বিজ্ঞাপন

‘পোড়া ইটের ব্যবহার রোধে প্রতিশ্রুতি নয়, প্রয়োজন প্রতিক্রিয়া’

September 19, 2018 | 5:27 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: পরিবেশ দূষণকারী ভাটায় তৈরি পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধ করতে প্রতিশ্রুতি নয় প্রয়োজন এখন প্রতিক্রিয়ার। বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের আয়োজনে ‘পোড়া ইটের বিকল্প কংক্রিট ব্লক’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা পোড়া ইটে পরিবেশের ক্ষতি ও ভূমিকম্পের ঝুঁকিসহ নানা দিক তুলে ধরে ভবন নির্মাণে ২০২০ সালের মধ্যে এর ব্যবহার বন্ধের দাবি জানান।

বক্তারা বলেন, ‘পোড়া ইটের ব্যবহার রোধে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারে পক্ষ থেকে এটি বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। উপরুন্তু ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে উল্লেখিত নীতিমালা সংরক্ষণে যে বিল্ডিং অর্থরিটি নিয়োগের কথা ছিল তাও মানা হচ্ছে না। এটা চলতে থাকলে পরিবেশ ও ভূমিকম্প উভয়ের ঝুঁকিই বেড়ে যাবে।’ তাই তারা পরিবেশের প্রতি সহনশীল ইটের বিকল্প কংক্রিট ব্লক ব্যবহারে গুরুত্ব আরোপ করেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ রেডিমিক্স কংক্রিট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রকৌশলি মো. আবদুল আউয়াল। বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং রিচার্স ইন্সটিটিউটের এক তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশে এখন বছরে প্রায় ১৭.২ বিলিয়ন পিস ইট তৈরি হচ্ছে। প্রতি মিলিয়ন ইট তৈরিতে পোড়াতে হয় ২৪০ টন কয়লা। কয়লার পাশাপাশি গ্রামঞ্চলে বনভূমি ধ্বংস করে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ ও বাঁশ। ইটভাটাগুলো থেকে বছরে কম করে হলেও ৯.৮ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গত হচ্ছে বায়ুমণ্ডলে, যা দেশের মোট কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমনের প্রায় ২৩ শতাংশ।’

বিজ্ঞাপন

ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ একর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে ১৯৮৪ সালে দেশে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৩৮ হাজার একর। ১৯৯৭ সালে এসে কমে তা ১ কোটি ৭৪ লাখ ৪৯ হাজার একরে এবং সর্বোপরি ২০১২ সালে বাংলাদেশের আবাদি জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ৫৪ হাজার একর। প্রতি বছর জনসংখ্যা বাড়তির কারণে বাড়তি আবাসন,রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ ও প্রয়োজনীয় কাঠামো নির্মাণে ভূমির ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য, উন্নত-উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও ভবন নির্মাণে বালি, সিমেন্ট ও নুড়িপাথর দিয়ে ব্লক ব্যবহার করার উপর এ সেমিনারে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

বক্তারা জানান, কংক্রিট ব্লক ব্যবহারে একদিকে যেমন কার্বন নির্গমন থেকে পরিবেশ রক্ষা পাবে, অন্যদিকে রক্ষা পাবে ফসলি জমি। কংক্রিট ব্লক তৈরিতে নদী থেকে ড্রেজিং করা বালির সঙ্গে সিমেন্ট এবং পাথর কুঁচি ব্যবহার করা হয়। যা পোড়ানোর দরকার নেই। ইটের চেয়ে বহুগুণ এই কংক্রিট ব্লক টেকসই, স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব।

বিজ্ঞাপন

পরিবেশ রক্ষায় এ সেমিনার থেকে কিছু সুপারিশ করা হয়। এগুলো হলো, অবিলম্বে সব সরকারি ও আধাসরকারি ভবনে ইটের ব্যবহার বন্ধ করা। ২০২০ সালের পর ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে ভবন নির্মাণে ইট ব্যবহার বন্ধ করা। ২০২২ সালের পর সব জেলা শহরে ভবন নির্মাণে ইট ব্যবহার বন্ধ করা পাশাপাশি ইটের বিকল্প যেকোনো প্রকার ব্লক তৈরির ফ্যাক্টরিকে নূন্যতম ১০ বছরের জন্য সব ধরনের ট্যাক্স ও ভ্যাট এর আওতামুক্ত রাখা।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অমিতোষ পাল, সাধারণ সম্পাদক মতিন আব্দুল্লাহ, নগর পরিকল্পনাবিদ নিয়াজ রহমান, আদিলুর রহমানসহ অন্যরা।

সারাবাংলা/এমএ/এমএইচ/এমও

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন