বিজ্ঞাপন

বারেক সাহেবের দ্যি ড্রিম টু ডিম স্টোরি

October 23, 2018 | 12:19 pm

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ।।

বিজ্ঞাপন

ঘর থেকে বেড়িয়ে গাড়িতে ওঠার মুহুর্তে বিদ্যুতের তারে বসা কাকটা কাজ সেরে দিল। পড়বি তো পড় একেবারে কোটের যেখানটায় দলের নির্বাচনী প্রতীকের কোটপিনটা লাগানো, ঠিক তার উপর। ‘শালা আওয়ামী কাক’! কেমন গলা ছেড়ে কা কা করে ডাকছে কাকটা। মনে হচ্ছে যেন ভেংচি কাটছে। চুরিতো চুরি ফের সিনাজুরি! বারেক সাহেবের ইচ্ছা করছে হাতের নাগালে পেলে কাকটার টুটি চিপে ধরতেন। বহু কষ্টে একটা লাইন ম্যানেজ করেছেন বারেক সাহেব। একজন তরুন ব্যবসায়ী বিলেতের সাথে সরাসরি কথা বলার ব্যবস্থা করে দেবেন বারেক সাহেবকে। সামনে নমিনেশনের ব্যাপার-স্যাপার আছে। শুধু এলাকার দাওয়ায় কাজ হবে না, বিলেতের দোয়াও চাই। বরং তাতেই কাজ হবে ঢের বেশি। এখন স্যুট-ফুট চেঞ্জ করে ভদ্রলোককে ধরতে পারলে হয়। কাক বেটাকে শাপ-শাপান্ত করতে করতে এয়ারপোর্ট রোডের জ্যাম ঠেলে আগাতে থাকেন বারেক সাহেব।

কাকের খপ্পরে পরাটা কপালের ফের, কি বা করার আছে তার? কিন্তু অন্যের থু থু নিজের গায়ে মাখার দরকারটা কি, গাড়িতে বসে জ্যাম ঠেলেন আর ভাবেন বারেক সাহেব। ‘আগ বাড়িয়ে আমাদের কেন অন্যের থু থু গায়ে মাখতে হবে’! শোনা যায় বিচারপতি সাহেব মেলা আকাম-কুকাম করেছেন। টাকা পাচার, বিচারাধীন আসামীর আত্মীয়দের সাথে শলা-পরামর্শ, পয়সা নিয়ে রায় বদল কোনটা না? এসবের সত্যি-মিথ্যা জানেন না বারেক সাহেব। তবে জানেন বিচারপতি সাহেব তার সহকর্মীদের কাছে এসব সাওয়ালের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। পরে অসুস্থতার নাম করে মানে মানে কেটে পরেছেন। পদত্যাগের পর যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি-টারি কিনে ভালই ছিলেন। কি মনে হলো কে জানে, কে জানে কামড়ালো কোন ভূতে – ঠিক করলেন সরকারের লেজে পাড়া দিবেন জোরেসোরে। ভাড়াটে উকিল আর সাংবাদিক দিয়ে লিখিয়ে ফেললেন নিজের আত্মজীবনী, ‘ভাঙ্গা স্বপ্নের কেচ্ছা’। দুষ্ট লোকে অবশ্য বলছে, ‘ড্রিম না, ডিম ভাঙ্গার গপ্প’।

‘উনার ডিম ভাঙ্গে না ড্রিম, তাতে দলের কি’? ভাবেন বারেক সাহেব। অথচ দলের নেতারা যেভাবে ঝাপিয়ে পড়লেন মনে হলো তারা যেন সোনার খনি পেয়েছে। প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল যেন কে কার চেয়ে এ বিষয়ে গলাবাজি বেশি করবে। এখন সরকার যে হাঁটে হাড়ি ভাঙ্গছে তাতে দলের ডুবন্ত ভাবমূর্তির কি এতটুকুও লাভ হচ্ছে। কি জানি নেতারাই ভালো জানেন। বিচারপতি সাহেব তো মুখে কুলুপ এটে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বসে আছেন। তার তো লাভের ওপর লাভ। পয়সা সাথে নীল পাসপোর্ট। বঙ্গভবনে থাকার ড্রিমটা অবশ্য ভাঙ্গা ডিমই রয়ে গেলে।

বিজ্ঞাপন

এদেশে সুযোগ সন্ধানীদেরতো কোন কালেই কমতি ছিলনা। দলের মধ্যেও যে এমনি ক’জন থাকবেন তাতেও আর অবাকের কি? এরা সবসময়ই এসব সুযোগে জল ঘোলা করে নিজের আখের গোছানোর তালে থাকেন। সমস্যা হচ্ছে দলে এই লোকগুলোকে সামলানোর লোকগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। আর এখন এসবের ঠেলা সামলাতে হচ্ছে দলকে।

নেটে ভাইরাল হচ্ছে আরেক বিচারপতির কোন আমলের এক বই। বহু আগে বঙ্গবন্ধুর বদান্যতায় এদেশের প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন ওই ভদ্রলোক। অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর বন্দুকে ভর দিয়ে বঙ্গবন্ধুর খালি হওয়া চেয়ারটায় বসতে এক মিনিটও দেরি করেননি তিনি। আবার একদিন ভোরে বন্দুকের মুখেই গদি ছাড়তে হয়েছিল তাকে। ভোরবেলা খোদ সেনাপ্রধান তাকে বঙ্গভবনের বেডরুম থেকে বের করে রাস্তায় এনে ছেড়ে দিয়েছিলেন। নিজের সেই দুঃখের স্মৃতি নিয়ে তিনি লিখেছিলেন বঙ্গবভনের আখেরি দিনগুলোর কেচ্ছা। তখন ফেসবুক-টুক ছিলনা বলে রক্ষা। বইটা তেমন জানাজানি হয়নি। তাছাড়া তারা ক্ষমতায় এসেই অবশ্যই বইটা ব্যান্ড করে দিয়েছিলেন। আর এখন ফেসবুকের কল্যাণে সেই ভুলে যাওয়া কেচ্ছা-কাহিনী আবার জানাজানি হচ্ছে, গন্ধ ছড়াচ্ছে চারদিকে।

ইলেকশনটা কানের পাশে রেখে পরের থু থু গায়ে মেখে তাই কি অর্জন করলেন দলীয় নেতারা ভেবে পাননা বারেক সাহেব। নিজে লিখতে পারেন না। পারলে হয়তো লিখে ফেলতেন ‘দ্যি ড্রিম টু ডিম স্টোরি’।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : চিকিৎসক ও কলাম লেখক।

[মত-দ্বিমত বিভাগের প্রতিটি লেখার মতামত লেখকের নিজস্ব]

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন