বিজ্ঞাপন

নারীরা কেন তথ্যপ্রযুক্তিতে পিছিয়ে বিষয়ক সেমিনার

November 7, 2018 | 4:46 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: একটা খুব সাধারণ বিচার সারা পৃথিবী জুড়েই প্রচলিত আছে। নারীরা নাকি অংক বোঝে না। প্রযুক্তির দিক থেকেও তারা দুর্বল। শুধু যে প্রযুক্তিগত চাকরি তাই নয়, প্রযুক্তি ব্যবহারেও নারীর পিছিয়ে আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নারীদের প্রযুক্তিতে এই পিছিয়ে পড়া কি নারীদের শারীরিক ত্রুটি না সমস্যাটি সমাজের মানসিকতায়?

এটা নিয়েই গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ ওমেন ইন টেকনলজি (বিডব্লিউআইটি) নামে একটি সংগঠন। তারাও আসলে জানতে চায় নারীরা কেন এখনও পিছিয়ে আছে প্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) থেকে।

শুধু জানার চেষ্টা করেই থেমে নেই তারা। রীতিমত গবেষণা করে বের করেছেন কেন আইসিটি নিয়ে পড়তে আসা মেয়ের সংখ্যাই কম হয় যেখানে পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে মেয়েদের ফলাফল তুলনামূলক ভালো- এই তথ্যগুলো নিয়ে আগামী ৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় আগারগাঁয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে, স্টার্ট আপ বাংলাদেশ অ্যাক্সিলেটরের আয়োজনে ব্রেকিং দ্যা ব্যারিয়ার শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করেছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

সংগঠনটির পরিচালক ড. লাফিফা জামাল, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোবটিক্স ও মেকাট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাজ করার একটা বড় জায়গা যেখানে নারীদের অংশগ্রহণ খুব কম। আমরা আমাদের দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, যে পরিমাণ মেয়ে আইসিটি বিষয় পড়তে আসে বা এই বিষয় নিয়ে উচ্চ শিক্ষা নেয় চাকরিতে তাদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। চাকরিতে নারীদের উন্নতিও কম হয়। এই ক্ষেত্রটায় যে কোনো কারণেই হোক পিছিয়ে আছে। আমরা এই কারণগুলোই খুঁজে বের করে সমাধান করার চেষ্টা করছি।

লাফিফা জামালের কথা শুধু যে বাংলাদেশের জন্য সত্য তা নয়। এই বৈষম্য আছে পশ্চিমা বিশ্বেও এমনকি যেসব দেশে লিঙ্গ বৈষম্য সবচেয়ে কম সেখানেও। তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ায় নারীদের এই পিছিয়ে পড়া যে নারীদের শারীরিক ত্রুটি না বরং এখানে সমাজের মনোভাবও অনেক দায়ী তা এখন বেশ প্রমাণিত। পশ্চিমা বিশ্বে মানুষ ধরেই নেয় তথ্য প্রযুক্তি খুব পুরুষালি বিষয়। আর নারীরা খুব নরম কোমল আর গোলাপি।

বিজ্ঞাপন

এই গোলাপি রাজনীতিতে পরে পশ্চিমা নারীরাও এখন বিশ্বাস করে তারা পারবে না। অথচ কম্পিউটার নামে যে যন্ত্রের সঙ্গে আমরা বেড়ে উঠছি তার প্রথম প্রোগ্রামার আডা লাভলেস ছিলেন একজন নারী। আঠারোশ শতকের যদি এই নারী করে দেখাতে পারেন তবে এখনকার নারীরা কেন নয়? শুধু কি এডা লাভলেস, ১৯৪৪ সালে যে রুম সমান কম্পিউটার বানানো হয়েছিল তার প্রোগ্রামারও ছিলেন একজন নারী, তার নাম গ্রেস হপার। কম্পাইলার নামের প্রোগ্রাম ও তার সূচনা তাঁর হাত দিয়েই হয়েছে। তিনিই বলেছিলেন মেশিন নিরপেক্ষ প্রোগ্রামিং ভাষার কথা।

১৯৭০ সালের ১১ এপ্রিল, পৃথিবীর ইতিহাসের অবিস্মরণীয় এক দিন। সেদিন পৃথিবী থেকে তিনজন মানুষ প্রথমবারের মতো চাঁদের বুকে পা রেখেছিলেন। চাঁদের বুকে পা রাখা তিন ব্যাক্তি নীল আর্মস্ট্রং, বাজ অলড্রিন আর মাইকেল কলিন্স নিরাপদে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে পেরেছিলেন কারণ মার্গারেট হ্যামিল্টন নামে একজন নারী সফলভাবে কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলো তৈরি করতে পেরেছিলেন। প্রোগ্রামগুলো লেখা হয়েছিল তারই নেতৃত্বে।

এত বছর আগেও যখন নারীদের অবস্থান এতটা দৃঢ় ছিল এখন তারা কীভাবে পিছিয়ে পরলো? আর এই পিছিয়ে পরার ধারাবাহিকতা কত ভয়ানক তা দেখে গেছে সম্প্রতি এক ঘটনায়। ২০১৪ সালে পৃথিবী বিখ্যাত অনলাইনে কেনাকাটার সাইট অ্যামাজন একটা বিশেষ ইঞ্জিনিয়ারিং কাজে কর্মী নিয়োগ করতে চেয়েছিল। প্রাথমিক বাছাইয়ের জন্য তারা একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স (এআই) সিস্টেম ব্যবহার করে। যার কাজ ছিল প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত যাচাই করা।

বিজ্ঞাপন

এক পর্যায়ে অ্যামাজন লক্ষ্য করে যে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা লিঙ্গ বৈষম্য করছে। কম্পিউটার প্রোগ্রামের করা বাছাইয়ে নারীরা বাদ হয়ে গেছেন একেবারেই। শুধু তাই নয় প্রোগ্রামটি শব্দকে নারীসুলভ ও পুরুষালি বলে আলাদা করছে। এমনকি মহিলা ক্লাব, মহিলা কলেজ-এ শব্দও যেসব জীবন বৃত্তান্তে আছে তাদের বাদ করে দেয়া হয়েছে প্রাথমিক তালিকা থেকে।

অ্যামাজন এই বিষয়ে বিশদ গবেষণা চালায়, সেই গবেষণা থেকে জানা যায় কম্পিউটার প্রোগ্রামটি কীভাবে প্রার্থী বাছাই করবে সেই ধারণাটি নিয়েছিল অ্যামাজন অতীতে কেমন প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়েছে তার ওপর। যেহেতু আগে নারীরা নিয়োগ পায়নি, সেই তথ্যটাই কাজে লাগিয়েছিল কম্পিউটার প্রোগ্রামটি, হাজার হোক মানুষের তৈরি তো, মানুষের মানসিকতার সংকীর্ণতা কিছু তো থেকে যায় তার মধ্যে!

আমাদের দেশে তথ্য প্রযুক্তিতে নারীদের অবস্থান পশ্চিম থেকে খারাপ বৈ ভালো নয়। এখানে, এমনিতেই নারীদের শিক্ষার সুযোগ কম। সর্বশেষ শ্রম জরিপ থেকে জানা গেছে প্রায় ৬০ শতাংশ নারী দেশের শ্রমশক্তিতে অংশ নেন না, যারা নেন তারাও নানান কারণে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন না। ফলে এ যুগে এসে আডা লাভলেস হয়তো রান্না করে আর গ্রেস হপার বাচ্চা সামলায়, সব কাজ সামলে ক্লান্ত দেহ মনে মার্গারেট হ্যামিল্টন ভাবে সেও কিছু করে দেখাতে পারত জীবনে।

এ যুগের এসব আডা, গ্রেস আর মার্গারেটদের জন্যই বিডব্লিউআইটি’র এ আয়োজন। লাফিফা জামাল বলেন, আমরা শুধু যে মেয়েদের এই ক্ষেত্রে কাজ করার অসুবিধা নিয়ে কথা বলব তাই নয়, আলোচনা এই সেক্টরে নারীদের কাজের সুযোগ নিয়েও।

বিডব্লিউআইটি’র পক্ষ থেকে আইসিটিতে কাজ করা, বা আইসিটিতে কাজ করতে চান এমন সব মহিলাকে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আহ্বান করা হয়েছে। লাফিফা জামাল আশা করেন, আইসিটিতে কাজ করা নারীরা যদি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন তবে এই সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত থাকবেন, আইসিটি মিনিস্ট্রির সেক্রেটারি জুয়েনা আজিজ, আইসিটি ইনোভেশনের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর টিনা জাবীন ও সোনালী ব্যাংকের চিফ টেকনিকাল অফিসার ওমর খন্দকার।

সারাবাংলা/এমএ/জেএএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন