন করবেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ৩৭ বছরের পুরোনা ঠিকানায় ১০ তলা দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক নতুন ভবনে উঠতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে এক সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় দলটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলটিকে বেশ কয়েকবার কার্যালয় পরিবর্তন করতে হয়েছে। ১৫০ মোগলটুলী আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের আঁতুড়ঘর হলেও কারকুনবাড়ী লেনের একটি ভাড়া বাড়ি, ১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকায় ৫৬ সিমসন রোড, ১৯৬৪ সালে ৯১ নবাবপুর রোডে, এরপর সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলি থেকে পুরানা পল্টন ও সার্কিট হাউস রোডে ছিল দলটির কার্যালয়।

সর্বশেষ ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সভাপতি হিসেবে হাল ধরলে আওয়ামী লীগের ঠিকানা হয় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। সময়ের সাথে আগামীর ভাবনা তথা আওয়ামী রাজনীতির তৃতীয় প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে ২০১১ সালে নতুন কার্যালয়ের পরিকল্পনা মাথায় নেয় দলটি।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২২ জুন) সকালে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ভবন উদ্বোধনের সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ বিষয়ে সকালে সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় উদ্বোধন নিয়ে উচ্ছ্বাস জানান ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নয়নাভিরাম এই ভবন উদ্বোধনের কর্মসূচি নতুন ব্যঞ্জনা ও তাৎপর্যকে সমৃদ্ধ করবে। বঙ্গবন্ধুকন্যার দৃঢ়তা ও কমিটমেন্টের জন্য আমাদের কেন্দ্রীয় প্রধান ভবন নির্মাণ হয়েছে। আমরা দলীয় তহবিলের টাকায় এই কার্যালয় নির্মাণ করেছি। এই কার্যালয়টি আধুনিক ও ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধাসহ নির্মাণ করা হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের জানান, ভবনের ফলক উন্মোচনের পর সেখানে একটি বকুল গাছের চারা রোপণ করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর অফিস ভবনটি পরিদর্শন করবেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ভবনটি শতভাগ রাজউকের নিয়ম মেনে তৈরি। এ ব্যাপারে ভবনটির নির্মাণের তদারকির কাজে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত ইঞ্জিনিয়ার ইমান হোসেন সারাবাংলা’কে বলেন, ‘এটি শতভাগ রাজউকের নিয়ম অনুযায়ী তৈরি করছি। কোথাও কোনো বিন্দুমাত্র ফাঁকফোকড় নেই। বিল্ডিং কোড অনুযায়ী সামনের দিকে রাস্তা থেকে ১০ ফিট এবং পেছনের দিকে ১৭ ফিট জায়গা ছেড়ে মোট জমির ৬৫ শতাংশ ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয়েছে।’

ভবনে নকশা থেকে জানা যায়, ভবনটিতে পার্কিংয়ের জন্য স্বতন্ত্র দু’টি ফ্লোর (তলা) রয়েছে— গ্রাউন্ড ফ্লোর (নিচতলা) ও আন্ডারগ্রাউন্ড। এর মধ্যে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ে যাওয়ার জন্য থাকবে কার লিফট। যেকোনো গাড়ি এসে গ্রাউন্ড ফ্লোরে ঢুকে লিফট দিয়ে নিচে যাবে।

ভবনের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব কোণে হেঁটে ওপরে ওঠার জন্য রয়েছে দু’টি সিঁড়ি। পানি সরবরাহের জন্য ওপর-নিচে থাকছে দু’টি স্থায়ী রিজার্ভড ট্যাংক। ভবনের ছাদে হেলিপ্যাডের ব্যবস্থাও রয়েছে। আধুনিক ভবনটিতে রয়েছে তিনটি লিফট। এর মধ্যে একটি বরাদ্দ থাকবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্য।

নতুন এই কার্যালয়ের অষ্টম ফ্লোরের পুরোটাই বরাদ্দ থাকবে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার জন্য। এই ফ্লোরে লাগানো হয়েছে বুলেট প্রুফ ডাবল গ্লাস।

বিজ্ঞাপন

ভবনের দ্বিতীয় তলার কনফারেন্স রুমে সাড়ে তিনশ জনের বসার ব্যবস্থা থাকবে। আর তৃতীয় তলার কনফারেন্স হলে সিট থাকবে ২৪০ জনের বসার ব্যবস্থা। তিন তলার সামনের অংশটি ‘ওপেন স্কাই টেরাস’, নকশার দিক থেকে এটি অনেকটা বাসার ড্রইংরুম বা পাঁচতারকা হোটেলের আদলেন। এখানে কৃত্রিম বাগানের ফাঁকে ফাঁকে চেয়ার-টেবিল দিয়ে বসার ব্যবস্থা থাকবে।

ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় হবে থাকছে কার্যালয়। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশাপাশি থাকবে সহযোগী ও অন্যান্য সংগঠনের কার্যালয়। ষষ্ঠ তলায় ছোট ছোট একাধিক কনফারেন্স ও মিটিং রুমও রয়েছে। আর সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলায় থাকছে দলীয় নেতাদের রুম। এর মধ্যে দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকদের জন্যও বরাদ্দ থাকছে স্বতন্ত্র রুম। এ ছাড়াও ভবনটিতে ডিজিটাল লাইব্রেরি, সেমিনার রুম ও সাংবাদিক লাউঞ্জ রয়েছে।

ভবনটিতে কার্টেন ওয়াল ও থাই অ্যালুমিনিয়ামের টেম্পারড গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে। এর সামনের দেয়ালের দুই থেকে তিনতলা পর্যন্ত দৃশ্যমান সাইনবোর্ড— এর বামে ঠিক মাঝখানে দলীয় প্রতীক ‘নৌকার’ছবি, ডানে লেখা ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’। আর ডানপাশের নিচে থাকছে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’।

দলের সাইনবোর্ডের নিচে ডান পাশে (পূর্ব দিকে) কনক্রিট দিয়ে বানানো হচ্ছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভী রহমানের ছবি। আর পশ্চিম পাশের দেয়ালে (পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে) লেখা থাকবে দলের চার মূলনীতি। নবম তলা ঘেঁষে লেখার ওপরে থাকবে ‘অসাম্প্রদায়িক’, নিচে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’; ষষ্ঠ তলায় লেখা থাকবে ‘গণতন্ত্র’, পঞ্চম তলায় ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’। একইভাবে পূর্ব দিকের দেয়ালে (পূর্ব-দক্ষিণ কোণে) ওপর থেকে নিচে অক্ষর বিন্যাসে “ভাষা আন্দোলন ’৫২” ও “’৭১ মুক্তিযুদ্ধ” শব্দ দু’টি।

ভবনটির স্ট্রাকচার ডিজাইন ও নির্মাণের কাজ করছে ‘দ্য ডিজাইনারস অ্যান্ড ম্যানেজারস’ নামের একটি বেসরকারি ফার্ম। ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের নিজস্ব ভবন করার সিদ্ধান্ত হয়। এ ধারাবাহিকতায় ১৬ জুলাই ২০১৬ পুরনো ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু হয়। সেপ্টেম্বরে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। গত বছর আওয়ামী লীগের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তিস্থাপন করেন শেখ হাসিনা। ঠিক একবছর পর দলের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উদ্বোধন হবে ভবনটি।

আরও পড়ুন-

৩ সিটি নির্বাচন: নেতা-প্রতিনিধিদের বার্তা দেবেন শেখ হাসিনা

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন