বিজ্ঞাপন

পদ্মাসেতুর ৫৯, মেট্রোরেলের ১৫ ও রূপপুরের ৯৬ শতাংশ অগ্রগতি

April 23, 2018 | 6:22 pm

।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: এগিয়ে চলছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হাতে নেওয়া সরকারের ৯ প্রকল্পের কাজ। এগুলো হলো পদ্মাসেতু প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, এলএনজি টার্মিনাল, ঘুমধুমে ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।

 সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সেই প্রতিবেদন অনুসারে পদ্মাসেতুর অগ্রগতি হয়েছে ৫৯ শতাংশ, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি ৯৬ শতাংশ, মেট্রোরেলের অগ্রগতি ১৪ দশমিক ৬২ শতাংশ, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অগ্রগতি ৮ শতাংশ, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের  সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৪৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অগ্রগতি ১৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ, পায়রা সমুদ্র বন্দরের অগ্রগতি ৪৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগের ভৌত অগ্রগতি ১১ শতাংশ, রামু-মায়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৫ শতাংশ।

পদ্মাসেতুর অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত শেষ হয়েছে সেতুটির ৫৯ শতাংশ কাজ। গত ফেব্রুয়ারিতে পদ্মা সেতুর অগ্রগতি ছিল ৫৮ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে ১ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। এছাড়া পদ্মা নদী শাসন কাজ হয়েছে ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সড়কের কাজ হয়েছে ৯৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ ও মাওয়া প্রান্তে সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া-২-এর কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৩ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে শুরু থেকে মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ১২৫ কোটি ২১ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৫২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

নির্ধারিত সময়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে কি না জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মাসেতুর কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে কি না সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।এটি নিয়ে কথা বলতে গেলে আগে যোগাযোগমন্ত্রীর পাবলিক রিলেশন অফিসার (পিআরও) সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপরই কথা বলা যাবে।

এর আগে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম সারাবাংলাকে বলেন, ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলো এগিয়ে চলছে। চলতি অর্থবছরে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। আগামী অর্থবছরের এডিপিতেও পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকছে।

বিজ্ঞাপন

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র: দ্বিতীয় পর্যায়ে মূল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। শুরু থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৫৭০ কোটি ১৬ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত দুটি চুক্তির আওতায় এ প্রকল্পের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। প্রকল্পের আওতায় ১২ শ মেগাওয়াটের ২টি ইউনিটের মাধ্যমে ২৪ শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। প্রকল্পের মূল কাজ প্রথম রিয়্যাক্টর স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।

এ ছাড়া কর্মকর্তাদের জন্য ভবন তৈরির কাজও এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। প্রকল্পটির প্রথম পর্যায় কাজের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯৫ দশমিক ৮২ অগ্রগতি হয়েছে। শুরু থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৮৭৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

মেট্রোরেল: এ প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের শুরু থেকে মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ২১৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

এ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত লাইন স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-১ এর অগ্রগতি ১০০ শতাংশ, কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-২ এর অগ্রগতি হয়েছে ৪ শতাংশ, কন্ট্রাক প্যাকেজ-৩ এর অগ্রগতি ৫ শতাংশ, কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ ৮ এর অগ্রগতি ৯ শতাংশ।

এ ছাড়া প্যাকেজ-৪, ৫, ৬ ও ৭ এর কন্ট্রাক্ট কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় পরবর্তী পর্যায়ে আগারগাঁও থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক, মতিঝিল পর্যন্ত লাইন স্থাপন করা হবে।

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র: মার্চ পর্যন্ত এ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮ শতাংশ আর আর্থিক অগ্রগতি ১৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। প্রকল্প বাস্তবায়নে ইপিসি ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরামর্শকরা কাজ শুরু করেছেন। মাটি ভরাটের কাজ ১০০ শতাংশ, সীমানা প্রাচীর নির্ধারণের কাজ ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৪৮৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র: প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ১৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। প্রকল্পের জন্য দেড় হাজার একর জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ।

এ ছাড়া ওনারস ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ এবং জমি সংক্রান্ত দায়িত্ব, বাউন্ডারি ফেন্সিংয়ের কাজ এবং পরিবেশ সংক্রান্ত ক্লিয়ারেন্সের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর: এ বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১ হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে।  প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণ, ওয়্যার হাউজ নির্মাণ, সার্ভে বোট, পাইট ভ্যাসেল ইত্যাদি কেনা হচ্ছে।

মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৬৫৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৪৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ: এ প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ১১ শতাংশ। এ ছাড়া আর্থিক অগ্রগতি ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৫৫৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আগামী ২৮ এপ্রিল চীনের সঙ্গে এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ঋণ চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।

এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ: এ প্রকল্পটি বিল্ড অন অপারেট অ্যান্ড  ট্রান্সফার (বিওওটি) পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

গত বছরের ১৮ জুলাই টার্মিনাল ব্যবহার সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে। জিও টেকনিক্যাল সার্ভের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে ডিজাইনের কাজ চলছে। সেই সঙ্গে জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

রামু-মায়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ: এ প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। কক্সবাজার এলাকায় জমি পাওয়া গেলেও চট্টগ্রামে জমি পাওয়া যায়নি। পরামর্শক নিয়োগের কাজ চলছে। লট-১ ও লট-২ এর কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। রিস্যাটেলমেন্টের জন্য এনজিও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৯৫৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

সারাবাংলা/জেজে/এমআই/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন