Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জীবনে একটি নাম বড্ড প্রয়োজন


২১ আগস্ট ২০১৯ ১২:৪৯

এ সময়টায় রেগে যাওয়া ঠিক হবেনা। কোনো ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ই রেগে যাওয়া ঠিক না – এটা দাদি বলেন। দাদির সব কথা উচিত মনে হয়না, এই যেমন তার ছেলের বৌদের সাথে তার খিটখিটে আচরণ। কিন্তু কিছু কথা ঠিকঠাক বলেন, এই যেমন সিন্ধান্ত নেবার সময় না রেগে যাবার ব্যাপারটা।

কাল সায়েমার বিয়ে হয়েছে। পরদিন সকালে, মানে আজ ঠিক রেগে যাওয়াটা শোভনীয় না। সিদ্ধান্তের ব্যাপার আছে। রেগে যাবার কিন্তু যথেষ্ট কারণ আছে। বিয়ের আগে শুনেছে, পাত্রের নাম নুরুল। তো সেই নাম বাড়ির লোকদের মুখে শোনা। নাম ঠিকঠাক, তাতে দোষের কিছু নেই। ঘটনা অন্যখানে।

আজ সকালে সে যখন স্বামীকে জিজ্ঞেস করলো,
‘এই বাড়ির নাম কি?’
– ‘বাড়ি কি মানুষ নাকি, বাড়ির কেমনে নাম থাকবে?’ স্বামীর চক্ষু চড়কগাছ।
‘মানুষের নামেই তো বাড়ির নাম, আপনার পদবী কি?’
-‘পদবী? ইয়ে পদবী নাই, নুরুল, নাম শুধু নুরুল।’ স্বামী মাথা চুলকায়।
‘তোমার পদবী নাই?’
-‘না মানে, বাপ্ তো জন্মের আগেই মরে গেলো, মামার বাড়িতে মানুষ … পদবীটা ঠিক … ‘

পদবী-ছাড়া স্বামী বাজারে দোকানে গেলো, বাজারের এককোণার এক ফলমূলের দোকানের মালিক সে। দোকান খোলবার সময় হলো।

সায়েমের বড্ড শখ ছিল স্বামীর একটি রাশভারী পদবী থাকবে। পদবী না থাকলে মানুষ ঠিক দাম দেয়না। চিরদিন, ফলের দোকানের শুকিয়ে যাওয়া কমলালেবুর মতন দামহীন হয়ে থাকতে হয়। বড্ড রাগ হচ্ছিলো। কিন্তু রেগে গেলে চলবেনা। বরং সিন্ধান্ত নেবার সময় শান্ত থাকতে হয়।

দুপুরের জন্য ভাত, ডাল, লালশাক, লাউয়ের খোসা ভর্তা, বেগুনপোড়া সর্ষের তেলে মাখালো। পাঁচ বাটিতে পাঁচ পদ নিয়ে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। এই সময় মানুষজন এই পথ দিয়ে বাজার যাতায়াত করে। পাশের বাড়ির মোল্লা চাচা বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে যাবার সময়, দাঁড়িয়ে যায়,

“কি নতুন বৌ, এই ভরদুপুরে রাস্তায় কি?”
– “চাচা ভাতটুকুন বাজারে পৌঁছে দেবেন?”
“নুরুলের কাছে?”
-“জ্বি নুরুল সিকদারের কাছে।”
“নুরুলের নামের শেষে সিকদার আছে? এই দেখো তো আমি জানতামনা, দাও দাও আমি দিয়ে দিচ্ছি, এই রোদে দাঁড়িয়ে থেকোনা।”
সায়েমা শুধু ভাতের বাটিটি দিলো, বললো, ‘চাচা তার কাছে যেয়ে বলবেন,
– “এই নাও নুরুল সিকদার তোমার ভাত, শুধু নুরুল বললে সে কষ্ট পায়।”
“নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই …”

এর পর, সেই পথ দিয়ে এর পর রানী মাসি যায়, জয়নাল যায়, অমুক যায়, তমুক যায় … তাদের সাথে সাথে ডাল, লালশাক, লাউয়ের খোসা ভর্তা, বেগুনপোড়ার বাটিগুলো এক এক করে ‘নুরুল’ এর কাছে যায়, বাটির সাথে সাথে, নুরুলের নাম যে ‘নুরুল সিকদার, এবং পুরো নাম ধরে না ডাকলে সে কষ্ট পায়’ এই বার্তাটিও বাজারে পৌঁছে যায়।

বেচারা নুরুল ঘটনার আকস্মিতায়, এবং এমন ভারী পদবীর ভার সামলাতে না পেরে কতদিন ঘোরে বেঘোরে দিন কাটিয়ে এখন তরতাজা। এমন বুদ্ধিমান বৌয়ের স্বামী হতে পেরে খানিকটা মুগ্ধ ও। সিকদার নামটি তার একাকী নামের সাথে বেশ মিলেমিশে মানিয়ে গেছে।

সত্যিই তো এ জীবনে একটি নাম বড্ড প্রয়োজন। এমন নাম, তেমন নাম, এই নাম, সেই নাম কিংবা সর্বনাম। একটি নাম সবারই বড় প্রয়োজন, আমরা সকলেই মাঝে মাঝে সময়ে, অসময়ে, এখানে, কখনো কখনো নানারকম নাম খুঁজে বেড়াই।

সারাবাংলা/এমএম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর