Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্র্যাক প্লাটুনের বীরত্বগাঁথা ‘অপারেশন ডেসটিনেশন আননোন’

রহমান রা’আদ
২৫ আগস্ট ২০২৩ ১৭:৩১

হাইডআউট, ধানমন্ডি ২৮। আগস্ট ২৪, ১৯৭১। রাত। কন্ট্র্যাক ব্রিজ খেলছিল স্বপন, বদি, কাজী আর আলম। হঠাৎ করেই ক্ষেপে গেল বদি, “ধুর, এভাবে বসে থাকতে থাকতে হাতে পায়ে জং ধরে গেল। কালকেই শহরের ভেতর একটা বড়সড় অপারেশন করা লাগবে, খুচরা ঠুসঠাস আর ভালো লাগছে না। দেয়ার হ্যাজ টু বি সাম সিরিয়াস ক্যাওস অ্যারাউন্ড দ্যা সিটি… পাকিস্তানীগুলো তো আরাম-আয়েশে ঘুরছে-ফিরছে, দেখে সহ্য হয় না…।”

প্রস্তাবটা মনে ধরে সবার। ১৯শে আগস্ট সিদ্ধিরগঞ্জ অপারেশনটা ফেইল করার পর আসলেই বড় আকারে আর কোনও অপারেশন হয়নি। পাকিস্তানীদের একটা ঝাঁকুনি দেওয়া খুব দরকার। রাত একটায় প্ল্যান ফাইনাল হলো। দুইটা আলাদা টিম যাবে। একটা টিম মগবাজারে চীনা কনস্যুলেট অফিস আর ধানমন্ডি-২০ এর চীনা ডিপ্লোম্যাটের বাড়ির সামনে অপারেশন চালিয়ে রাজারবাগ ফিরবে, তারপর সেখানে অপেক্ষমাণ সেকেন্ড টিমটার সঙ্গে মিলে নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যবস্তুতে টানা আক্রমণ চালাবে, তারপর জিন্নাহ এভিনিউর পাকিস্তানীদের অবস্থানগুলা উড়িয়ে আবার ধানমন্ডি ফিরবে। এই পুরো অপারেশনের সময়ে সম্ভব হলে রাস্তায় যেখানেই পাকিস্তানী পাওয়া যাবে, সেখানেই ব্রাশ-ফায়ার হবে চলন্ত গাড়ি থেকে। দুইটা গাড়ি হাইজ্যাক করা হবে, সঙ্গে অটোমেটিক আর্মস এন্ড এমিউনিশন। দেয়ার উইল বি কমপ্লিট ক্যাওস টুমরো, পাকিস্তানীগুলোর দম নিতে দেওয়া হবে না, রিমেম্বার!

পরের দিন। ২৫ আগস্ট। বিকেলে ধানমন্ডি ৪ নম্বর রোডে দুজন হ্যান্ডসাম তরুণকে হাওয়া খেতে দেখা গেল। পোশাক-পরিচ্ছদে আধুনিক ছেলেদুটো একটার পর একটা বেনসন এন্ড হেজেস ধরাচ্ছে আর খোশগল্প করতে করতে এগুচ্ছে। ৭ নম্বর রোডে ঢোকার পর হঠাৎ তারা বেশ ব্যস্ত হয়ে ফুটপাত ছেড়ে নেমে পড়লো রাজপথে। অপেক্ষাকৃত হালকা-পাতলা ছেলেটা জরুরি ভঙ্গিতে ঠিক রাস্তার মাঝ বরাবর পথ আগলে দাঁড়াল। বাধ্য হয়ে সাদা রঙয়ের মাজদা গাড়িটা থেমে গেল। লম্বা গোঁফওয়ালা অন্যজন ড্রাইভারের সিটে কাছে এসে বললো, “স্যার, দারুণ বিপদে পড়েছি, আপনার জরুরি সাহায্য দরকার।”

ওদিকে হালকা-পাতলা ছেলেটা ততক্ষণে অন্যপাশের জানালা দিয়ে মাথা গলিয়ে দিয়েছে ভেতরে। হাসিমুখে ড্রাইভিং সিটের পাশে বসে থাকা ফুটফুটে বাচ্চাটার সঙ্গে দুষ্টুমি শুরু করে দিয়েছে। ড্রাইভিং সিটের সুদর্শন ভদ্রলোকের চোখে সংশয় আর সন্দেহ, “কী বিপদ? আমি কী করতে পারি?” ততক্ষণে তরুণ দুজনের চোখ গেল ভদ্রলোকের পায়ের দিকে, বেচারা পা’টা বিপদজনক ভঙ্গিতে এক্সিলেটরে চাপ দিতে যাচ্ছেন।

পলকের মধ্যে ভোজবাজির মত হালকা-পাতলা বদির হাত ফুড়ে বেরিয়ে এলো একটা চীনা পিস্তল। মুখে তখনো অমায়িক হাসিটুকু লেগেই আছে, “যদি কিছু মনে না করেন স্যার, আপনার গাড়িটা আমরা আজ সন্ধ্যার জন্য ধার নিতে চাই।” আতঙ্কে ভদ্রলোকের মুখ টকটকে লাল হয়ে গেল, গাড়িটা আস্তে আস্তে এক ফুট দু’ফুট করে থেমে গেল রাস্তার পাশে। কারণ ততক্ষণে পিস্তলের ঠাণ্ডা নলটা শিশুটার দিকে তাক করে হাসিখুশি বদি জানতে চাইছে, “বাচ্চাটা তো খুবই সুন্দর। কার বাচ্চা স্যার? আপনার? যাচ্ছেন কোথায় আপনারা?”

ততক্ষণে আলম গাড়ির চাবি খুলে হাতে নিয়েছে। ভদ্রলোক কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, “দয়া করে ওর কোনও ক্ষতি করবেন না, গাড়িটা চাচ্ছেন, নিয়ে যান।” বদি সঙ্গে সঙ্গে তাকে অভয় দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, তিনি বাঙালী কিনা। সম্মতিসূচক মাথা নাড়তেই বদি ওপাশের দরজা খুলে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আদর করে লোকটার কোলে দিয়ে বললো, “আপনি কিচ্ছু চিন্তা করবেন না স্যার। একে নিয়ে নেমে যান, যথাসময়ে আপনার গাড়ি পেয়ে যাবেন। আমরা গেরিলা, বিশেষ প্রয়োজনে আপনার গাড়িটা ধার নিচ্ছি। তবে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে পুলিশকে গাড়ি হাইজ্যাকের খবর দেবেন না, নইলে আপনাকে আমরা খুন করতে বাধ্য হবো। সাবধান, দু’ঘণ্টার আগে পুলিশ খবর পেলে কিন্তু আমরা জেনে যাবো, আপনি মারা যাবেন।”

পশ্চিম আকাশে ততক্ষণে দিনের আলো ম্লান হয়ে এসেছে। হাইজ্যাক করা মাজদা গাড়িটার স্টিয়ারিং ধরে বসলো আলম, আর তার এসএমজিটা নিয়ে বদি বসলো ঠিক তার পাশে। আলমের ঠিক পেছনে স্বপন। বাঁ দিকে কাজী কামাল উদ্দিন, আর মাঝখানে রূমি। রওয়ানা দেওয়ার আগে শাহাদাত চৌধুরীকে আলম বললো, “টার্গেট মোবাইল আর অপারেশনের নাম ডেস্টিনেশন আননোন রাখি, কেমন?” শাহাদাত চৌধুরী মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে বললেন, “সতর্ক থেকো, তোমাদের ফেরার অপেক্ষায় থাকলাম।”

সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিট। ২৫ আগস্ট, ১৯৭১। ধানমন্ডি হাইড আউট থেকে বের হয়ে মাজদা ৩২ নম্বরের কালভার্ট পেরিয়ে পশ্চিম দিকে আবাহনী মাঠ ছাড়িয়ে উপস্থিত হলো ২০ নম্বর রোডে চীনা ডিপ্লোম্যাটের বাড়ির সামনে। আফসোস, কোনও পাকিস্তানী সেন্ট্রি পাওয়া গেল না। তখন আলম গাড়ি ঘুরিয়ে চলে আসলো ১৮ নম্বর রোডে এক পাকিস্তানী ব্রিগেডিয়ারের বাড়ির সামনে। যেখানে পাওয়া গেল আয়েশি ভঙ্গীতে ডিউটিরত ৭-৮ জন পাকিস্তানী সেনাকে। চাপা গলায় আলম বললো, “ওকে, দেয়ার ইউ গো। জানোয়ারগুলো আমাদের নলের রেঞ্জে, ওদের জাহান্নামে পাঠানোর জন্য তোমাদের হাতে সময় আছে মাত্র তিন মিনিট। গাড়ি চালিয়ে সাত মসজিদ রোড দিয়ে ঘুরে আসবো, আসবার পথে ওরা পড়বে হাতের বাঁ দিকে। আমি কমান্ড দেবার সঙ্গে সঙ্গে বদি আর কাজি যথাক্রমে সামনের আর পিছনের জানালা দিয়ে টানা ব্রাশ-ফায়ার করবে। স্বপন আর রুমী নজর রাখবে রাস্তার দিকে, পুরো সময়টা। এভ্রিওয়ান আন্ডারস্ট্যান্ড?”

সবাই মাথা ঝাঁকাল, নিঃশব্দে চকচকে মাজদাটা মৃত্যুদূত হয়ে এসে দাঁড়াল বাড়ির গেটের সামনে, নিচু কিন্তু অসম্ভব তীক্ষ্ণ গলায় আলমের অর্ডার এলো, “ফায়ার”। শত্রুর বুক বরাবর বদি আর পেট বরাবর কামালের স্টেন দুটো গর্জে ওঠে। ঝাঁজরা হয়ে লুটিয়ে পড়ে, কয়েক মুহূর্তের মধ্যে জাহান্নামের কড়কড়ে টিকিট হাতে পেয়ে যায় আটটা পাকিস্তানী। ওদিকে ১৮ নম্বর রোড তখন জনশূন্য হয়ে পড়েছে, এক্সিলেটর দাবিয়ে সাঁই করে সেখানে থেকে বেরিয়ে যায় আলম। পেছনের সিটে রুমী আর স্বপন গৃহযুদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছে প্রায়। “ধুর মিয়া, খালি তোমারাই পাকিস্তানী মারবা, আর আমরা বইসা বইসা মজা দেখুম? এইটা কেমন ইনসাফ? এই অবিচার মানুম না।”

খোশ মেজাজে থাকা আলম হাসতে হাসতে বলে, “ঠিক আছে, তাহলে আবার ২০ নম্বরে যাই চলো। দেখা যাক, এইবার তোমাদের শুটিং প্র্যাকটিসের সুযোগ দিতে পারি কিনা!” আফসোস, ফাঁকিবাজ পাকিস্তানী সেন্ট্রিগুলো তখনও ফেরে নাই। কী আর করা, ৭ নম্বর রোড ধরে মিরপুর রোডে এসে উঠলো আলমের মাজদা। রাজারবাগে সেকেন্ড টিম অপেক্ষায় আছে, তাদের সঙ্গে মিলতে হবে, নিউ মার্কেট ধরে এগুতে গিয়ে পাঁচ নম্বরের কাছে এসে হঠাৎ প্রমাদ গুনলো আলম।

খবর অলরেডি পৌঁছে গেছে, একেবারে দুটি আর্মি ট্রাক আড়াআড়ি রেখে ব্যারিকেড দিয়ে বিশাল চেকপোস্ট বসিয়েছে ওরা। প্রত্যেকটি গাড়িতে জোর তল্লাশি হচ্ছে। সামনে পেছনে গাড়ির সারি, গাড়ি ঘুরিয়ে পালাবার কোনও উপায় নেই। হয় এই পাহাড়-প্রমাণ চেক পোস্ট উড়িয়ে চলে যেতে হবে, নাহলে ধরা পড়া নিশ্চিত। স্বপন আর বদি বললো, “অবস্থা তো ভালো ঠেকে না রে। বেরোতে পারবা?”

জবাব না দিয়ে আলম স্বপনকে দেখিয়ে বললো, “কর্নারে এলএমজি তাক করে শুয়ে থাকা সেনাটাকে যদি ফেলতে পারো, তাহলে আমি ওদিক দিয়ে বের হয়ে যেতে পারবো। পারবা?” স্বপন খালি গম্ভীর গলায় বললো, “রেঞ্জের মধ্যে আসতে দাও।” হঠাৎ রুমি বললো, “আর এদিকে বাম পাশে পাঁচ নম্বর রোডের মাথায় যে তিনজন অটোমেটিক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার কী হবে?” আলম বললো, “দেখছি, এবং ওটা সামলানোর দায়িত্ব বদি আর কাজীর। তারা যদি না পারে, তাহলে বাঁচার কোন সম্ভাবনা নাই।”

মাজদাটা ব্যারিকেডের কাছে আসার পর আলম বললো, “আমি স্রেফ একবার ‘ফায়ার’ কমান্ড দিবো, এন্ড উই গটা হিট অ্যাট দ্যা সেম টাইম… একসঙ্গে… এনিওয়ান ফেইলস টু রেসপন্ড টাইমলি, উই লুজ ইন দ্যাট ভেরি মোমেন্ট।”

বলতে বলতে আলম লাইন ভেঙ্গে আস্তে আস্তে ডান দিক বরাবর এগোতে লাগলো। তল্লাশি চালানো পাকিস্তানী সেনা দুজন চিৎকার করে উঠলো, “কিধার যাতা হারামজাদে, রোক্কো!” ডানে মোড় নেবার ইনডিকেটর লাইট জ্বলা কয়েকটি বিভ্রান্ত মুহূর্তই যথেষ্ট ছিল গেরিলাদের জন্য। পলকের ভেতর হতচকিত পাকিস্তানী সেনাদের বিস্মিত চেহারার সামনে বাম দিকে শার্প টার্নে পাঁচ নম্বর রোডের দিকে সজোরে মাজদাটা ঘুরিয়ে নিলো আলম। তার গলার রগ ফুড়ে বেরিয়ে এলো চিৎকার, “ফায়ার! ফায়ার!!”

গাড়ির বামে শুয়ে থাকা মিলিটারি পুলিশটা চাকার তলে পিষে যেতে যেতে বেঁচে গেল অসম্ভব ক্ষিপ্রতায় দেওয়া এক গড়ানে, কিন্তু জানালা দিয়ে স্টেনটা নিয়ে ঝুঁকে পড়ে ওকে খুঁজে বের করে কাজী কামালের করা নির্ভুল ব্রাশ-ফায়ার থেকে সে বাঁচতে পারলো না। বাঁচতে পারলো না স্তব্ধ হতচকিত একটা পাকিস্তানী সেনাও। ৮-১০ সেকেন্ডের এক চতুর্মুখি আক্রমণে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারা পড়লো তারা, কেয়ামত নেমে এলো যেন সেই চেকপোস্টটায়।

আর অকুতোভয় অসম সাহসে সদ্য বিশ পেরোনো কয়েকটা তরুণ সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত হয়ে হাজির হলো পাকিস্তানীদের ওপর। গাড়ির ভেতর একের পর এক পড়তে লাগলো সদ্য শেষ হওয়া কার্টিজ আর শেল, কেঁপে উঠলো পুরো এলাকা। তিনটা জানালা দিয়ে শিকারি বাজের ক্ষিপ্রতায় ওরা অটোমেটিক সাব-মেশিনগানগুলো ঘোরাতে লাগলো এদিক থেকে ওদিক, যেন মহাবীর ভীমের গদা, একটা সেনাকেও বাঁচতে দেবে না ওরা।

ব্যারিকেডটা স্রেফ উড়ে গেল, পড়ে রইল কেবল পৃথিবীর তথাকথিত পঞ্চম শ্রেষ্ঠ সেনাবাহিনীর ‘বীর পালোয়ানদের’ ঝাঁজরা দেহের অংশবিশেষ। মাছি গলতে না পারার মত কড়া ব্যারিকেড ভেঙ্গে বেরিয়ে এলো দুর্ধর্ষ গেরিলারা। জীবিত; গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে। এদিকে ততক্ষণে গাড়ি চলে এসেছে পাঁচ নম্বর রোডে। এই রোডটা গ্রিন রোডের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে, সুতরাং এখানেও আলম পেছনে শিকারি হাউন্ডের মত ছুটে আসা সম্ভাব্য পাকিস্তানীদের বিভ্রান্ত করতে চাইল। বাম দিকে ইনডিকেটর লাইট জ্বালিয়ে দিল, যেন মনে হয় তারা আবার ইউটার্ন নিয়ে গ্রিন রোড ফিরবে।

ঠিক যে মুহূর্তে গাড়িটা টার্ন করাবে আলম, হঠাৎ পেছনে সতর্ক দৃষ্টি রাখা রুমি চিৎকার করে গাল দিয়ে উঠলো, “লুক আউট! দেয়ার ইজ অ্যা জিপ। দ্যা বাস্টার্ডস আর ট্রায়িং টু ফলো আস!”

আর কিছু বলতে হলো না। আর কারোর কমান্ডের অপেক্ষায় থাকলো না রুমী নামের উনিশ বছর বয়সের অকুতোভয় গেরিলা। মুহূর্তের মধ্যে স্টেনটা তুলে নিয়ে পেছনের কুঁদো দিয়ে পেছনের উইন্ডশিল্ডটা ভেঙ্গে ফেললো, তারপর জানালা দিয়ে গুলি ছুঁড়তে আরম্ভ করলো অসম্ভব ক্ষিপ্রতায়। সঙ্গে সঙ্গে দুপাশে যোগ দিল কাজী আর স্বপন। তাদের মুহুর্মুহু ব্রাশে জীপটা দিশা হারিয়ে দড়াম করে বাড়ি খেল পাশের ল্যাম্পপোস্টে। মারা পড়লো সবগুলো। ড্রাইভারের লাশটা জানালা দিয়ে আধহাত বেরিয়ে ঝুলতে লাগলো পাকিস্তানীদের বীরত্বগাঁথার প্রতীক হয়ে…।

ততক্ষণে আলম মাজদা শার্প টার্ন নিয়ে ঘুরিয়ে ফেলেছে নিউমার্কেটের দিকে। আর তার তীক্ষ্ণ চালে পা দিয়ে দ্বিতীয় বারের মত বোকার মত পুরোপুরি বিভ্রান্ত তিনটা পাকিস্তানী ট্রাক আর একটা জিপ ওদের খোঁজে ঢুকল গ্রিন রোডে। মাত্র বেঁচে ফিরেছে সেদিকে খেয়াল নেই। গরম কার্তুজে ফোস্কা পড়ে ঘা হয়ে যাবার দশা প্রায় প্রত্যেকের শরীরে, অথচ হাঁটুতে ব্রেন নিয়ে চলা পাকিস্তানীদের বোকামীতে প্রাণ খুলে হাসতে থাকে পাঁচটা দুদর্মনীয় বঙ্গশার্দুল। “পাকিস্তানীগুলো শালার আর মানুষ হইল না, এতো বোকাও মানুষ হয়!” … কে বলবে, একটু আগে এরা পুরো শহরটা কাঁপিয়ে দিয়ে এসেছে?

শহীদ শাফী ইমাম রুমি এবং শহীদ বদিউল আলমের এটাই ছিল শেষ অপারেশন। এই অপারেশনটাই অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানীদের। তাদের পোষা কুকুর জামায়াতে ইসলামি আর ছাত্রসংঘের (বর্তমানে ছাত্রশিবিরের) সদস্যদের দ্বারা গঠিত আলবদরকে ওরা লেলিয়ে দিয়েছিল বাংলা মায়ের এই অকুতোভয় সন্তানদের খুঁজে বের করবার জন্য। মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের সার্বিক তত্বাবধানে আলবদরের নপুংসক রাজাকারদের দেওয়া তথ্যে চারদিন পর ২৯ আর ৩০ তারিখে পাকিস্তানীদের সাড়াশি অভিযানে ধরা পড়ে বদি, রুমি,আজাদ, জুয়েল, ইঞ্জিনিয়ার নজরুল, বকর, আলতাফ মাহমুদসহ আরও অনেকে। আজও ফিরে আসেনি ওরা। কেউই না।

আজ ২৫ আগস্ট। ‘অপারেশন ডেসটিনেশন আননোন’ সংঘটিত হবার ৫২তম বার্ষিকী। আজকের এই দিনে স্মরণ করি সেইসব অকুতোভয় শহীদ ও বিজয়ী গেরিলাদের, যাদের পাগলামিতে রচিত হয়েছিল কিংবদন্তী ইতিহাসের।

পরিশিষ্ট: অপারেশনটির কথোপকথনের অংশটি গেরিলাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার থেকে নেওয়া হয়েছে। পুরো বিবরণ লিখতে তথ্য সাহায্য নেওয়া হয়েছে যে বইগুলো থেকে:

১। একাত্তরের দিনগুলি/ জাহানারা ইমাম
২। ব্রেইভ অফ হার্ট/ হাবিবুল আলম বীর প্রতীক
৩। ঢাকায় গেরিলা যুদ্ধ ১৯৭১/ এশিয়াটিক সোসাইটি

সারাবাংলা/এজেডএস

অপারেশন ডেসটিনেশন আননোন ক্র্যাক প্লাটুনে রহমান রা'আদ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর