বিজ্ঞাপন

‘নিজের সেরা কাজটা আমি এখনো করতে পারিনি’

November 6, 2018 | 8:12 pm

তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

শিবু কুমার শীল। কথার ফাঁকে ফাঁকে তিনি চুপ হয়ে যান। ভাবেন। যেন রঙ্গীন ফেরেশতা উড়ে এসে বসে তার চিন্তায়। চোখ বন্ধ করে তিনি কিছু একটা দেখার চেষ্টা করেন। যেন অচেনা মেঘের ছাদে আঁচল পেতে বসে আকাশ। আর সেখান থেকে শব্দকল্প এনে তিনি লেখেন, আঁকেন, আপন মনে করেন গান! তার গাওয়া সেই গান ছড়িয়ে পড়ে এ বিষাদগ্রস্থ মেঘময় প্রাচীন শহরে…


  • আপনার তো অনেক পরিচয় ভাস্কর, শিল্পী, কবি, গায়েন

আমার কাছে মনে হয় এই প্রশ্নটা অনেকবার আমাকে শুনতে হয়েছে। যারা একটু মাল্টি অরিয়েন্টেশনের জায়গা থেকে আসে বা যারা একই সঙ্গে অনেক বিষয়ের কাজ করে তাদেরকে এই প্রশ্নটা করা হয় আরকি। সেখান থেকেই হয়তো আমাকে এই প্রশ্নটা বারবার করা হয়। আমার এটা মনে হয় যে এখানে একটা ঐক্য আছে। কি রকম, আমি যখন একটা গান লিখছি বা আমি যখন একটা ছবি আঁকছি বা যখন একটা ভাস্কর্য বানাচ্ছি এগুলোর মধ্যে একটা ঐক্য থাকে। এবং ওই ঐক্যটা এমন না যে একটার সঙ্গে আরেকটার সাংঘর্ষিক জায়গা তৈরি হয়।

আমি ভাস্কর্য বানালে গান লেখার ক্ষেত্রে প্রণোদনা হারিয়ে ফেলি না। স্কাল্পচারের ভিতরেও হয়তো আরেকটা সিনেমার প্লট পাই। একটা মাল্টি ডিসিপ্লিনারির ভেতর দিয়ে কাজটা করি। দিন শেষে সব কিছুই একটা বৃহত্তর শিল্পকলার অংশ। আমার মনে হয় আলাদা করে যেমন পরিচয় বলবার কিছু বলবার নাই! মানে আমি কি আমার কবিতার পক্ষ নিবো, নাকি আমি আমার লিরিকের পক্ষ নিবো, নাকি আমার ডকুমেন্টারির পক্ষ নিবো, সেটা আমি মনে করি না। সেই তাগিদ আমি বোধ করি না।

আইডেন্টিটির প্রশ্নে প্রথমত আমি একজন মানুষ এবং আমি মনে করি যে আমাকে বুঝতে গেলে আমার সততাকে যেমন বুঝতে হবে তেমনি আমার অসততাকেও বুঝতে হবে। আমার সংকীর্ণতাকেও বুঝতে হবে। একই রকমভাবে আমার নানা সেক্টরে যে কাজকর্ম সেই কাজকর্মগুলোকে আমার বিন্দু বিন্দু করে বুঝতে হবে। ব্যাপারটা এরকম না যে কবিতার ভেতর দিয়েই আমি প্রকাশিত হয়েছি। বা গানের ভেতর দিয়ে নিজেকে আমি তুলে ধরতে পেরেছি। আমার কাছে মনে হয় সকলটা মিলিয়েই আমি।

বিজ্ঞাপন
  • কবিতা বা গানে যে শিবু কুমার শীলকে পাওয়া যায় ভাস্কর্যে কিন্তু সেই শিবু কুমার শীল অনেক কম পরিচিতযতদূর জানি, অ্যাকাডেমিক শিক্ষা আপনি এই মাধ্যমটিতেই নিয়েছেন

গড় ভাস্করদেরও নীচে আমার কোয়ালিটি। কেন? ভাস্কর্যে পড়াশোনা করেছি, মাস্টার্স করেছি। সেটা অনেকটা এরকম যে একটা বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে তাই করেছি। আমার সেই ক্ষমতাটা ছিল না, আমার ভেতরে সেই টানও পাই না যে আমি পাগলের মতো ভাস্কর্য করতেছি। আমি খুব নিবিষ্ট হয়ে ভাস্কর্য করতেছি এমন প্রণোদনা আমি পাই না। যতদিন করেছি সেটা একটা অ্যাকাডেমিক জায়গা থেকে করেছি, যতটুকু দরকার করেছি। ওইটাতেই যে আমি স্যাটিসফাইড না সেটা আমার কাজ দেখলেই বোঝা যায়। আমার ওরকম কোনো ভাস্কর্য নাই। ভাস্কর্য বিষয়ক আমার কোনো কথা লিপিবদ্ধও নাই। এটা শুধুই আমার অ্যাকাডেমিক পরিচয়।

আমি যদি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়তাম বা ইসলামের ইতিহাসে পড়তাম ব্যাপারটা যেরকম হতো, সেখানেই থেকে গেছে ভাস্কর্যটা। এটা নিয়ে আমার কোন হতাশা নাই। আমি আমার স্বতস্ফূর্ত পথচলাকে আমি গুরুত্ব দিয়েছি। এখানে আমি জোর করে কিছু হতে চাইনি।

ছবি: অন্তর্জাল

  • কিন্তু ভাস্কর্যের প্রতি তো আপনার ভালবাসা রয়েছেনভেরাকে নিয়ে আপনি ডকুমেন্টারিও বানিয়েছেন? খুব সম্ভবত নভেরাকে নিয়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজটি আপনিই করেছেন

এটা ঠিক যে ভাস্কর্যের প্রতি আমার ভালবাসা আছে। এই বিষয়ে আমার এক ধরণের পড়াশোনা হয়েছে, বাংলাদেশে ভাস্কর্য চর্চার বিষয়টা আমার ফোকাসে এসেছে। আমি দেখেছি এখানে ভাস্কর্যচর্চায় ল্যাম্পপোস্টের মতো নভেরা আহমেদ দাঁড়িয়ে আছেন। সে সময় সে একজন নারী হিসেবে, উপমহাদেশের একজন মুসলমান নারী হিসেবে যে এরকম একটা বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন এবং সাফল্যের সঙ্গে করেছেন এটা আমাকে খুব আকর্ষণ করেছে। আমার মনে হয়েছে এই জায়গাটা নিয়ে কাজ করবার আছে। আমি যেহেতু ভাস্কর্য করতে পারছি না কিন্তু ভাস্কর্যের সঙ্গে রিলেটেড যে বিষয়গুলো রয়েছে, ভাস্কর্যকে এপ্রিশিয়েট করা বা ক্রিটিক করা, বিশ্লেষণ বা এটার সঙ্গে ইতিহাস ঐতিহ্যের যে একটা সম্পর্ক রয়েছে, এগুলো নিয়ে তো কাজ করা যেতেই পারে। আমার কাছে মনে হয় এটা ততটা সময় ক্ষেপনও করে না, আবার এটাকে একটা পেশা হিসেবেও দেখতে হয় না। ওই ইন্সপিরেশন বা এপ্রিসিয়েশন করতে গিয়ে এ সমস্ত জিনিসের প্রতি আমি ঝুঁকে পড়ি। আর অন্য কোনো কারণ নেই।

বিজ্ঞাপন
  • ক্যামেরার চোখে তো আপনি আরও অনেক কাজ করেছেনএকসময় চিত্রনাট্যও লিখেছেন কিন্তু ওই মাধ্যমটিতে আপনাকে খুব একটা দেখা যায় না ইদানিং

এটা আরেকটা বিষয় যে বইয়ের প্রচ্ছদ বা ডকুমেন্টারি। ডকুমেন্টারি আমি শুরু করলাম ২০০৮ সালে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোঁয়ারি’, এই ডকুমেন্টারিটা দিয়েই শুরু করেছি, কেউ কেউ হয়তো সেটা দেখেছেও। তারপর আমি নভেরার কাজটায় হাত দেই। সেটা আমি শেষ করতে পারি নাই। তাকে আমি একটা গবেষণার জায়গাতেই রেখে দিয়েছি। এটা এমন একটা কাজ আমার মনে হয় না এটা শেষ করে দেয়াটাই আসল কথা। আমি যতটুকু করতে পেরেছি সেটা পরের স্টেপে আমি আরেকজনের হাতে দিয়ে দিতে পারি।

‘খোঁয়ারি’ করতে গিয়ে আমি আসলে বুঝতে পেরেছি কিছু। এর আগে আমার চেষ্টা ছিল টিভি ফিকশন করবো। একটা প্রোডাকশন করেছিলাম। কিন্তু আমি যেমনটা চাই তেমনটা হচ্ছিল না। তখন আমি নিজেকে সরিয়ে আনলাম। মনে হলো আমার অনেক প্রস্তুতি দরকার আছে। তখন আমি স্বাধীনভাবে নিজের লগ্নি দিয়ে ‘খোঁয়ারি’ করলাম। যেমন তেমন হলো। মানুষ এটা গ্রহণও করলো। প্রশংসা করলো। পরে আমি ফিকশন করতে গিয়েছি কিন্তু খাপ খাওয়াতে পারি নাই। সোজা ভাবে বললে আমি এখানে ফেইল করেছি। আমার নিজের সীমাবদ্ধতা এটা।

তারপরে আবার ফরিদী ভাইকে নিয়ে উনার জীবন-বায়োগ্রাফি এসব নিয়ে একটা কাজ শুরু করেছিলাম কিন্তু ওটাও শেষ করতে পারিনি। পরে ওটার একটা ছোট অংশ আমি ইউটিউবে আপ করে দিয়েছি। ওটা নিয়ে একটা পাবলিকেশন করার প্ল্যান এখনো চলছে। সবিকিছু মিলিয়ে একটা হাফ ডান জায়গায় দুটি কাজ আটকে গেছে।

আমার মনে হয় অডিও-ভিজ্যুয়াল মানে সিনেমায় বা টিভি ফিকশনে এক ধরনের অনিশ্চিয়তা আছে, এই সমস্ত পেশায় যারা আছেন তারা জানবেন যে এখানে ঘরবাড়ি ছেড়ে লগ্নি করতে হয়, নিজেকে লগ্নি করতে হয় এবং এখানে কোন রকমের কোনো সেকেন্ড অপশন নাই। রিস্ক ফ্রি কোন জায়গা নাই এখানে। আমি আসলে সেই রিস্কটাতে যেতে চাই না। আমার মনে হয়, আমি যেহেতু গ্রাফিক ডিজাইনার, স্কাল্পচার থেকে পাশ করেছি, সুতরাং এসব করে করে আমি সারভাইব করতে পারছি। তাই আমার ফিল্মটাকে একটা ব্যবসায়িক জায়গায় দেখতে চাইনি।

বিজ্ঞাপন
  • আপনার গোটা জীবনটাই হয়তো এরকম! কোন কিছু নিয়েই আপনি আসলে রিস্কটা নিতে চান নাই বা ব্যবসায়িক জায়গা থেকে দেখতে চান নাই

এটা হতে পারে, কারণ আমি আটপৌরে জীবনের মধ্যে আটকে আছি। আমি একটা চাকরি করি বা আমি একটা ফ্রিল্যান্স কাজ করছি। সেগুলোও একজন ব্যবসায়ী হিসেবে বা একজন চাকুরিজীবী হিসেবেও খুব আহামরি কিছু না। পাশাপাশি যে কাজগুলো করছি, যেমন বইয়ের প্রচ্ছদ, ডকুমেন্টারি বানানো বা নাটক লেখা। টেলিভিশনে দীর্ঘদিন আমি নাটক লিখেছি। এগুলো আসলে আমার টিকে থাকার চেষ্টা। নিজের কাজটা আমি এখনো করতে পারিনি। যে জায়গাটাতে আমি নিজেকে সামান্য প্রকাশ করতে পেরেছি সেটা হচ্ছে মেঘদল।

ছবি: শিপু আহমেদ

  • গানে যাই তাহলে… ‘মেঘদলনামটি তো বোদলেয়ারের কবিতা থেকে নেয়া, কিন্তু ওনার কবিতা থেকে আপনারা কোন গান করেননি

বোদলেয়ারের ওই ‘অচেনা মানুষ’ কবিতার অনুবাদ করেছিলেন বুদ্ধদেব বসু। ওখান থেকে আমরা নাম দিলাম ‘মেঘদল’। এটা আসলে এমন কোন শর্ত আরোপ করে না যে পরবর্তীতে বোদলেয়ার নিয়ে আমরা অনেক কিছু করবো। এরপরে বুদ্ধদেব বসুকে নিয়ে কিছু করবো বা এরকম কোন বিষয় আমার অবচেতনেও ছিল না। আমাদের কোনরকম ব্র্যান্ডিংয়ে বোদলেয়ারকে পাবেন না, শুধুমাত্র নামটি ছাড়া।

আমরা আমাদের নামটি বলার সময় বোদলেয়ারের কথা বলি, না বললেও কোন সমস্যা নাই। কারণ ‘মেঘদল’ একটা বাংলা শব্দ। এটা বুদ্ধদেব বসু ব্যবহার করেছেন, বোদলেয়ার এখানে ওই অর্থে কিছুই না। কিন্তু যখন আমরা বোদলেয়ারের নামটি নেই তখন উৎসাহ কাজ করে। প্রতিষ্ঠান বিরোধী অ্যাংরি পোয়েট, সেই কবির স্পিরিটটাও আমরা সঙ্গে চাই। একটা সময় পর্যন্ত আমরা মনে করতাম আমরা এই স্পিরিটটার সঙ্গেই আছি। তবে আলাদা করে গান করার কোন পরিকল্পনা আমাদের অবচেতনেও ছিল না।

  • ফ্রান্সের আরেকজন কবির কবিতা থেকে কিন্তু আপনারা গান করেছেন?

সেটার সঙ্গে কিন্তু ফ্রান্সের কোন সম্পর্ক নাই! বোদলেয়ার, ইম্প্রেশনিজম বা ‘মেঘদল’ কোন কিছুই সম্পর্কিত নয় এটার সঙ্গে। সুনীল গাঙ্গুলীর ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ বইটা থেকে, আমাদের খুব পছন্দের একটা বই, ওখানে অনেক ফরাসি কবিতা আছে, একদিন মনে হলো এখান থেকে একটা গান করি। তবে হ্যাঁ, এর পেছনে ব্যক্তিগত উৎসাহ রয়েছে, কোন মেয়ের প্রতি ভালবাসা থেকে গানটা করেছি কিনা বা কোন নারী আমাকে গানটি করতে উদ্বুদ্ধ করেছে কিনা, এটা থাকতে পারে! এভাবেই থাক বিষয়টা। হাহাহা…

  • মূল কবিতায় কবি লিখেছেন, ‘আমার হৃদয় মৃদু ঝোঁকে চাপ দেয় তোমার হৃদয়আর আপনারা গেয়েছেন, ‘আমার হৃদয় প্রবল ঝোঁকে চাপ দেয় তোমার হৃদয় এর কি কারণ?

এটা আমি সচেতনভাবে করিনি। কারণ গান টিউন করার সময় আমার সামনে কোন প্রিন্টেড কপি থাকে না। এখন স্মার্টফোন আছে, তখন আমার কাছে স্মার্টফোনও ছিলনা। কবিতাটা আমি হয়তো আমি বাসায় পড়ে এসেছি, মনে ছিল কিন্তু যখন আমি টিউন করি তখন ‘মৃদু’ শব্দটা হয়ে গেছে ‘প্রবল’। মনে হয়েছে শব্দটা থাকুক।

কেউ যখন আমাকে কারেকশন করে দিতে চেয়েছে, তখন আমার মনে হয়েছে আমি বিপরীত অর্থের একটা শব্দ বসিয়েছি, কিন্তু এটা আমার ভাল লেগেছে। মনে হয়েছে যেন এটা আমারই চিন্তা। ‘মৃদু’ কেন বলবো, ‘প্রবল’ বলবো।

এই যে একটা প্রাবল্য এটা আমি অবচেতনেই বসিয়ে দিয়েছি। এটা নিয়ে আমি ছোট করে কিছু লেখাও লিখেছি। মানে আমি যাকে উদ্দেশ্য করে বলছি তার প্রতি আমি মৃদু কিছু করতে চাচ্ছি না। হাহা। একটা অ্যাগ্রেসিভনেস ছিল, আমি প্রবল ভাবে বিষয়টাকে দেখতে চেয়েছি।

ছবি: অয়ন রেহাল

  • আপনাদের যে গান, সেখানে জীবনানন্দের প্রভাব বেশ স্পষ্ট মেঘদলের গানের কথায় জীবনবাবুর প্রচুর শব্দ দেখা যায়, মনে হয় যেন তারই কোন ভাঙা কবিতা আপনার নির্মাণ করেছেন এটা কি আপনারা খুব সচেতন ভাবেই করেন?

এটা সচেতনভাবে করি না। কারণ কি, আমরা তিনজন গান লিখতাম। এখন তিনজনের গান দেখবেন তিন রকমের। আমাদের সুমনের গান দেখবেন এক রকম, সে খুব সহজ বাক্যে লিখে এবং শ্রোতারা সহজে বুঝতে পারে এবং সুরটাও খুব সহজ হয়। আমাদের মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের গানে বিপ্লবী ভঙ্গি থাকে। মানে একটা রক ভাব। সমাজের নানা রকমের অসঙ্গতি নিয়ে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ উজ্জ্বল অনায়সে তার গানে তুলে আনতে পারত।

আমার গানের বৈশিষ্টর কথা বললে, এখানে একধরণের মেলোডি করার চেষ্টা আমার থাকে। বিষাদ করার চেষ্টা করি। এটা আমার বিল্ট ইন। আমার স্বভাবের মধ্যেই বিষাদ আছে। জীবনানন্দ দাসকে যেহেতু আমি পছন্দ করি, তার কবিতার যেহেতু ভক্ত আমি, শুধু কবিতা বললে হবে না তার সব কিছুই আমার ভাল লাগে। ওনার প্রতি আমি বায়াসড আছি। তখন হয়কি আমার লিরিকে এসে তিনি ভর করেন এবং কোন কোন জায়গায় আমি তার প্রভাব এড়াতে চাই না।

আমার গানের মধ্যে যখন এটা আসছে তখন আমি বুঝতে পারি যে এটা জীবনানন্দীয় হয়ে উঠল, আমি চাইলেই তখন সেটাকে ফেলে দিতে পারি। নতুন করে লিখতে পারি। কিন্তু সেটা আমি করি না। কারণ এটা একটা স্বতস্ফূর্ত প্রক্রিয়া। কেউ যদি বলে জীবনানন্দের প্রভাবে এরা গান করে তখন আমি মন খারাপ করি না। এটাকে সীমাবদ্ধতা হিসেবেও দেখি না। এটা কোনও সংকটও নয়। আমি জীবনানন্দের বাইরে গিয়েও অনেক গান করি। মানে যেটা জীবনানন্দের মতো মনে হয় না।

  • আপনারা গানে শহরকে বিষাদময় করে চিত্রিত করেন, কিন্তু শহরের তো একটা ঝলমলে দিকও আছে এটার একটা অংশ যেমন অন্ধকার ধরে রাখে, আরেকটা অংশ কিন্তু উজ্জ্বল আর চাকচিক্যময়, সে ঝলমল করে জ্বলে সারারাত

আমরা একটা গান করেছি কিছুদিন আগে। সেটা অফিশিয়াল রিলিজ হয়নি কিন্তু স্টেজে নিয়মিতই গাওয়া হয়। বহুদিন ধরে গাইছি। ‘শহুরে জোনাক’। ‘চোখের মনিতে আকাশ ভরা তারার নাচন’। এটা উৎসবের গান। ‘এসো আমার শহরে’ গানের যে অবসাদ এবং ওখানে যে একটা মরবিডনেস, এটার উল্টোটা হবে ‘শহুরে জোনাক’। এখানে একটা উল্লাস বা উৎসবের জায়গা আছে। এখানে শহরকে বলেছি, ‘নজরবন্দি হলুদ পোকারদল, নস্টালজিক আলো ছায়া গায়ে মেখে, কোনদিন যদি নেমে আসে জলপরী মধ্যরাতে, স্যাটেলাইট নগরে’।

এখানে কোন ভাবে নেগেটিভিটি আসেনি। আমি চেষ্টা করে করি নাই এটা। আসে নাই আরকি। ফলে আপনি যে রকম ব্যলেন্স করার চেষ্টা করতেছেন সেই চিন্তাটাও আছে আমাদের। এ রকম আমাদের বাকীদের গানেও আছে।

ছবি: ফাহাদ আল আলম

  • আজিজ মার্কেটে এথেন্স নামে ছোট্ট একটা ঘরে শুরু করেছিলেন এরপর ষোল বছর কেটে গেছে অনেক সদস্য ঝরে পড়েছে, অনেকে আবার মাঝপথে যুক্ত হয়েছে ওই শুরুর মেঘদল আর এখনের মেঘদল কতটা রঙ বদলেছে?

শুরুর মেঘদল আর এই মেঘদল এক না। মেঘদলের প্রথম দুইটা অ্যালবামকে ধরলে দেখবেন, দুটোর মধ্যে বিরাট তফাত আছে। কৌশলগত জায়গা থেকেও আছে, চিন্তার জায়গাতেও আছে।

প্রথম অ্যালবামে আমরা নিজেদেরকে প্রমাণ করবার চেষ্টা করেছি। সমাজের অসঙ্গতির কথা যেমন আছে, ধর্মের অসঙ্গতির কথা আছে, আবার প্রবল প্রেমের কথাও রয়েছে। ‘চেনা অচেনা’, ‘জানো কি’, এরকম অনেক ভাবে নিজেকে প্রমাণ করবার চেষ্টা রয়েছে। নিজেকে উজাড় করবার একটা ব্যাপার রয়েছে। মানে মানুষের কাছে নিজের সবকিছুই নিবেদন করলাম। আর প্রথম কিছু করবার একটা অস্থিরতাও রয়েছে। ওইখানে দেখবেন থ্র্যাশমেটাল ভঙ্গিরও একটা গান রয়েছে। ‘ব্যবচ্ছেদ’। এই ভঙ্গিটা কিন্তু পরের অ্যালবামে থাকলো না।

পরের অ্যালবাম অনেক বেশি স্মুথ। যেন একটু ফ্ল্যাট, যেন একটা নির্দিষ্ট ধারণাকে নিয়ে আমরা কাজ করেছি। খুব বেশি আপস এন্ড ডাউন নাই আসলে। নানান রকমের গান নাই আরকি। এখন তৃতীয় অ্যালবামের যে চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি, সেখানেও আমার কাছে মনে হয়েছে কথায় এবং সুরে আমাদের অনেক পরিবর্তন আসছে।

কিন্তু চিন্তার জায়গা থেকে যদি বলি, তাহলে আমরা ওই জায়গাটাতেই আছি শুরু করেছিলাম যে জায়গা থেকে। মানে আমরা শুরুর ধারাবাহিকতায় আছি। এমন না যে ওখানে আটকে আছি, আবার এমনও না যে উল্টোদিকে চলে গেছি। মানে মিউজিককে নানান ভাবে দেখবার একটা চোখ তৈরী হয়েছে, শোনার কান তৈরি হয়েছে।

আমরা স্লোবিটের গান করছি যেগুলো স্টেজে তেমন গাওয়া যায় না। এটা কিন্তু একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ কারণ বড় কনসার্টে আমাদের গান শুনে কেউ মাথা ঝাঁকাবে না। নাচবে না, উল্লাস করবে না। আমাদের কিন্তু ওই তাড়াটাও নাই। তবে আমাদের স্বাধীন থাকার যে জায়গাটা, সেটা শুরুতেও ছিল, এখনো জারি রয়েছে।

  • এসো আমার শহরে গানটির দৃশ্যায়ন নিয়ে অভিযোগ রয়েছে অনেকেই বিদেশি গানের সঙ্গে এর দৃশ্যায়নের মিল খুঁজে পেয়েছেন আপনাদের একজন সাবেক সদস্যও বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে লিখেছিলেনএই প্রসঙ্গ টেনে আপনি কি মেঘদলের ভাঙন বিষয়ে আমাদের কিছু বলবেন

এটা খবুই সেনসিটিভ আমার জন্য। এই বিষয়ে এই প্রথম হয়তো আমি কথা বলছি। আপনি দেখলেন সাক্ষাৎকারের শুরুতে আমি কত স্বতস্ফূর্তভাবে আমাদের ব্যান্ড মেম্বারদের নাম বলে গেছি। যেখানে আমার কোন রকমের কোন দ্বিধা কাজ করে না। আমি মনে করি না ‘মেঘদল’ শুধু তিনজনের বা সাতজনের। আমি মনে করি যে, যার যা প্রাপ্য, যীশুর কথার মতো, যারা যা প্রাপ্য তোমরা তা তাকে দাও। এখানে প্রাপ্যটা দিতেই হবে। নিয়তির মতো এটা। আপনি দিতে না চাইলেও অন্য কেউ এসে দেবে।

আর মেঘদল এখনো এমন কোন পথ পারি দেয়নি যে সময় এটাকে বিচার করবে। এ সমস্ত গাল ভরা কথা আমি বলবো না। আমি মনে করি যে, মেঘদল তার সেরা কাজটা এখনো করতে পারেনি

এখন ওই ইস্যুতে, ‘এসো আমার শহর’ গানটির মিউজিক ভিডিও প্রসঙ্গে অনেকেই বলেছে এটা পিংক ফ্লয়েডের সঙ্গে মিলে আছে, কেউ কেউ এটাকে বলেছে কোল্ডপ্লে’র ‘আপ অ্যান্ড আপ’। সমালোচকরা অনেক রকমের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে। আমি মনে করি, সম্পর্কগুলো যারা খুঁজে পেয়েছেন, সেটাকে তারা কিভাবে দেখছে এটা তাদের ব্যাপার। আমাদের ব্যাখ্যাটা হচ্ছে, পিংক ফ্লয়েড দেখেই তো আমি বড় হয়েছি। তাদের প্রভাব তো আমার মধ্যে থাকবে। আমি কোল্ডপ্লে দেখছি…তাদের প্রভাব আমার মধ্যে থাকবে। এটা স্বাভাবিক।

এখন বুঝতে হবে আমি কোন কিছু হবহু নকল করছি কিনা! এবং কোন অসততা থেকে কাজটি করছি কিনা! এটা আপনাকে বুঝতে হবে। যে ছবিগুলোর কথা এসেছে, যেমন ধরেন সারা গায়ে বাল্ব ঝুলানো একটা ফিগার, পিংক ফ্লয়েডের একটা অ্যালবাম কাভার। এখন ‘এসো আমার শহর’ গানের যে মডেল, তার সারা গায়ে ছিল পাখি এবং তার হাতে একটা খাঁচার মধ্যেও একটা পাখি ছিল। এখন আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন এর ব্যাখ্যা আমার কাছে আছে কিনা! যদি এর ব্যাখ্যা না থাকে তাহলে বুঝতে হবে এটা নকল।

ছবি: অন্তর্জাল

আমি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি যে, একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে এটা আসলে সুবোধ। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, এই চরিত্রটা শুরু হয়েছিল একজন রোহিঙ্গা থেকে। আর কেউ না জানুক, আমরা যে ছয় সাতজন এই চিন্তার ভেতরে ছিলাম, আমরা এইটুকু জানি একজন রোহিঙ্গা মানুষ বর্মা থেকে এসে একটা সুটকেস নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। এরকম একটা ছবি আমি দেখেছিলাম। এই ছবিটা আমাকে এতোটা তাড়িত করলো, আমার মনে হচ্ছিল এই গানটা এই লোকটার জন্য। মানে এই লোকটাকে আমি আমার শহরে এতো যে ক্লেদ, গ্লানি, এতো যে মরবিডনেস এখানে, তাকে এই শহরে আমি স্বাগতম জানাচ্ছি।

গানটিতে আমি রোহিঙ্গা শব্দটি ওভাবে ব্যবহার করিনি। কারণ ওই শব্দ বসিয়ে আমি তো কোন রিপোর্ট লিখতে বসিনি। আমি শিল্প নির্মাণ করতে বসেছি। আপনি এতোদিন পর জানতে চেয়েছেন বলে বলছি। আমার গানটা শুরুই হয়েছিল ওই রোহিঙ্গা চরিত্রটি দিয়ে। ওই ব্যক্তির মধ্যে আমরা তখন সুবোধকেও দেখতে পেলাম। রোহিঙ্গা লোকটিকে আসতে বলে, সুবোধকে চলে যেতে বলেছি। এক জনকে বলছি আসেন, আরেক জনকে বলছি চলে যাও।

এখন এই ইমেজকে আমি পিংক ফ্লয়েডের মতো গঠন করতেই পারি। কিন্তু ইমেজটা কি আমি আমার মতো করে অওন করতে পেরেছি কিনা! এটা খুবই জরুরী বিষয়। আসলে অন্যের কথাবার্তাকে আমরা এতোটা গুরুত্বের সঙ্গে নেই নাই। কারণ অসৎ উদ্দেশ্যে আমরা কিছু করি নাই। আর সবকিছু ওপেন এখন, পিংক ফ্লয়েড বলি আর কোল্ডপ্লে বলি, সবই তো ওপেন। সবাই তো দেখতে পাচ্ছে। বাট আমার ব্যাখ্যাটা সবকিছু ছাপিয়ে যাচ্ছে কিনা এটা দেখা জরুরী।

আরেকটা বিষয় আমি বলি, যারাই এটাকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছে বা নকল বলছে বা নানা রকমের ইমেজ জুরে দিয়ে কিছু একটা প্রমাণ করতে চেয়েছে, সেগুলোকে আমি কোন সৎ প্রচেষ্টা হিসেবে দেখি না। এটা যেন কোন মানুষকে ছোট করবারই একটা চেষ্টা। যদি এই ব্যান্ডকে বা গানকে অওন করতেন তাহলে তিনি বা তারা জানতেন কারো ব্যাখ্যা না জেনে তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তার বিচার করে ফেলাটা অনুচিত।

আাপনার হাতে ফেসবুক আছে, আপনি স্ট্যাটাস দিতে পারেন, আপনার পাঁচহাজার বন্ধু আছে, দুই লাখ ফলোয়ার আছে এজন্য মারণাস্ত্রের মতো এটাকে ব্যাবহার করছেন, এটা খুব মর্মান্তিক। এটা খুবই বেদনাদায়ক আমার কাছে।

ফলে আমার এটা নিয়ে কোন হতাশা নাই, কেন? কারণ আমার কাছে এটার ব্যাখ্যা আছে! আমি এটার শুরু এবং শেষ জানি। এটা হুবহু পিংক ফ্লয়েডের কোন ইমেজ হলেও কোন সমস্যা নেই। একটু আগেও বলেছি, আমার গান জীবনানন্দের মতো হয়ে উঠছে কিনা তাতেও আমার কোন সমস্যা নেই।

এটা অনেক সুন্দর হতো যদি এই ব্যাখ্যাটা সরাসরি আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হতো। এখন যে কথাটা আপনাকে বলতে হচ্ছে সেটা হয়তো তাদেরকে বলতে পারতাম। স্থান-কাল-পাত্রের কারণেও অনেক ধারণা অন্যরকম অর্থ প্রকাশ করে।

ছবি: শওকত ইমরান

  • আরেকটা গান ওম  এই গানটির জন্য আপনারা প্রশংসিত যেমন হয়েছেন, আবার আক্রমণেরও শিকার হয়েছেনএমন গান এখন আর খুব একটা করছেন না?

আমরা আসলে কোনকিছুই ধারাবাহিক ভাবে করবো এমন কোন শপথ নেইনি। নিবোও না। এটা আসলে শিল্পীর স্বাধীনতার জায়গা, সে কি প্রেমের গান করতেই থাকবে! প্রতিরোধের গান করতেই থাকবে! সমাজের যে অসঙ্গতির কথা এক সময় সে যেভাবে বলেছে, দশ বছর পর সেটা সে একই ভাবে বলবে কিনা। সে মনে করে কিনা, এটার বাইরে গিয়েও আরও অসঙ্গতি আছে, সেখানেও আমরা ফোকাস করতে চাই। এ রকম একটা সামষ্ঠিক সিদ্ধান্ত আমাদের হয়তো আছে। যার কারণে আমরা সেখান থেকে সরে এসেছি।

কিন্তু আপনি দেখবেন আমরা যখনি কোন গান করছি বা গান করতে যাচ্ছি, সেখানে আমরা নানান রকম কথা বলছি। যেমন আমরা ‘দেয়ালে’ গানটা যখন করলাম, গ্রাফিতি নিয়ে। প্রকাশিত হয়নি যদিও। সেখানে যে সময়ের কথা আমরা বলেছি…. আমি মনে করি মেটাফোরকে আরও দুর্বোদ্ধ, আরও বেশি অ্যাবস্ট্রাক্ট জায়গায় নিয়ে যাওয়া এটাও আমাদের এই সময়ের কাজের বৈশিষ্ট। আমরা আর সরাসরি অ্যাপ্রোচে যাচ্ছি না। কোনকিছুতেই সরাসরি অ্যাপ্রোচে যাচ্ছি না।

এখন ধর্ম বা এরকম আরও যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো নিয়ে…….. আমার এখন মনে হয়, আমি এমন একটা গান গাইতে চাই যে গানটা শোনার পর যারা প্রতিক্রিয়াশীল, তারা আর ওই রকম আচরণ করবে না। কিন্তু আমি কখনো বলবো না যে আপনি এই কাজটি করবেন না। এটা আমি গানে বলতে চাই না। আবার যদি কখনো মনে হয় এটা করার দরকার, তাহলে অবশ্যই বলবো। এখানে ধারাবাহিকতার কোন শপথ নেই।

  • শেষ প্রশ্নটা ব্যক্তিজীবন থেকে করিআপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সরব বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক ইস্যুতে নিয়মিতই নিজের মতামত প্রকাশ করেন যেখানে অন্য তারকারা এই ব্যাপারে বেশ নিরবই থাকেন বলা যায় এটা কি কোন দায়বদ্ধতা থেকে করেন?

এটা আমি অনেকদিন করি না এখন। বন্ধ রেখেছি। আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন উত্তপ্ত একটা জায়গা হয়ে গেছে। এখানে লেখার জন্য মানুষের প্রাণ চলে যাচ্ছে, জেল হচ্ছে। এটাকে গৌণ করে দেখবার আর কোন সুযোগ নেই। এটা খুব স্পর্শকাতর যে কারণে আমি এখন লেখালেখির জায়গায় খুব সিলেকটিভ। একেবারেই ব্যক্তিগত বা যেসব বিষয়ে বিতর্কের কিছু নেই সেসব বিষয়েই লিখি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানুষের মত প্রকাশের একটি অবাদ জায়গা হয়ে যাওয়ায় মানুষ সেটার মিসউইজও করেন। নানারকমের উসকানিমূলক কাজও করেন। যেটা অনেক ভয়ের ব্যাপার।

কিন্তু এটাকে পজিটিভলি ব্যবহার করা যেত। এখন কোন বিপ্লব বিদ্রোহ হলে অনলাইনেই হবে, এটা ছাড়া মানুষের কাছে কানেক্ট হবার কোন সুযোগ নেই। মানুষের রাজপথে নেমে আসার বিপ্লবও আর সম্ভব না। ওই চিন্তুা থেকে বা দায়িত্ববোধ থেকে এই প্লাটফর্মটাকে ব্যবহার করার একটা চেষ্টা আমি করেছি। মতামত দিয়েছি।

যেমন নভেরা আহমেদের একটা ভাস্কর্য, কাউ উইথ টু ফিগারস, জাদুঘরের সিঁড়ির নীচে পড়ে আছে। ভাস্কর্য তো সিঁড়ির নীচে পড়ে থাকার বিষয় নয়। আমার কাছে মনে হয়েছে একজন শিল্পী ও সচেতন মানুষ হিসেবে এটা নিয়ে যদি আমি না বলি তাহলে কে বলবে কথাটা? এই জায়গা থেকেই লিখি এবং বলি।

সারাবাংলা/টিএস/পিএ

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন