বিজ্ঞাপন

বইমেলার শেষ ছুটির দিনে চলছে ধুম বেচাকেনা

February 23, 2018 | 3:54 pm

এসএম মুন্না

বিজ্ঞাপন

তখন ঘড়ির কাঁটা এগারটার ঘরে। এ সময়টাতে মেলার দ্বার খোলে দেওয়া হলেও কিছুটা ফাঁকা ফাঁকা ছিল। কিন্তু সময় যত সামনের দিকে এগুচ্ছে, ততই ক্রেতা-পাঠকের সমাগমে কোলাহল মুখর হয়ে উঠছে মেলা। সবে মাত্র কয়েক ঘণ্টা পেরিয়েছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে ঘনিয়ে নামবে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত, ততই বাড়বে নানা বয়সী মানুষের ভিড়। লোকারণ্য হয়ে উঠবে মেলাপ্রাঙ্গণ। বাড়বে বেচাকেনা। এখন মেলা যারা আসছেন, প্রায় সবার হাতে হাতে ব্যাগ ভর্তি বই। কারোর হাতে তালিকা। কী আনন্দ নিয়ে বই কিনছেন সবাই। শেষ দিকে এসে সব স্টলেই চলছে ধুম বেচাকেনা। তাই প্রকাশকদের মুখে হাসি লেগেই আছে।

মেলার ২৩ দিনে গড়াল আজ শুক্রবার। প্রথম দুই ঘণ্টা শিশু প্রহর হলেও সব বয়সী ক্রেতা মেলার প্যাভিলিয়ন ও স্টল ঘুরে কিনেছেন পছন্দের বই। কেউ একা আবার কেউ দলবেঁধে এসেছিলেন। প্রকাশকরা জানালেন, ‘আগের তুলনায় বিক্রির চিত্রটা খুবই ভালো যাচ্ছে। এখন আর কেউ ঘাঁটাঘাঁটি করছেন না, বই কিনছেন। মেলার শেষ শুক্রবার আজ। সাধারণত শুক্রবারে বেচাকেনা হয় খুবই জমজমাট। শেষ পর্যন্ত ভালো বিক্রির আশা করছেন প্রকাশকরা। আগামী প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী ওসমান গনি মেলার সার্বিক দিক নিয়ে সন্তুষ্ট। তিনি সারাবাংলাকে বলেন ‘মেলা এখন পরিণত হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের। পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি প্রকাশকের সংখ্যাও বেড়েছে। এবারকার মেলার স্টল বিন্যাসে কিছুটা অসঙ্গতি রয়েছে। তবে আশা করছি, মেলা কমিটি সে সব ত্রুটি কাটিয়ে আগামী বছর সুচারুভাবে প্যাভিলিয়ন ও স্টল বিন্যাস করবেন। একই সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়াবেন’।

বিজ্ঞাপন

পাঞ্জেরী পাবলিকেশনস এর সামনে কথা হলো একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী শাখাওয়াৎ লিপটনের সঙ্গে। হাতে সদ্য কেনা বইয়ের ব্যাগ। তিনি বললেন, ‘কয়েকবার মেলা ঘুরে কী বই কিনব তা ঠিক করে গেছি। আজ একগুচ্ছ বই কিনলাম। আরও বই কেনার ইচ্ছে আছে।’ তার মতো আরও কয়েকজন জানালেন, ‘এখন দেখাদেখির সময় নেই, বই কিনছি।’ তাদেরই একজন উত্তরখান ইউনিয়নের আটিপাড়ার জয়নাল মোল্লা। বললেন, ‘ব্যস্ততার কারণে মেলায় এবার দুই বারের বেশি আসতে পারি না। হাতে সময়ও বেশি নাই। বাসা থেকে তালিকা তৈরি করে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। এখন ঘুরে ঘুরে বই কিনছি। এখনই তো বই কেনার সময়-কী বলেন ভাই!’

বহু প্রকাশক জানালেন এবার প্রথম দিন থেকেই বিক্রির চিত্রটা ভালো। গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়া সবদিনই ক্রেতা-পাঠকের সমাগম ছিল সন্তোষজনক। সেই বিক্রির চিত্রটাও। তবে কিছু কিছু প্রকাশের মুখে বিরূপ মন্তব্য পাওয়া গেছে। শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবি আহসান সারাবাংলাকে বলেন ‘তার স্টলে এবার নাকি বেচাকেনা তেমন হয় নাই। তবে তিনিও আশা করছেন শেষের দিনগুলোতে ভালো বিক্রির। তিনি বললেন ‘এখন যারা তালিকা সঙ্গে নিয়ে আসছেন। বইও কিনছেন।’ তরুণ প্রকাশদের মুখেও শোনা বিরূপ সুর। তাদের একজন আদর্শ প্রকাশনীর প্রকাশক মামুনুর রশীদ। তবে তিনি আশাবাদী। বললেন ‘আগামী দিনগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শেষ সময়ে ক্রেতার ভিড় যেমন থাকুক না কেনো বিক্রির চিত্রটা ভালো থাকে।’

বিজ্ঞাপন

আর একটা মাত্র শিশু প্রহর আছে কাল শনিবার। যদিও এদিন সব কিছু-কিশোরদের ছুটি থাকে না। তাই আজ শুক্রবার শিশু প্রহর ছিল শিশুদের দখলে। নানা বয়সী শিশুদের ভিড়ে টইটুম্বর ছিল শিশু কর্নার। শিশুতোষ বই কেনার জন্য স্টলে স্টলে ছিল প্রচণ্ড রকমের ভিড়। যথারীতি এবারও শিশুদের মাতিয়ে রেখেছিল জনপ্রিয় সিসিমপুর কার্টুনের চরিত্রগুলো হালুম, টুকটুকি ইকরি, শিকুরা। তাদের মজাদার সব কাণ্ড-কারখানায় আনন্দ দিলেও শিশুরা ঠিকিই বই কিনতে এতটুকু ভুল করেনি। বরং অভিভাবকদের নতুন বই কিনে দেওয়ার জন্য ব্যতি-ব্যস্ত করে তুলেছিল।

শিশু কর্নারে গেট দিয়ে এক শিশু বের হচ্ছিল বাবার হাত ধরে। হোঁচট খেল সে হঠাৎ। বাবার হাত থেকে ছুটে পড়ে গেল মাটিতে। কিন্তু তার হাতের পাতলা রঙিন বইটার পড়ে ছুটে গেল আরও দূরে। শিশুটি নিজে উঠে দাঁড়ানোর আগে চিৎকার করে বলল, ‘আমার বই বাবা আমার বই। ’বাবা দ্রুত ছেলের হাত ধরে তুলে ধরলেন। কিন্তু ছেলে তখনও সামনে পড়ে যাওয়া বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে আকুতি, উৎকণ্ঠাও-বইটা কেউ নিয়ে যাবে না তো!

হন্ত-দন্ত হয়ে দুই হাতে দুই ব্যাগ নিয়ে মেলায় ঢুকছেন মাঝবয়সী একটা লোক। হাঁপাচ্ছেন তিনি। পরিচিত একজনের দেখা হতেই তার সামনে দাঁড়িয়ে পরলেন তিনি। ভারী ব্যাগ দুটো পায়ের কাছে রেখে বললেন, ‘একটা বই কিনতে ভুলে গেছি। দোয়েল চত্বরের কাছে গিয়েই মনে পড়ে গেল বইটা তো কেনা হলো না। তাই আবার ছুটে এলাম। কথা হলো মিনহাজুর রহমান নামে ওই ভদ্রলোকের সঙ্গে। তিনি এসেছেন শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনি থেকে। জানালেন ‘তার ছোট ভাই জাপানে থাকেন। দেশে থাকলে ভাইটি নিয়মিত মেলায় আসতো। জাপান প্রবাসী তার ছোটভাইটি হুমায়ূন আহমেদের রাজনৈতিক উপন্যাস ‘দেয়াল’ কিনে কারোর মাধ্যমে জাপানে পাঠাতে বলেছে। সেই বইটি কেনার জন্য মেলা এসেছিলাম। কিন্তু অনেক বই কিনতে গিয়ে সেই বইটির কথা মনেই ছিল না। মনে পড়তেই আবার ফিরে এলাম বইটি কেনার জন্য।’

বিজ্ঞাপন

মেলার মঞ্চের আজকের আয়োজন : বিকেল ৪ টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে রয়েছে শওকত আলীর সাহিত্যসাধনা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আবু হেনা মোস্তফা এনাম। আলোচনায় অংশ নেবেন ফারজানা সিদ্দিকা এবং তারেক রেজা। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। একই মঞ্চে সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সারাবাংলা/এমএ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
চবি ছাত্রকে মারধরের পর হলের ছাদ থেকে ফেলা চেষ্টার অভিযোগহিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৪ নির্দেশনাঢাকার পয়ঃবর্জ্য-গ্যাস লাইন পরীক্ষায় কমিটি গঠনের নির্দেশরানা প্লাজা ধস: ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন ও মামলা নিষ্পত্তির দাবিগরমে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনা সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি ডিএমপিরব্যাংক একীভূতকরণের নামে ঋণ খেলাপিদের দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছেন্যাপ বাস্তবায়নের জন্য চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আইনি ভিত্তিকাদেরকে নিয়ে মন্তব্য, যাত্রী কল্যাণের মহাসচিবের বিরুদ্ধে জিডিজাহাজেই ফিরবেন ২৩ নাবিক, চলছে কয়লা খালাসভুয়া তথ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার চেষ্টা! সব খবর...
বিজ্ঞাপন