Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এ ছেলেমানুষি তুলি দিয়ে আঁকছি…


৫ মার্চ ২০২০ ১৬:৩৯

শহরে তখনও গ্যাস আসেনি। স্টোভের চুলা। রিকশাভ্যানে একটা বড় টিনের ড্রাম। সেই ড্রামের পেছনে পিতলের কল। সেই কল আবার তালা দিয়ে বন্ধ করা থাকত। কল দিয়ে কেরোসিন বের হতো। আমার খুব ভাল লাগত কেরোসিন কিনতে। কেরোসিনের গন্ধটা আমার প্রিয় ছিল। কাঁচের বোতলে করে কেরোসিন কিনতাম। তখনকার কেরোসিনের রঙ এখনকার মতো নীল ছিল না। হলদেটে ছিল।

*

তিনদিকে কাঁচ দেওয়া টিনের বাক্স। একটা লাইট জ্বলত বাক্সটার ভিতরে। সেই বাক্সটার ভিতরে লম্বা লম্বা করে সাজানো থাকতো প্যাটিস। সে এক বিরাট বিস্ময়, কেমন করে তার ছাড়া ওখানে লাইট জ্বলে! প্রতিদিন পেটিসওয়ালা আসত না। যেদিন আসত সেদিন মাথা নষ্ট!

*

আসত বাদামওয়ালা। তবে সে আসত বিকেলে। তার সামনে একটা প্লেট পেতে দিতাম। এক ছটাক বাদাম মেপে ঢেলে দিত প্লেটে। সেটা সমানভাবে বাসার সবার জন্য ভাগ হত। এরপর গরম গরম বাদাম খাওয়া।

*

আরেকটা জিনিসের নাম ভুলে গেছি। একটা পরিস্কার তেল চকচকে বাঁশের গায়ে মিষ্টি জাতীয় জিনিস লাগান থাকত। ওই বাঁশ থেকে মিষ্টি জাতীয় জিনিসটা চুইংগামের মত টেনে ঘড়ি, চশমা, পাখি এমন নানা কিছু বানাতেন গান গাইতে গাইতে। সেই বানানোর কী যত্ন! দেখার মতো!

*

শনপাপড়ি বিক্রি হতো একটা টিনের বাক্সে। বাক্সটা গামছা দিয়ে গলায় ঝুলান থাকত। একটা টিন দিয়ে কেটে কেটে পেপারের ওপর সেই শনপাপড়ি দিতেন চাহিদা মতন। হাওয়াই মিঠাইও এভাবে বিক্রি হতো।

*

কোজাক চকলেট বলে একটা চকলেট বিখ্যাত ছিল। ড্রামা সিরিজের নায়ক, কোজাকের মাথা টাক ছিল। তার নামানুসারে এই চকলেট!

*

হজমি বলে কয়লার মতো একটা অদ্ভুত জিনিস ছোট্ট ছোট্ট প্যাকেটে বিক্রি হতো। মুখে দিলে জিভটা কালো হয়ে যেত। এই জিনিস আমি পরে অনেক খুঁজেছি। পাইনি। এটার কথা মনে হলে মুখের ভেতরে এখনও পানি আসে।

*

মাথায় করে কাঠের বাক্সে নিয়ে আসত আইসক্রিম। আইসক্রিম তিন রকম ছিল- বরফের আইসক্রিম, নারকেলি আইসক্রিম আর দুধমালাই। আইসক্রিমওয়ালা এসে কাঠের বাক্সের ওপরের খাপটা ঠাসঠাস করে বাড়ি দিত আর ‘আইসক্রিম আইসক্রিম’ বলে হাঁক দিত। বরফের আইসক্রিমটা চাইলে গোলা বানিয়ে দিত। প্লাস্টিকের মধ্যে মিষ্টি বরফটা ঢুকিয়ে ফেলত। এরপর বাক্সের খাপটা দিয়ে বাড়ি দিয়ে দিয়ে গুড়া করে ফেলত আইসক্রিমটা। এরপর প্লাস্টিকের ওপর দিয়ে হাত দিয়ে জোরে জোরে চাপ দিয়ে নানা আকৃতি করে দিত।

*

লেইস-ফিতাওয়ালা চুড়ি, আলতা, কানের দুল, রাবার, লেইস, চুলের ফিতা, ক্লিপ নানা ধরনের জিনিস নিয়ে আসত। হাতে একটা কাঠের বাক্স, যার উপরে কাঁচ দেওয়া থাকত। কাঁধে কাপড়ের বোচকা। বোচকার মধ্যে থাকত কাপড়। ওসব কেনার চেয়ে বাক্সের ভেতরে গুছিয়ে রাখা সারি সারি রঙিন বাহারি জিনিসগুলো দেখতে বড়ো ভালো লাগত।

*

কটকটি বলে দারুণ স্বাদের একটা জিনিস পাওয়া যেত। খয়েরি রং। মিষ্টি, পোড়া পোড়া স্বাদ। কটকটি কিনতাম জমানো ওষুধের শিশি, পুরোনো খাতা-বই, পেপার এসব দিয়ে। টাকা দিয়ে কটকটি কিনেছি বলে মনে পড়ছে না। এই জিনিস এখন আর পাওয়া যায় কি না জানি না।

*

ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে ছাদ থেকে অনেকে পড়েছে। ফলে ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে আম্মার কঠিন নিষেধাজ্ঞা ছিল। তারপরও যে লুকিয়ে ওড়াইনি তা নয়, তবে তা পাড়ার মাঠে।

*

ওহ, আমার সবচেয়ে পছন্দের জিনিসটার কথা বলতেই ভুলে গেছি!

সেটা হলো বেলুন।

তখন একটা রকমেরই বেলুন ছিল। একটু লম্বাটে, বেলুন তখন মুখ দিয়েই ফুলাতে দেখেছি। গ্যাস বেলুন যখন আসল, সে তো আরেক বিষ্ময়! কারও হাত থেকে যদি ছুটে যেত, তাহলে আমরা আকাশের দিকে তাকিয়ে বেলুন যেদিকে যায় সেদিকে এগিয়ে যেতাম।

বেলুন যাচ্ছে…আমরাও যাচ্ছি…

ওই উড়ে যাওয়া গ্যাস বেলুনের মতই দূরে এখন আমার শৈশব… দেখা যায়, কিন্তু ছোঁয়া যায় না।

লেখক: প্রযোজক, দীপ্ত টিভি।

কটকটি কল কেরোসিনের কল বেলুন হাওয়াই মিঠাই


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভূতের গলির বাসায় মিলল বৃদ্ধের মরদেহ
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০০

সম্পর্কিত খবর