Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়, যার নামের সাথেই জড়িয়ে বিতর্ক

জুয়েল সরকার
৬ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৫০

পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়। তার নামের সাথেই জড়িয়ে আছে হাজার বিতর্ক। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় ছিলেন একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা ব্যারিস্টার, পাঞ্জাবের প্রাক্তন রাজ্যপাল ও ভারতের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। কখনও বিরোধী দলের নেতা, কখনও শাসক দলের কাণ্ডারী, কখনও দলের মধ্যে বিদ্রোহীসহ নানা ভূমিকায় তাকে দেখা গেছে। তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তার মন্ত্রীসভার মন্ত্রীদের দুর্নীতির তদন্ত করতে ওয়াংচু কমিশন বসিয়েছিলেন। আবার মতবিরোধের কারণে কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে নবকংগ্রেস গঠন করেছিলেন।

১৯২০ সালের ২০ অক্টোবর তৎকালীন পূর্ব বাংলার মুন্সীগঞ্জ জেলায় হাঁসাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে ডা.বিধান চন্দ্র রায়ের মন্ত্রী সভায় যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। অশোক কুমার সেনের হাত ধরে তিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন। এরপর ১৯৬০ সালে তিনি প্রথমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছিলেন।

১৯৭১ সালে তিনি ভারতের শিক্ষা ও যুব কল্যাণমন্ত্রী হয়েছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাকে পশ্চিমবঙ্গ বিষয়ক বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়। তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়তে তাকে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায় পাঠান। সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় ৭২ থেকে ৭৭ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পরবর্তী সময়ে তিনি ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত, ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পাঞ্জাবের রাজ্যপাল হিসেবে অত্যন্ত দতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশের মানুষের নজর কাড়েন। সব কিছুতেই তিনি বরাবর ছিলেন প্রকৃতই একজন রাজনৈতিক অভিভাবক, বলিষ্ঠ, সাহসী এবং নির্ভীক প্রশাসক।

সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় জীবনের শেষ কয়েক বছর সক্রিয়ভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এমনকি কংগ্রেসের সঙ্গেও না। কিন্তু, কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা-নেত্রীরা তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। তিনি তাদের সব রকম পরামর্শ দিতেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগেও তিনি রাজ্যপালের বাসভবন রাজভবনে গেছেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণের সঙ্গে দেখা করে জঙ্গলমহলে যৌথবাহিনীর অভিযান এবং সিপিএম-এর সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে অভিযোগ জানান।

বাগ্মী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের আইনের ওপর ব্যুৎপত্তি ছিল অসাধারণ! রাজনীতির জগৎ ছাড়াও সারা ভারতে উচ্চ ন্যায়ালয়ে আইনজীবী হিসেবে তার অনেক সম্মান ছিল এবং তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলায় লড়েছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত অমায়িক এবং নানান বিষয়ে তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করে যেতে পারতেন।

রাজনৈতিক মহলে সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় সবার কাছে ‘মানুদা’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। অন্যদিকে, তিনি ছিলেন একজন ক্রীড়ামোদীও। খেলার মাঠে এক সময় তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল এবং তিনি ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড অব বেঙ্গল (সিএবি)-র প্রেসিডেন্টও ছিলেন। জীবনের শেষ দিকে তিনি একটি আত্মজীবনী লিখেছিলেন। এ আত্মজীবনীতে তিনি ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থা, শাহ কমিশন, নকশাল আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা নিয়ে অকপটে অনেক কথা বলেছিলেন। ২০১০ সালের আজকের দিনে (৬ নভেম্বর) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এক শ্রেণীর তরফে সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়কে ভিলেন প্রতিপন্ন করার চেষ্টা হলেও, ইতিহাস অন্য কথা বলে। তার সবটাই কালো নয়।

লেখক: উন্নয়নকর্মী

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

ইতিহাস-ঐতিহ্য জুয়েল সরকার ফিচার সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়- যার নামের সাথেই জড়িয়ে বিতর্ক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর