বিজ্ঞাপন

বিএসএমএমইউতে নার্স-কর্মচারী সংঘর্ষের নেপথ্যে

January 24, 2019 | 3:04 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয় কর্মরত স্টাফ নার্সদের সঙ্গে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সংঘর্ষ। এ ঘটনায় চতুর্থ শ্রেণির চার কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পরে নার্স ও কর্মচারীরা ফিরে গেছেন কাজে। সংঘর্ষে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। জানা গেছে, কর্মচারীদের হাতে একজন নার্সের স্বামীর লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি)  সকাল দশটার দিকে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এই প্রসঙ্গে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে যে সংঘর্ষ হয়েছিল, তা মিটে গেছে। এ ঘটনায় কেউ আহত হননি।

আরও পড়ুন- বিএসএমএমইউতে নার্স-কর্মচারী সংঘর্ষ, ৪ কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত

বিজ্ঞাপন

আসলে ঘটনা কী ঘটেছিল, জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ইউনিয়নের সাংগাঠনিক সম্পাদক ফারুক হোসেন বলেন, ঘটনার সূত্রপাত বুধবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে, সিনিয়র স্টাফ নার্স ফারহানার বাবাকে বিএসএমএমইউয়ের গ্যাসট্রোলজি বিভাগে ভর্তি করানোর সময়।’

ফারুক হোসেন আরও বলেন, ‘আউটডোরে বসে ছিলেন ওই স্টাফ নার্সের স্বামী, তিনি মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন। এ সময় চতুর্থ শ্রেণির স্টাফ ইসমাইল, শরীফ, জামাল ও রুবেল ফারহানার স্বামীর কাছে জানতে চান, তিনি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি কি না। ফারহানার স্বামী জবাবে বলেন, আমাকে দেখে কি তোমাদের তাই মনে হয়? তোমরা তোমাদের ডিউটি পালন করো। আমার সঙ্গে লাগতে এসো না। একপর্যায়ে কর্মচারীদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি ও পরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।’

হাসপাতালের কর্মচারী ইউনিয়নের সাংগাঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘নার্স ফারহানা দেখতে পান, কর্মচারীরা তার স্বামীকে মারধর করছে। তিনি পরিচয় দিলে তখন কর্মচারীরা ফারহানা ও তার স্বামীর কাছে ক্ষমা চান। ফারহানার বাবাকে ভর্তির সময়ও তারা সহযোগিতা করেন।’

বিজ্ঞাপন

ফারুক জানান, ফারহানা বেগম এ ঘটনা বিএসএমএমইউয় নার্স অ্যাসোসিয়েশনকে জানান। ওই ঘটনায় জড়িত সবাই গতকালই (বুধবার) ফারহানা ও তার স্বামীর কাছে ক্ষমা চেয়েছে। এ ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে কর্মচারীদের হয়ে ফারহানার কাছে ক্ষমা চেয়ে আসেন চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মমিনুল ইসলামও।’

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে নার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি নার্সিং খালেদা আক্তার বঙ্গবন্ধু হাসপাতালের সি ব্লকে প্রবেশ করেই চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের গালি দেন।  তিনি বলেন, তোমরা নার্সের জামাইকে মারছ। তোমাদের কত বড় সাহস! কে আছিস এখন আয় দেখি? এরপরই মূলত শুরু হয় সংঘর্ষ।

খালেদা আক্তারসহ বেশ কিছু নার্স রুবেল ও জামালকে মারধর শুরু করলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের একটি গ্রুপ এগিয়ে আসে। এক পর্যায়ে গেটে তালা লাগিয়ে দেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা। কর্মচারীরা সি ব্লকের বাইরে, আর নার্সরা সি ব্লকের ভেতরে অবস্থান করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। ঘটনার খবর পেয়ে অন্যান্য ব্লকের নার্সরাও এসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

পরে এ ঘটনা জানাজানি হলে শাহবাগ থানা থেকে পুলিশ হাজির হয়। পুলিশ, হাসপাতাল প্রশাসন ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। নার্সরা উপউপাচার্য (প্রশাসন) রফিকুল আলম ও অতিরিক্ত পরিচালক নাজমুল করিম মানিকের কাছে গিয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বরখাস্তের লিখিত দাবি জানান।

বিজ্ঞাপন

নার্সদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চতুর্থ শ্রেণির চার কর্মচারী জামাল উদ্দিন, রুবেল হাসান, ইসমাইল হোসেন ও শরীফকে সাময়িক বরখাস্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি কী ঘটেছিল, তা তদন্ত করে আগামী রোববার নার্সদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও আশ্বাস দেয় কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের ডি ব্লকের সিনিয়র স্টাফ নার্স মরিয়ম আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটিটিভ ভেবে সিনিয়র নার্স ফারহানার স্বামীকে মারধর করেছে কর্মচারীরা। সেজন্য আমরা কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভে গিয়েছিলাম। ফারহানার স্বামীর কাছে ওরা মোবাইল চেয়েছিল। স্টাফ বয়রা রিপ্রেজেন্টেটিভদের কাছে যা চায়, তাই দিতে বাধ্য হয়। না দিলে হাসপাতালে ডাক্তারদের কাছে যেতে দেয় না ওরা। কিন্তু ফারহানার স্বামী তো ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন না। তিনি কেন মোবাইল দেবেন? মোবাইল দেননি বলে তাকে মারধর করা হয়েছে। কয়েকজন আনসার সদস্যও এতে জড়িত ছিলেন। মারধর করে মাফ চাইলে তো হবে না। তাদের বরখাস্ত করতে হবে।’

বিএসএমএমইউতে দায়িত্বরত আনসার সদস্য আ. আজিজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নার্স আর চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। অতিরিক্ত পরিচালক চার কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করার পর নার্সরা শান্ত হয়ে কাজে ফিরেছেন।’ আনসার সদস্যরা কেউ জড়িত নয় বলে দাবি করেন তিনি।

জানতে চাইলে হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) নাজমুল করিম মানিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সামান্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। চার জনকে আপাতত সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পরিচালক আজ নেই। ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। পরিচালক এলে আগামী রোববার এ বিষয়ে চূচুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’ তবে এ ঘটনায় হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন