বিজ্ঞাপন

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দৃষ্টিনন্দন ১০তলা ভবনে আ’লীগ

June 23, 2018 | 11:11 am

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দৃষ্টিনন্দন ১০তলা নতুন ভবন উপহার পেল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। প্রায় ৩৭ বছর পর পুরনো ঠিকানায় নতুন ভবন পেল ক্ষমতাসীন দলটি। শনিবার (২৩ জুন) সকাল ১০টার দিকে দলের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ভবনটির উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ পরেই কার্যালয় প্রাঙ্গণে আসেন। এরপর নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর সংগঠনের নবনির্মিত কার্যালয় নামফলক উম্মোচন করে ভবনটির উদ্ধোধন করেন। ভবনের ফলক উন্মোচনের পর সেখানে একটি বকুল গাছের চারা রোপণ করেন নেত্রী। এরপর ভবনের বিভিন্ন তলা কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ঘুরে দেখেন শেখ হাসিনা।

পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এক সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় দলটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলটিকে বেশ কয়েকবার কার্যালয় পরিবর্তন করতে হয়েছে। ১৫০ মোগলটুলী আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের আঁতুড়ঘর হলেও কারকুনবাড়ী লেনের একটি ভাড়া বাড়ি, ১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকায় ৫৬ সিমসন রোড, ১৯৬৪ সালে ৯১ নবাবপুর রোডে, এরপর সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলি থেকে পুরানা পল্টন ও সার্কিট হাউস রোড। সর্বশেষ ১৯৮১ সালে ১৭ মে দেশে ফিরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতি হিসেবে হাল ধরলে আওয়ামী লীগের ঠিকানা হয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। সময়ের সাথে আগামীর ভাবনা তথা আওয়ামী রাজনীতির তৃতীয় প্রজম্মের কথা মাথায় রেখে ২০১১ সালে নতুন কার্যালয়ের পরিকল্পনা মাথায় নেয় দলটি।

বিজ্ঞাপন

গতকাল শুক্রবার (২২ জুন) সকালে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে সম্পাদকমন্ডলীর সভা শেষে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ভবন উদ্ধোধনের সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তার আগে সকালে সম্পাদকমন্ডলীর সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় উদ্ধোধন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন কাদের। তিনি বলেন, এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দৃষ্টিনর্দন আধুনিক নয়ানাভিরাম ১০তলা ভবন উদ্ধোধনের কর্মসূচি নতুন ব্যঞ্জনা ও তাৎপর্যকে সমৃদ্ধ করবে। বঙ্গবন্ধু কন্যার দৃঢ়তা এবং কমিটমেন্টের জন্য আমাদের কেন্দ্রীয় প্রধান ভবন নির্মাণ হয়েছে। আমরা দলীয় তহবিলের টাকায় এই কার্যালয় নির্মাণ করেছি। এই কার্যালয়টি আধুনিক এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধাসহ নির্মাণ করা হয়েছে।

আধুনিক ভবনটিতে তিনটি লিফট রয়েছে। তিনটির মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্য বরাদ্দ থাকবে। ভবনটি শতভাগ রাজউকের নিয়ম মেনে তৈরি। এ ব্যাপারে ভবনটির নিমাণের তদারকির কাজে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত ইঞ্জিনিয়ার ইমান হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, এটি শতভাগ রাজউকের নিয়ম অনুযায়ী তৈরি করছি। কোথায় বিন্দুমাত্র ফাঁক-ফোকর নেই। বিল্ডিং কোড অনুযায়ী সামনের দিকে রাস্তা থেকে ১০ ফিট এবং পেছনের দিকে ১৭ ফিট জায়গা ছেড়ে মোট জমির ৬৫ শতাংশ ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ভবনে নকশা সূত্রে জানা যায়, ভবনটিতে পার্কিংয়ের জন্য স্বতন্ত্র দু’টি ফ্লোর (তলা) রয়েছে। একটি গ্রাউন্ড ফ্লোর (নিচতলা) এবং অন্যটি আন্ডার গ্রাউন্ড (মাটির নিচের তলা)। আন্ডার গ্রাউন্ডে পার্কিংয়ে যাওয়ার জন্য থাকবে কার লিফট। যে কোনো গাড়ি এসে গ্রাউন্ড ফ্লোরে ঢুকে লিফট দিয়ে নিচে যাবে। ভবনের উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব কোণে হেঁটে উপরে ওঠার জন্য রয়েছে দু’টি সিঁড়ি। পানি সরবরাহের জন্য থাকছে উপর-নিচে দু’টি স্থায়ী রিজার্ভড ট্যাংক। ভবনের ছাদে হেলিপ্যাডের ব্যবস্থাও রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় ৩৫০ জনের বসার ব্যবস্থায় তৈরি হচ্ছে কনফারেন্স হল। তৃতীয় তলায় হবে আরেকটি কনফারেন্স হল। এখানে ২৪০ জনের বসার ব্যবস্থা থাকবে। তিনতলার সামনের অংশটা ‘ওপেন স্কাই টেরাস’। এখানে কৃত্রিম বাগানের ফাঁকে ফাঁকে চেয়ার-টেবিল দিয়ে বসার ব্যবস্থা থাকবে। ভবনের চার ও পাঁচতলায় হবে বিভিন্ন কার্যালয়। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশাপাশি থাকবে সহযোগী এবং অন্যান্য সংগঠনের কার্যালয়। ছয়তলায় ছোট ছোট একাধিক কনফারেন্স ও মিটিং রুমও রয়েছে।

সাত, আট ও নয়তলায় নেতাদের রুম বরাদ্দ দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকদের জন্যও স্বতন্ত্র রুম বরাদ্দ থাকছে। এ ছাড়াও ভবনটিতে ডিজিটাল লাইব্রেরি, সেমিনার রুম এবং সাংবাদিক লাউঞ্জ রয়েছে। ভবনটিতে কার্টেন ওয়াল ও থাই অ্যালুমিনিয়ামের টেম্পারড গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে। এর সামনের দেয়ালের দুই থেকে তিনতলা পর্যন্ত সাইনবোর্ড দৃশ্যমান রয়েছে। সাইনবোর্ডের বামে ঠিক মাঝখানে দলীয় প্রতীক ‘নৌকার’ ছবি, ডানে লেখা রয়েছে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’। আর ডান পাশের নিচে থাকবে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। এছাড়াও সাইনবোর্ডের নিচে ডানপাশে (পূর্বদিকে) কনক্রিট দিয়ে বানানো হবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভী রহমানের ছবি। আর পশ্চিম পাশের দেয়ালে (পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে) লেখা থাকবে দলের চার মূলনীতি। নয়তলা ঘেঁষে লেখার উপরে থাকবে ‘অসাম্প্রদায়িক আর নিচে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ লেখা থাকবে। ছয়তলায় লেখা থাকবে ‘গণতন্ত্র এবং পাঁচতলায় থাকবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’।

একইভাবে পূর্ব পাশের দেয়ালে (পূর্ব-দক্ষিণ কোণে) উপর থেকে নিচে অক্ষর বিন্যাসে ভাষা আন্দোলন ’৫২ এবং ’৭১ মুক্তিযুদ্ধ শব্দ দু’টি। উদ্ধোধনের পর ধীরে ধীরে প্রস্তুত করা হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির ফ্লোরে বুলেট প্রুফ ডাবল গ্লাস লাগানো হয়েছে। ৮ম ফ্লোরেই তার জন্য কক্ষ বরাদ্দ থাকবে। ভবনটির স্ট্রাকচার ডিজাইন এবং তৈরির কাজ করছে ‘দি ডিজাইনারস অ্যান্ড ম্যানেজারস’ নামে একটি বেসরকারি ফার্ম। ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের নিজস্ব ভবন করার সিদ্ধান্ত হয়। এ ধারাবাহিকতায় ১৬ জুলাই ২০১৬ পুরনো ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু হয়। সেপ্টেম্বরে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। গত বছর আওয়ামী লীগের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তিস্থাপন করেন শেখ হাসিনা।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নতুন ভবন পাচ্ছে আওয়ামী লীগ

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনআর/এটি

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন