বিজ্ঞাপন

প্রশ্নফাঁস রোধে অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ নাজমুলের পরামর্শ

March 28, 2018 | 6:05 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে সবার আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতির বিজি প্রেসকে আধুনিকায়ন করতে হবে বলে জানিয়েছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করা ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি) শেখ নাজমুল আলম।

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্র্যাব) অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।

প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে তার নানা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন নাজমুল আলম। তিনি বলেন, আমরা বিজি প্রেসে সাদা পোশাকে ভিজিট করেছি। সেখানে দেখেছি, প্রশ্নপত্র কীভাবে তৈরি হয় বিজিপ্রেসের কেউ তা জানেন না। ডিজি থেকে শুরু করে পরবর্তী কর্মকর্তা-কর্মচারি কেউই না। এমন কী শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও কেউ জানেন না কিভাবে প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়। এটা শুধু জানে শিক্ষা বোর্ড। শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সারা দেশের শিক্ষকরা থাকে এই কমিটিতে। এই শিক্ষকরা বোর্ডে এসে প্রশ্নপত্র তৈরি করে দিয়ে যায়। আরেকটা কমিটি সেই প্রশ্নপত্রগুলি লটারির মাধ্যমে সিলেকশন করে সিলগালা করে রাখা হয়।

বিজ্ঞাপন

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বলেন, বিজি প্রেসে প্রশ্নপত্র ছাপানোর সময় ম্যানুয়াল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। সেখানে ১৫ থেকে ২০ জন লোক প্রশ্নপত্র গণনা করে প্যাকেটিং করা হয়। তারা এভাবে গণনা করতে করতে প্রশ্ন মুখস্থ করে নিতে পারে। সেখানে সিসি ৭২টি ক্যামেরা রয়েছে। যা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম। মাত্র ২৪০ জন লোক সেখানে কাজ করে। আমরা সুপারিশ করার পর ১০৮টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।

তিনি বলেন, অবিভাবকদের মানুসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। অবিভাবকরা জিপিএ ফাইভ পাওয়ার দিকে বেশি মনোযোগী। সন্তান কী শিখল সেদিকে নজর নাই। আবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি সিস্টেম পরিবর্তন করা দরকার। সবাই যাতে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হতে পারে। মেধার পরীক্ষা নিতে হবে।

নাজমুল আলম বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে অবজেকটিভ পদ্ধতি তুলে দিতে হবে। ১০০ ভাগ সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা হলে প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও লাভ নেই। এক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে না। সয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু করতে হবে। তা না হলে ইন্টারনেট বন্ধ করে কিছুই হবে না।

বিজ্ঞাপন

বিজি প্রেস আধুনিকায়ন না হলে সেখানে প্রশ্নপত্র ছাপানো ঠিক হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব ছাপাখানায় প্রশ্নপত্র ছাপানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আর সেটা হতে হবে ডিজিটাল। তবেই প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ সম্ভব।

এবারে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। সকাল সাতটার পরিবর্তে কেন্দ্রের দূরত্ব অনুযায়ী সময় নিরুপণ করে ডিসি অফিস থেকে প্রশ্নপত্র বিলি করতে হবে। সিলগালা করা তালা কেউ একবার খুললে আর লাগবে না। কাজেই কেউ ছবি তুলে বা ফটোকপি করে আবার তালাবন্ধ করবে তা হবে না। সকালবেলা তিন জনের সমন্বয়ে তালা খোলা হবে। একজন অনুপস্থিত থাকলেও খোলা যাবে না। কেউ না আসলে আগের দিনই বলতে হবে এবং আরেকজন সিলেক্ট হবে। এ ছাড়া এই প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত থাকবে তারা কোনো প্রকার ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না।

১৯৮২ সালের শিক্ষা আইনকে পরিবর্তন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ  ওই আইনে অপরাধীরা সহজেই ছাড়া পেয়ে যান। আমরা জানি, প্রশ্নপত্র যে ফাঁস করে, যে কিনতে আসে, যে কেনেন আর যে সহায়তা করেন এরা সবাই সমান অপরাধী। নতুন আইন হলে সবাই শাস্তির আওতায় আসবে বলে জানান ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার।

গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্য বক্তারা বলেন, শিক্ষা নিয়ে কোনো অভিযোগ উঠলেই সরকার অস্বীকার করত। বলতো, সব মিডিয়ার সৃষ্টি। তখন গুরুত্ব দিলে এখন এ ভয়াবহ অবস্থা হতো না। শিক্ষা ব্যবস্থায় অনৈতিকতা প্রবেশ করেছে। বাবারা টাকা দিয়ে প্রশ্নপত্র কিনছেন। শিক্ষকরা লাখ লাখ টাকা দিয়ে চাকরি নিচ্ছেন তাই তারা অসৎ পথ বেছে নিচ্ছেন।
ক্র্যাবের সাংগাঠনিক সম্পাদক এম এম বাদশার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্র্যাবের সভাপতি আবু সালেহ আকন।
সারাবাংলা/ইউজে/এমআই

বিজ্ঞাপন

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন