Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বছরজুড়ে বিজ্ঞানে আলোচিত যত


২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:২৭

২০২০ সালে বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় অবদান করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন আবিষ্কার। এছাড়া নভেল করোনাভাইরাস সম্পর্কে অধিকতর গবেষণা, ভাইরাসটি সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য সন্ধান ইত্যাদি এ বছর জুড়ে বিজ্ঞানীদের ব্যস্ত রেখেছে। করোনাভাইরাস মহামারির এ বছরে— এর বাইরেও বিজ্ঞানে কিছু দারুণ ঘটনা ঘটে গেছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক সেরকম কয়েকটি ঘটনা-

সমুদ্রে সবচেয়ে লম্বা প্রাণীর সন্ধান
এ বছরের এপ্রিলে সমুদ্রে সবচেয়ে লম্বা প্রাণীর সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ প্রাণীটি লম্বায় সমুদ্র দানব নীল তিমির চেয়েও দ্বিগুণ। এটিই সমুদ্রে দীর্ঘতম প্রাণী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রাণীটি মূলত একটি জেলিফিশ। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন,  এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০ ফুট বা ৪৫ মিটার।

গত এপ্রিলে শ্মিট ওশান ইনস্টিটিউটের কয়েকজন গবেষক অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম প্রান্তে গভীর সমুদ্রে সাবমেরিনে থেকে সামুদ্রিক প্রাণী নিয়ে গবেষণা করছিলেন। সমুদ্রে ওই অঞ্চলের প্রাণীগুলোর গতিবিধির উপর লক্ষ্য রাখছিলেন তারা। পাশাপাশি নতুন কোনো প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যায় কি না তাও ছিলো উদ্দেশ্যে। হঠাৎ সাবমেরিনে স্থাপিত কম্পিউটার স্ক্রিনে অদ্ভুত এক প্রাণীর অস্তিত্ব ধরা পড়ে। বিজ্ঞানীরা দেখেন—এ প্রাণীটি তিমির চেয়েও লম্বা। মাপজোক করে যার দৈর্ঘ্য জানা যায়, ১৫০ ফুট। প্রাণীটি এক ধরনের জেলিফিশ। যেটি সমুদ্রের ওই অঞ্চলে গোল হয়ে ঘুরছিল।

মঙ্গল গ্রহের সবচেয়ে কাছাকাছি গেলো গাড়ি
এ বছরের অক্টোবরে মঙ্গলগ্রহের সবচেয়ে কাছাকাছি যেতে পারলো কোনো গাড়ি। মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্কের টেসলা ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি রকেটে করে ২০১৮ সালে মঙ্গলের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছিল। গত অক্টোবরে গাড়িটি পৃথিবীর নিকট প্রতিবেশী মঙ্গলগ্রহের খুব কাছে চলে যায়। রোডস্টার গাড়িটির চালকের আসনে ছিলো স্টারম্যান নামের একটি রোবট।

ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স ও মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার যৌথ প্রয়াসে এ সফলতা আসে। তবে মঙ্গলগ্রহের কাছে শুনতে যতটা কাছে মনে হয় আসলে ততটা নয়। গাড়িটি মঙ্গলগ্রহের ৫০ লাখ মাইলের মধ্যে পৌঁছেছিল। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওই দূরত্ব থেকে নাকি মঙ্গলগ্রহকে দেখা যাচ্ছে চাঁদের ব্যাসের দশ ভাগের এক ভাগ।

ওজন স্তরে সবচেয়ে বড় গর্ত
এ বছরে করোনাভাইরাস ছাড়াও আরেক খবর ওয়াকিবহাল মহলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। গত এপ্রিলে উত্তর মেরুর ওজন স্তরে আবারও একটি গর্ত দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা জানান, এ গর্তটি এ যাবতকালের সবচেয়ে বড়। যা কি-না গ্রিনল্যান্ডের আয়তনের চেয়েও তিন গুণ বড়। আর তাতেই চিন্তার ভাঁজ পড়ে বিজ্ঞানীদের কপালে। কেননা ওজন স্তরে এরকম গর্ত মোটেও ভালো কিছু নয়। ওজন স্তর অতিবেগুনী রশ্মি শোষণ করে পৃথিবীকে নিরাপদ রাখে। ওই গর্তের ফলে ওই এলাকায় অতিবেগুনী রশ্মির বিকিরণের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। তবে আশার কথা হলো—কিছুদিন পর নিজ থেকেই পূরণ হয়ে যায় গর্তটি।

একটি তারার হারিয়ে যাওয়া
এ বছর এমন এক ঘটনা ঘটেছে যা জোতির্বিজ্ঞানীদের নতুন এক অভিজ্ঞতা দিয়েছে। আকাশ থেকে গোটা একটি তারা হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে এবার। ৭৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের একটি নক্ষত্রকে ২০ বছর ধরে নজরে রাখছিলেন জোতির্বিজ্ঞানীরা। এটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করছিলেন তারা। এ বছর হঠাৎ তারা খেয়াল করলেন— নক্ষত্রটি আর দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ যেনো সব টেলিস্কোপ থেকে হারিয়ে যায় তারাটি। ধারণা করা হচ্ছে বৃহৎ কৃষ্ণগহ্বরে হয়ত পতিত হয়েছে নক্ষত্রটি।

মানবদেহে নতুন অঙ্গের সন্ধান
মানবদেহ যে কত জটিল তাই যেন আবার মনে করিয়ে দিলো এ আবিষ্কার। শতাব্দীর পর শতাব্দী গবেষণার পরেও নাকি এখনও মানবদেহে রয়েছে অজানা অঙ্গ। হ্যাঁ, এ বছরের অক্টোবরে বিজ্ঞানীরা মানবদেহের নতুন এক অঙ্গের সন্ধান পান। নেদারল্যান্ডসের একদল বিজ্ঞানী প্রোস্টেট ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করার সময় মানুষের গলায় একটি নতুন অঙ্গ খুঁজে পেয়েছেন। অঙ্গটি লালা গ্রন্থির একটি অংশ যা নাকের আড়ালে লুকিয়ে আছে। বিজ্ঞানীরা জানান, লালা গ্রন্থির একটি গুচ্ছ নাকের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে। যা এতদিন উপেক্ষিতই ছিলো।

প্লাস্টিক খেকো সুপার-এনজাইমের আবিষ্কার
প্লাস্টিক পরিবেশের এখন সবচেয়ে বড় হুমকির একটি। প্রায় প্রতিটি দেশে এর ব্যবহার সবক্ষেত্রে। পণ্যের মোড়ক ও বোতল থেকে শুরু করে আসবাবপত্র পর্যন্ত এখন প্লাস্টিকের দখলে। এতে যে পরিবেশের সর্বনাশ হচ্ছে বারবার জোড় গলায় বলে আসছেন বিজ্ঞানীরা। তবে খুব কম দেশই প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহারে অগ্রগতি দেখিয়েছে।

এ বছর এই সর্বনাশা প্লাস্টিকের সমস্যা নিরসনে বিজ্ঞানই দিয়েছে এক দারুণ সমাধান। বিজ্ঞানীরা একটি সুপার-এনজাইম আবিষ্কার করেছেন, যা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে প্লাস্টিকের বোতল বা মোড়ক খেয়ে ফেলবে।

এই সুপার-এনজাইম এমন একটি প্রোটিন যা পাওয়া যায় জীব কোষ থেকে। এটি ব্যাকটেরিয়া বা অণুজীবের দেহে পাওয়া গেছে যা প্রাকৃতিকভাবেই প্লাস্টিক খেয়ে ফেলতে পারে। আশা করা হচ্ছে সুপার এনজাইমটি বিশ্বে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা কমাতে পারবে।

বছরজুড়ে মারাত্মক করোনার রাজত্ব
২০১৯ সালের শেষ নাগাদ অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহরে প্রথমে এক অজানা ভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। চীন কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা প্রকাশ করে জানায়, ভাইরাসটি অত্যন্ত সংক্রামক। উহান শহরে কড়া লকডাউন জারি করে বেইজিং। তবে দুর্ভাগ্যবশত শহরটি থেকে দ্রুতই চীনের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে এ ভাইরাস। একে একে ইউরোপ-আমেরিকা- আফ্রিকা আক্রান্ত হতে থাকে। যদিও করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রথম শনাক্ত হয় ২০১৯ সালে, তবে ২০২০ সালই এ ভাইরাসের সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী।

২০২০ সালকে বলা চলে একটি অপরিচিত বছর। বছরটির শুরু আর দশটা বছরের মতো হলেও ফেব্রুয়ারি থেকে গতিধারা বদলে যেতে শুরু করে। মার্চের শুরু থেকেই সারা বিশ্ব এক অজানা-অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কার পৃথিবীতে রূপ নেয়।  ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারি বলে ঘোষণা দেয়। এর পরপরই চোখের পলকে বিশ্ব যেন পালটে যেতে শুরু করে। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ভাইরাসটি সারা বিশ্বে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীর প্রায় সবকটি দেশেই ভাইরাসটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এ বছর অণুজীব বিজ্ঞান বলুন আর চিকিৎসা বিজ্ঞান বলুন—সবচেয়ে বড় আলোচিত কিন্তু এই করোনাভাইরাস।

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার
করোনাভাইরাস মহামারি ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নিলেও বিজ্ঞানীরা জানান, ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতেই হবে, না হলে গণ সংক্রমণ চলতেই থাকবে। তাই বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান মাথাবেঁধে এ ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারে নেমে পড়ে। নামজাদা ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অন্য কাজ বাদ দিয়ে ভ্যাকসিন আবিষ্কারে মন দেয়।

কোভিড-১৯ ভাইরাসটি একেবারেই নতুন ধরনের হওয়ায় এর কোনো ওষুধ নির্ণয় করা খুবই দূরহ হয়ে পড়ে। ফলে প্রতিষেধক আবিষ্কার করা আরও জরুরি হয়ে ওঠে। তবে মাত্র এক বছরের মাথায় এ ভাইরাসের একাধিক ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুমোদন পেয়েছে। আরও কয়েকটি রয়েছে অনুমোদনের অপেক্ষায়। এটি এ বছরে বিজ্ঞানের বড় এক সাফল্য। আগামী বছর ভ্যাকসিনের কল্যাণে পৃথিবী আবারও সুস্থ হয়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা।

২০২০ সালতামামী টপ নিউজ বিজ্ঞানে আলোচিত যত সালতামামী ২০২০


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর