বিজ্ঞাপন

‘ফৌজধারী অপরাধ করেছেন সুফিয়া কামাল হল প্রভোস্ট’

April 21, 2018 | 9:21 pm

।। ঢাবি করেসপন্ডেন্ট ।। 

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি এবং মামলার ভয় দেখানো ‘ফৌজধারী অপরাধ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট এই অপরাধে আপরাধী। অবিলম্বে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

শনিবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘শিক্ষার্থীদের অনিরাপত্তায় উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিকবৃন্দের’ ব্যানারে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বাকী বিল্লাহ’র সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ঢাবির একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষক মোসাহিদা সুলতানা, লেখক ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ, অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, প্রকাশক রবিন আহসান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সায়মন রেজা পিয়াস, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা ফিরোজ আহমেদ, গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক লাকী আক্তার, ঢাবি ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামান্তা শারমিন।

বিজ্ঞাপন

মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, একজন আইনজীবী হিসেবে আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, গোয়েন্দা নজরদারি, মেয়েদের ছাত্রত্ব বাতিল করার হুমকি, এবং মামলার ভয় দেখানো-এই কাজগুলোর প্রত্যেকটি সুনির্দিষ্ট ফৌজদারী অপরাধ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী আইন পরিপন্থী কাজ করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব প্রক্টরের৷ হলের প্রভোস্ট হলে যে তিনি আইনের ঊর্ধ্বে তা কিন্তু নয় ৷ কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন চেক করাও অপরাধ ৷’

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে উল্লেখ আছে যে হলের প্রভোস্ট কী করতে পারেন আর কী করতে পারেন না। আমরা আন্দোলনের সঙ্গে আছি এবং থাকবো ৷

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষক মোসাহিদা সুলতানা বলেন ‘আমি এখানে শিক্ষক হিসেবে দাঁড়িয়ে কথা বলতে লজ্জা বোধ করছি ৷ আমরা সবসময় নিপীড়নের বিরুদ্ধে ৷ কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি বৈষম্যবিরোধী ন্যায্য আন্দোলন। এই আন্দোলনটি এখন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে ৷ বলা হয়েছে, গুজবের কারণে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিল ৷ এ ধারণা ঠিক নয়।  আসলে আন্দোলনটি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ৷’

সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘গতকালও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে মিছিল হয়েছে, এবং সেই মিছিলও যে শেষ হতে দেয়া হচ্ছে না সরকারের একের পর এক হঠাকারি সিদ্ধান্তের কারণে। তারা প্রথমে আন্দোলনকে স্বীকার করেনি, এটাকে অবৈধ বলেছিল, এবং তাদের যে একমাত্র চেতনার অস্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা; সেই চেতনার হাতে লাঠি, টিয়ারশেল, বন্দুক, গুলি এবং গুজবকে এই চেতনার হাতে পরিয়ে এই আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছিল।’

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মধ্য দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আবার সেদিন সংসদে প্রধানমন্ত্রী দাবি মেনে নিয়েছিলেন, তার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা হয়েছে আন্দোলন বৈধ ছিলো, আন্দোলন ন্যায্য ছিল, আন্দোলন যৌক্তিক ছিলো। তাহলে আজকে এই ষড়যন্ত্রগুলো কেনো? কেন আন্দোলন করার কারণে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হবে, মামলা হবে, হয়রানি হবে? গভীর রাতে হল থেকে মেয়েদের বের করে দেয়া হয়েছে। হল তো আপনার বাড়ি নয় যে যখন খুশি তখন আপনি কাউকে বের করে দেবেন?’

তিনি আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আন্দোলন এটাকে চাকরীর আন্দোলন বলছেন অনেকেই, ৫২ সালের আন্দোলনও তো চাকরির আন্দোলন, যে পাকিস্তানিরা উর্দু ভাষার নামে বাংলা ভাষাকে দমিয়ে বাঙ্গালীদের চাকরি খেয়ে ফেলবে। ৬ দফাও তো ছিলো সম্পদের ন্যায্য হিস্যা দেওয়ার আন্দোলন, সেই সমস্ত আন্দোলনে বুদ্ধিজীবীরা এসেছিল, শিল্পীরা এসেছিল, সাংবাদিকরা এসেছিল।’

বিজ্ঞাপন

বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশে এমন এক দানবের উদ্ভব ঘটেছে যে দানব ছুঁয়ে দিলে সবাই বরফ হয়ে যায়। আবার সেই দানব অনেককে ছুঁয়ে দিয়ে তা সোনার হয়ে যায়। এই আমাদের সোনার ছেলেরা, সোনার কিছু সাংবাদিক, সোনার কিছু বুদ্ধিজীবী নীরব হয়ে গেছেন। তাদের শেষ অস্ত্র গুজব। গুজব রটানোর জন্য  ছাত্রছাত্রীদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে। সবার আগে সেই মিডিয়াকে শাস্তি দেয়া উচিত যারা কুৎসা রটনা করছে। যারা টকশোর নামে আন্দোলনের নেতাদের জেরা করে, কারণ তারা মনে করছেন যে তাদের হাতে ক্ষমতা আছে।’

সারাবাংলা/এমএস/এমআইএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন