Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের ৮০ শতাংশই নারী


৮ মার্চ ২০১৮ ২১:৪৯

জান্নাতুল মাওয়া, ফিচার রাইটার

ঢাকা: জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যারা বাস্তুহারা এবং নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী। এর আগে ২০১৫ সালের প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা বিষয়ক বৈঠকে উঠে আসে নারীরা জলবায়ু পরিবর্তনে তুলনামূলক বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। ওই বৈঠকে নারী ক্ষমতায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বৃহস্পতিবার (৮ মার্চ) জাতিসংঘের সম্প্রতি প্রকাশ করা এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, সাধারণত একটি বিশাল অংশের নারীরা ঘরে থেকে শিশুদের যত্ন নেন এবং ঘরের নিয়মিত রান্নাবান্না ও গৃহস্থালির কাজ করেন। তাদের এই ভূমিকার কারণে বন্যা এবং খরার সময় তারা তুলনামূলক বেশি অরক্ষিত থাকে।

মধ্য আফ্রিকায় চাদ লেকের ৯০ শতাংশই বিলীন হয়ে যাওয়ায় সেখানকার যাযাবর আদিবাসী গোষ্ঠী ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। লেকটি দূরে সরে যাওয়ায় নারীদের অনেক দূরের পথ হেঁটে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। চাদের আদিবাসী নারী এবং জনগণ সমিতির (অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিজেনাস উইম্যান অ্যান্ড পিপল অব চাদ) সমন্বয়কারী হিন্দো উমারু ইব্রাহিম বলেন, খরার সময় নারীদের বাড়িতে রেখে পুরুষরা শহরে কাজে চলে যায়। বিবিসি’র হান্ড্রেড উইম্যান ইনিশিয়েটিভকে ইব্রাহিম আরও জানান, যেহেতু খরা মৌসুম এখন আগের চেয়ে আরও দীর্ঘ হয়েছে, পরিবারের জন্য এখন তাই নারীদের আরও বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে।

একটি বৈশ্বিক সমস্যা
শুধুমাত্র গ্রামের নারীরাই এই সমস্যার শিকার নন। আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায় পুরুষের চেয়ে তুলনামূলকভাবে নারীরা পিছিয়ে। তাই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং দরকারি কাজ খুঁজে নেওয়ার বিষয়টি তাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়।
২০০৫ সালে হারিকেন ক্যাটরিনার পর লুজিয়ানা রাজ্যের আফ্রিকান ও আমেরিকান নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছিল। তাদের সাময়িকভাবে যেখানে রাখা হয়েছিল, সেখানে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত স্যানিটারি পণ্য ছিল না।

বিজ্ঞাপন

রাটগারস ইউনিভার্সিটির উইম্যান অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের অধ্যাপক জ্যাকুলিন লিট জানান, ক্যাটরিনার আগে থেকেই নিউ অরলিয়ন্সের আফ্রিকান-আমেরিকান নারীরা দারিদ্রপীড়িত ছিল। শহরের অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যক দরিদ্র পরিবার চালাত সিঙ্গেল মাদার। তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নির্ভর করতে হতো স্থানীয় কমিউনিটি নেটওয়ার্কের ওপর। কিন্তু দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সেই নেটওয়ার্কগুলো ভেঙে যায়। যা নারী এবং শিশুদেরকে আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। দুর্যোগের পরে সেই অঞ্চলে নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যায়।

“প্রাকৃতিক” দুর্যোগ
মানুষের বৈরী আচরণের কারণে খুব দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব সব মানুষের ওপর সমানভাবে পড়ছে না। এর সঙ্গে সামাজিক কাঠামোগত অবস্থানের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

২০০৪ সালের সুনামির পর প্রকাশিত অক্সফামের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া এবং ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুরুষের চেয়ে দ্বিগুন নারী মারা গিয়েছিলেন। সাঁতার জানা নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় কম, এছাড়া দুর্যোগের সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের রক্ষা করতে গিয়ে নারীরা আক্রান্ত হয়।

অর্ধেক পৃথিবী
এই বিপুল অসমতার কারণে প্রশাসন এবং অন্যান্য সংস্থা যারা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছে, তাদের পরামর্শ পরিকল্পনা আর নীতি বাস্তবায়নে নারীদের আরও বেশি যুক্ত করতে হবে।

এখনো জলবায়ু রক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় ও বৈশ্বিক উদ্যোগগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ ৩০ শতাংশের কম। স্থানীয় পর্যায়ে এই সংখ্যা বাড়েনি।

জলবায়ু গবেষক ডায়ানা লিভারম্যান বিবিসিকে জানান, জলবায়ু রক্ষা সংক্রান্ত উদ্যোগগুলোর নীতি-নির্ধারকের ভূমিকায় নারীদের অংশ গ্রহণ থাকে না বললেই চলে। যার ফলে, এই সংক্রান্ত সমস্ত আর্থিক সুবিধা পুরুষরাই ভোগ করে। নারীদের হাতে কিছু থাকে না। তিনি আরও বলেন, এই পৃথিবীর মানুষদের মধ্যে অর্ধেক নারী। তাই তাদেরকে নীতি-নির্ধারণের জায়গায় আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। তাই এ নিয়ে সচেতন হওয়া সবকিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

সারাবাংলা/এটি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

শরৎ বাংলাদেশের কোমল স্নিগ্ধ এক ঋতু
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৪

সম্পর্কিত খবর