বিজ্ঞাপন

নারীরা নিখুঁত চেনে নীলকণ্ঠী নীল…কেন?

March 31, 2018 | 9:04 pm

।। মাহবুব স্মারক, অতিথি লেখক ।।

বিজ্ঞাপন

কাঁচাবাজার কিংবা জামা জুতা থান কাপড় ক্রয়ে, কন্যা -জায়া -জননীর সহকারি হিসেবে শপিং মলে গেলেন তো মরলেন! কতঘন্টায় দিন, কয় সেকেন্ডে মিনিট, কয় মিনিটে ঘন্টা—সব হিসেব মিলিয়ে নেয়া যায়!

অভিজ্ঞতা বলছে, নারীরা দারুন পটু কেনাকাটা আর বাছাইয়ে। শত সহস্র পণ্যের মধ্য থেকে বাছাই করে ভালোটাই টুপ করে তুলে আনার এক বৈষয়িক ক্ষমতা নারীকে করেছে অতুলনীয়। ভালো জিনিস তাঁর চাইই চাই! খারাপ পণ্য চট করে ধরে ফেলা, বুঝে ফেলা এ এক দারুণ কৌশল বটে।

তবে ভালো পণ্য বাছাইয়ে পুরুষ যে চৌকস নয় সেটা অবশ্য বলা যায় না। পছন্দ কিংবা বাছাইয়ে পুরুষের দারুণ বৈশিষ্ট তার ক্ষিপ্রতায়। পুরুষের চোখ টার্গেট করে দূর থেকে! দোকানে ঢোকা মাত্র যে কোন বয়েসি পুরুষ নিজ পছন্দের পোষাক টপাটপ তুলে নিতে পারেন। কাঁচা বাজারেও দরদাম কম হয়, ব্যাগে পুরে নিতে পারলেই হলো!

বিজ্ঞাপন

কেন এমনটা? পছন্দ করায়, বাছাইয়ে নারী পুরুষের এমন বৈশিষ্ট্য কী ঐতিহাসিক? নাকি এরও পেছনে আছে বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি?

বিজ্ঞান বলে নারী পুরুষের এমন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের আছে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি, যার মূলে রয়েছে জিন। জিন মানুষের বংশগতির আণবিক একক। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই যে মানুষের বেড়ে ওঠা, পরিবর্তন হওয়া এর সব তথ্য ধারণ করে প্রাণীর কোষকে নিয়ন্ত্রণে করে এই জিন! এর মাধ্যমেই প্রজাতির গুণ পিতা থেকে পুত্রে, নাতিতে, পুতিতে কিংবা তারো পর বংশ পরম্পরায় অব্যাহত থাকে।

এবার ফিরে যাই লক্ষ বছর আগে। কল্পনা করা যায় কেমন ছিলো পৃথিবী? কী করতো তখন মানুষ? বিজ্ঞান আর গবেষণা প্রমাণ দেয়, মানুষ ছিলো গুহায়, বা বনঘেঁষা উন্মুক্ত প্রান্তরে। সভ্য জগতের মতো না হলেও, দেখা যায় সমাজ গঠনের প্রাথমিক রূপ। সেই সমাজে নারী পুরুষের কর্মে বিভাজন ছিলো। নারী পুরুষ এক ধরনের কাজ করতো না। পুরুষের কাজ ছিলো মূলত শিকার করা। বনে বাঁদাড়ে ঘুরে বেড়ানো, ফল, পশু শিকারে সন্ধান করা। হাতে বর্শা- বল্লম আর পাথুরে অস্ত্র। ঝোপঝাড় পেরিয়ে, সাপখোপের ভীতি এড়িয়ে, জীবনটা হাতের মুঠোয় নিয়ে চলতো সেই শিকার। যে শিকারের অপেক্ষায় থাকতো নারী, শিশু বৃদ্ধারা! যা খেয়েই মূলত বেঁচে থাকা!

বিজ্ঞাপন

পুরুষকে বর্শা বল্লম সব সময় প্রস্তুত রাখতে হতো। শিকার দেখা মাত্র দেরি নয়। মেরে দিতে হতো, মুহূর্তে। এফোঁড় ওফোঁড় করে ফেলতে হতো। কারণ বিকল্প দুটি। হয় শিকারের পেটে যাও, নয়তো শিকার কাঁধে নিয়ে গুহায় ফেরো।

লক্ষ লক্ষ বছর এই তো ছিলো পুরুষের জীবনাচার। যা সে বয়ে নিয়ে চলছে। যা প্রতিফলন পাওয়া যায় এখনো। পুরুষের বাজার সদাই, শপিং, পছন্দ করার ক্ষেত্রেও। চট করে এক মূহূর্তে! অত বাছবিচার নেই, হুটহাট সাহসী!

আর নারীরা! গুহায় থাকা, সন্তান লালন পালন, বৃদ্ধদের আগলে রাখা। এসবের বাইরে মানব জাতির ইতিহাসে দারুণ এক জিনিসের উদ্ভব নারীদের হাত ধরে। আর তা হলো কৃষিকাজ। বন থেকে ফলের বীজের উদ্গম তার বেড়ে ওঠা চোখ এড়ায়নি নারীদের। মিশর, মেসোপটেমিয়া, গঙ্গা অববাহিকা সব সভ্যতা বিকাশের পটে একই চিত্র। সেই কৃষির গুরুত্বপূর্ণ কাজ বীজ সংগ্রহ আর বাছাই। অবসর সময়ে ধ্যানযোগে চলতো সেই কাজ। হাজারো ক্ষুদ্র বীজ থেকে খারাপ, অনুৎপাদনশীল বীজ ফেলে, সবচেয়ে ভালোটা আলাদা করা।

যা আজো দেখা যায় গ্রামীণ জনপদে। বিকেলে অবসরে কুলায় বীজ নিয়ে বাছতে শুরু করেন গ্রামীণ নারীরা। লক্ষ বছরে নারীরা কৃষিকাজের সেই প্রাণভোমরাটা আজো শক্ত হাতে আগলে রেখেছেন। বাঁচিয়ে রেখেছেন কৃষি আর উৎপাদন ভিত্তিক এ মানব সভ্যতা।

বিজ্ঞাপন

নারীদের কেনাকাটায় দীর্ঘ বাছবাছাইয়ে খুঁতখুঁতে স্বভাবে ত্যক্ত বিরক্ত যেসব পুরুষ, তাদের জন্য সুখবর নেই। আগামী লক্ষ বছরেও নারীর এ স্বভারের পরিবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই এক্ষেত্রে পুরুষের অসহায় আত্নসমর্পন বাঞ্ছনীয়।

অন্যদিকে, যে কোন কিছু দারুণ ক্ষিপ্রতায় পুরুষের পছন্দ করে ফেলার স্বভাবটিও প্রাগৈতিহাসিক। এতে নারীরা পুরুষদের বীর কিংবা বোকা ভাবলেও কিছু আসে যায় না!

এনিয়ে কথা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ড. রাকিবুর রহমানের সাথে। তাঁর মতে, মেয়েরা মূলত ছেলেদের চেয়ে রং এর প্রভেদ আরো নিঁখুতভাবে বুঝতে পারে। ধরুন শপিং মলে গিয়ে একটি ছেলে নীল একটি টি শার্ট কিনে ফেলবে। কিন্তু মেয়েরা সেই টি শার্ট কেমন নীল? নীলকন্ঠি নীল কিনা, অন্য নীলের সাথে এ টিশার্টের নীল কত খানি ভিন্ন তা সহজেই বুঝে নিতে পারে। তাছাড়া দেখা গেছে, প্রাচীন কাল থেকে মেয়েরা যখন ফল সংগ্রহ করতো, ফলের রং দেখেই বুঝতে পারতো যে কোন ফলটা ভালো, বেশি দিন থাকবে। তারা রং দেখেই বলে দিতে পারতো কোন পচবে দুতিন দিনের মধ্যে।

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন