Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বসন্ত এলো গো

সাহিদা সাম্য লীনা
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:১২

‘পলাশ ফুটেছে, শিমুল ফুটেছে, এসেছে দারুণ ফাল্গুন মাস/ আমি জানি তুমি আসিবেনা ফিরে মিটিবেনা পিয়াস।’ এক প্রেমিকের এ এক আকুল কান্না। প্রিয়া তার গত বছরের বসন্তে বাহুডোরে মগ্ন ছিল, আজ এই বসন্তে প্রিয়া অন্যের ঘরণী!। বসন্ত এলেই বুঝি প্রিয়ার কথা মনে পড়ে। হুম; এবারও দুয়ারে হানা দিল বসন্তের আগুন। পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। বিপুল রোমাঞ্চ আর হলুদাভ ঐশ্বর্যের অধিকারী ঋতুরাজ বসস্তকে বরণ করে নিবার প্রথম দিন। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়-,‘ আজি দখিন-দুয়ার খোলা/ এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো…।

প্রকৃতি জানান দিয়েছে, বসন্ত এলো গো, বসন্ত জাগ্রত তোমার দ্বারে। কি মনে, কি বনে শিহরণ সর্বত্র। এসেছে ফুলের সৌরভে রঙিন হবার দিন, ফাগুনের আগুন ছোঁয়ায় নিজেকে হারানোর দিন। ফাগুনের আবহনে শীতের শুষ্কতা, জীর্ণতার দিন শেষ হয়ে গেছে। আর তাইতো প্রাণ ফিরে পাচ্ছে বিবর্ণ প্রকৃতি, জেগে উঠছে সে হারানো রুপ-লাবণ্যে। কবির ভাষায় ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত। ফুল ফোটার এই পুলকিত দিনে বন-বনান্তে, কাননে কাননে পারিজাতের রঙের কোলাহলে ভরে উঠবে চারদিক।’

বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। কচিপাতার সজীবতার আলোর নাচনের মতোই বাঙালীর মনেও লাগবে দোলা। বিপুল তরঙ্গ প্রাণে আন্দোলিত হবে বাঙালী মন। বাঙ্গালী জীবনে বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী। এ বসন্ত মাসেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালীর স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। বসন্তেই বাঙ্গালী মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল । তাই কেবল প্রকৃতি আর মনে নয়,বাঙ্গালীর জাতীয় ইতিহাসেও বসন্ত আসে এক বিশেষ মাহাত্ম নিয়ে। বসন্ত হয়ে উঠেছে এখন অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিরুদ্ধে এক অন্যন্য উৎসব।

বসন্ত জাগিয়ে তোলে ভালবাসার বোধ, দেয় মিলনের বার্তা । এমন লগ্নে প্রিয়জনের কাছে দেহ মন সঁপে দিতে ইচ্ছে জাগে। কালজয়ী কন্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দিনের আবেগী কন্ঠের ভাষায়,‘ সুখ বসন্ত দিল যে দেখা, আর তো যৌবন যায় না রাখা গো…।’ বসন্ত বাতাস ভাটি বাংলার বাউল আবদুল করিমকেও জাগিয়ে তোলে। উতলা বাউল তাই গেয়ে উঠেন,‘বসন্ত বাতাসে সই গো/ বসন্ত বাতাসে/ বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে…।’ এভাবে বসন্ত এলে মন আনচান করে। পুরনো বেদনা, হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি, ভালবেসে আবার তার পেছনে ছুটতে ইচ্ছা করে।

ফাগুনের প্রথম দিনে বাসন্তী রঙ্গের শাড়ি পরে পথে নামে তন্মী তরুণীরা । মনে তাদের কচি পাতার ঢেউ; কেমন এক ভাললাগা। যা কেবল বোঝে ফাগুন! তাদের খোঁপায়,গলায়, মাথায়, হাতের কব্জিতে থাকে ফুল। পুরো দেহ হলুদের বন্যা! সে বন্যায় ভাসেও অনেক মনের নৌকা। অসংখ্য রমণীর বাসন্তি সাজ রঙ্গে রঙ্গিন হয়ে উঠে রাজধানীর রাজপথ হতে শুরু করে পুরো বাংলাদেশের পথ-ঘাট, পার্ক, একুশের বইমেলায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি চত্বরের এলাকায়। সারাদেশে বিভিন্ন সংগঠন ও ইভেন্টের আয়োজনে এই বসন্ত উৎসব পালন করা হয় মহাসমারোহে। এখন তরুণরাও কম যায় না। তারাও আজ পরে বাসন্তী রঙ্গের পোশাক। প্রকৃতির ছোঁয়া নিতে তারাও বেরিয়ে পড়ে। বাংলা একাডেমীর অমর একুশে বইমেলায় প্রতিবছরই পরিণত হয় যুগল প্রেমিক-প্রেমিকাদের পদভারে। যেন এক সুরেলা তারে মিষ্টি কথার মিলনমেলা। একে অন্যের হাতে এদিন তুলে দেয় প্রিয় কোন কবিতার বই আর নয়তো ভালবাসার গল্প। অসাম্প্রদায়িক উৎসবের রঙ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।

সব মিলিয়ে অন্যান্য ঋতু বসন্তকে বরণ করে নিতে প্রতিবছরই বিশেষভাবে প্রস্তুত হয় দেশ। জাতীয় বসন্ত উৎসব পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলা, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর। আর পুরো দেশের অনেক আয়োজক কমিটি। স্কুল-কলেজেও এখন বসন্ত উৎসব হয়। কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে আয়োজন করা হয় শুধুই বসন্তের কবিতায়। যদিও এস.এস.সি পরীক্ষার কারণে বিশেষ একটি অংশ ব্যস্ত। তাদের ব্যস্ততায় ব্যাঘাত না ঘটানোই যেন সকলের উদ্দেশ্য হয়। কারণ যেকোন উৎসবগুলো শিশু-কিশোররা অনেক খেয়াল করে। অপ্রাপ্ত বয়সের এই অবুঝ শিশু যারা (বাংলাদেশের বর্তমান আইনের ঘোষনায়) তাদের মন-মানসিকতা যেন বসন্তের উদোম হাওয়ায় উড়তে না পারে সকলকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

সারাবাংলা/এসবিডিই

বসন্ত এলো গো সাহিদা সাম্য লীনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর