বিজ্ঞাপন

পরিবেশ, নীতিমালা ও অর্থের ব্যবস্থা না হলে রফতানি আয় কমবে

August 19, 2018 | 7:26 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।। 

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ‘কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে চামড়া শিল্পে রফতানি আয় কমছে। উপযুক্ত পরিবেশ, সঠিক নীতিমালা ও পর্যাপ্ত অর্থের ব্যবস্থা না হলে আগামী দিনগুলোতে রফতানি আয় আরও কমতে পারে। তাই খাতটির আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে সরকারের আরও মনোযোগ দেয়া উচিৎ।’

রোববার (১৯ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর সীমান্ত স্কয়ারের ইমানুয়েলস কনভেনশন সেন্টারে ‘কমপ্লায়েন্স এন্ড লেদার এক্সপোর্ট প্রমোশন’ শীর্ষক এক কর্মশালায় অংশ নেয়া চামড়া শিল্পের ব্যবসায়ীদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে। বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন (বিটিএ) ও লেদার সেক্টর বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (এলএসবিপিসি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে দিনব্যাপী ওই কর্মশালার আয়োজন করে।

মূল প্রবন্ধে ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজির সহকারী অধ্যাপক নূর মুহাম্মদ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে লেদার সেক্টরে যেখানে ১ হাজার ১৩০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে, সেখানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা ১ হাজার ৮৫ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। সর্বশেষ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয় কম হয়েছে ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। রফতানি আয় কমার কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, কমপ্লায়েন্স অনুযায়ী চামড়া উৎপাদন না হওয়া, ট্যানারি শিল্পের স্থানান্তর ও ব্যবসায়ীদের মূলধন সমস্যা, কাঁচা চামড়ার মান হ্রাস, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের উৎপাদন পরিমাণ ও অপ্রতুল গবেষণার কারণে রফতানির পরিমাণ কমছে। রয়েছে সিইটিপি জনিত সমস্যাও।

বিজ্ঞাপন

রফতানি বাড়াতে কয়েকটি সুপারিশও তুলে ধরেন এই অধ্যাপক। নূর মুহাম্মদ বলেন, কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণ, প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা, প্রোডাকটিভিটি বাড়ানো, সঠিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, নতুন বাজার বাড়ানো ও আন্তর্জাতিক বাজারে ইতিবাচক ধারণা বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ বলেন, বিভিন্ন কারণে আমাদের রফতানি আয় কমছে। আগামীতে তা আরও নিম্নমুখী হতে পারে। ট্যানারী মালিকেরা সব দিক দিয়ে বিপদে পড়েছে। অনেক নামিদামি ব্রান্ড মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আমরা আস্থার সংকটে পড়েছি। তিনি বলেন, পণ্যের মানের কোন উন্নয়ন হচ্ছে না। আবার যেগুলো সঠিক উপায়ে উৎপাদন হচ্ছে তার সার্টিফিকেট দিতে দেওয়া যাচ্ছে না। টেকনিক্যাল জ্ঞান ও আধুনিক মেশিনারিজ আনতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ফান্ড আছে। আমরা তা নিতে পারছি না। কোনো একটা বিশেষ ফান্ড যদি দেয়া হয় তাহলে সকল সমস্যা সমাধান করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

বিটিএ’র সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, হাজারীবাগ থেকে যেভাবে সরানোর কথা ছিল অর্থাৎ ধাপে ধাপে সেভাবে নেয়া হয়নি। ফলে অনেক ক্রেতা হারিয়েছি আমরা। এছাড়া হেমায়েতপুরেও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত হয়নি। ব্রিড মিলের অনেক কাজ এখনও অসম্পূর্ণ। সেখানে রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। যেখানে সাধারণ মানুষের হেটে চলাও দুষ্কর সেখানে চামড়া নিয়ে ট্রাকগুলো কিভাবে চলাচল করবে? এসব রাস্তা যেন দ্রুত সংস্কার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

ফিনিশ লেদার সংগঠনের দিল জাহান ভূঁইয়া বলেন, সাভারে রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। সিইটিপি প্রস্তুত হয়নি। অনেক ট্যানারি গেলেও তারা কিন্তু পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে পারেনি। রয়েছে অর্থের সংকট। এসব কারণে আগামী বছরগুলোতে রফতানি আয় আরও নিম্নমুখী হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কিন্তু সরকারি বক্তব্য ও মিডিয়ার কারণে আমাদের কথা কেউ বিশ্বাস করে না।

বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের (বিপিসি) কো-অর্ডিনেটর সেলিম উদ্দিন বলেন, সমস্যা সমাধানে আমাদের একটু সময় লাগবে। কারণ মাত্রই আমরা স্থানান্তরিত হয়েছি। হাজারীবাগ থেকে যে কারণে স্থানান্তর করা হয়েছে হেমায়েতপুরে যেন তা না হয়। নদীর দূষণ প্রতিরোধ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু বলেন, চামড়া শিল্পে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এ অবস্থার উত্তরণে চামড়া শিল্পে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে। কারণ পোশাক খাতের উন্নয়নের পেছনের মূল কারণ কিন্তু কমপ্লায়েন্স। তিনি বলেন, লেদার শিল্পে আমরা ১৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিচ্ছি। এ বছরও তা অব্যাহত আছে। সিইটিপি’র ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র সাভারের উপর নির্ভর না করে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতেও চামড়া শিল্প নগরী গড়ে তোলা যেতে পারে। আপনারা ব্যক্তি উদ্যোগেও স্বতন্ত্র ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট গড়ে তুলতে পারেন।

এর আগে, সকালে প্রথম সেশনে ‘লেস-কাট হ্রাসসহ কাঁচা চামড়ার সঠিক ফ্লেয়িং ও সংরক্ষণ পদ্ধতি’ শীর্ষক সেশন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে খাতটির সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা অংশ নেয়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইএইচটি/জেএএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন