বিজ্ঞাপন

বিএনপিকে হাত-পা বেঁধে সাঁতরাতে বলা হচ্ছে: মওদুদ

March 16, 2018 | 2:42 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সরকারি দলের দায়িত্বশীল নেতা, বিদেশি কূটনীতিক, সুশীল সমাজ এবং প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো বিএনপিকে নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘বিএনপিকে হাত-পা বেঁধে সাঁতরাতে বলা হচ্ছে।’

শুক্রবার (১৬ মার্চ) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা  বলেন।

কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এ প্রতিবাদ সভা আয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘‘ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, ‘আমরা চাই সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে এবং বিএনপিও নির্বাচনে আসবে। বিদেশি কূটনীতিকরা সাদা মনে বলছেন, ‘বিএনপির উচিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা।’সাথে সাথে সংবাদপত্রও বলে, ‘বিএনপির নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা উচিত।’ অনেকেই এসে আমাদের কানে কানে বলেন, ‘এবার কিন্তু নির্বাচন বর্জন করবেন না।”

কিন্তু তার সাথে সাথে তারা সরকারকে এই কথাগুলো বলে না, ‘নির্বাচনে অংঅশগ্রহণ করার জন্য যে ন্যূনতম পরিবেশ প্রয়োজন, সেটা নিশ্চিত করুন’— আক্ষেপ মওদুদের।

তিনি বলেন, ‘হাত-পা বেঁধে বিএনপিকে বলছেন, এখন আপনারা সাঁতার কাটেন। আমাদেরকে সাঁতার কাটতে বলছেন?— আমাদের নেত্রী জেলখানায়। আমাদের বিরুদ্ধে ৭৮ হাজার মামলা। ১১ লাখ নেতা-কর্মী আসামি। হাজার হাজার নেতা-কর্মী জেলখানায়।’

বিজ্ঞাপন

‘যত কথাই বলেন, যতভাবেই আপনারা আর্টিফিশিয়াল বিরোধী দল সৃষ্টি করেন না কেন। কোনো লাভ হবে না। বিএনপিই একমাত্র দল, যে দল  নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় আসতে পারে। যদি সেটা সত্যিকারে নির্বাচন হয়।’

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘ইদানিং যে ঘটনাগুলো ঘটল— বাসার (কাজী আবুল বাসার) চলে গেল। বাবু (শফিউল বারী বাবু) চলে গেল। আলাল (সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল) চলে গেল। বেছে বেছে আমাদের যারা সত্যিকারে কর্মী, মিড লেভেলের যারা লিডার, যারা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবে, তাদের সবাইকে হয় বাড়িতে থাকতে দেয় না, নইলে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়, নইলে তাদেরকে গ্রেফতার করে জেল খানায় রাখা হয়।’

তিনি বলেন, ‘‘আমাদেরকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ এলাকায় ঘরোয়া বৈঠক পর্যন্ত করতে দেওয় হয় না। কোনো একটা হলে বসে সভা করব  তার কোনো উপায় নেই। তার পরও আপনারা (আওয়ামী লীগ) বলছেন, ‘আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক’।’’

‘কিন্তু নির্বাচনটা কী করে করব— একটু বুঝিয়ে বলেন না। আমরা তো করতে চাই। বিএনপি তো একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা তো বুলেটে বিশ্বাস করি না। আমরা ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করি না। আমরা জনগণের জনসমর্থনের ওপর ভিত্তি করে রাজনীতি করি। এ রাজনৈতিক দলের একমাত্র ভিত্তি হলো জনসমর্থন— বলেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।

বিজ্ঞাপন

বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করে দেওয়া চেষ্টা হচ্ছে  উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তার পরও আমরা টিকে আছি একামত্র মাঠ পর্যায়ে, তৃণমূল পর্যায়ে, কৃষক-শ্রমিক-মজুর-দিন মজুর, ছাত্র-যুবক— এই জনসমষ্টির সমর্থনের ওপর নির্ভর করে। এটাই তো আমাদের শক্তি। সেই শক্তিকে পরীক্ষা করার জন্য যে সুযোগ সুবিধা আমাদের দেওয়া উচিত সেই সুযোগ সুবিধা থেকে আজকে আমরা বঞ্চিত।’

নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে প্রধানমন্ত্রী আইন লঙ্ঘন করছেন অভিযোগ করে মওদুদ বলেন, ‘অবশ্যই তার (প্রধানমন্ত্রী) অধিকার আছে, তিনি দলের জন্য নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারেন। তবে দলের সভানেত্রী হিসেবে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়। সরকারি সুযোগ সুবিধা নৌকায় ভোট চাইতে পারেন না তিনি। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে নিজের খরচে, দলীয় খরচে যাবেন। নৌকায় ভোট চাইবেন। কিন্তু সেই সাথে সাথে বেগম খালেদা জিয়াকেও একই সুযোগ দিতে হবে।’

নির্বাচন কমিশনকে পদলেহী নির্বাচন কমিশন আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশনের কোমরে জোর নেই, সাহস নেই। তারা এই কথা বলে না, এটা কী রকমের গণতন্ত্র? একটি দল সরকারি খরচে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। আর তারা বসে বসে দেখছে।’

‘আওয়ামী লীগের ভেতরে কিছু একটা হয়েছে’— এমন ইঙ্গিত দিয়ে মওদুদ বলেন, ‘এই দলের মহাসচিবের কথা নাই বললাম। সকলেই বক্তব্য একটু একটু পালটিয়েছেন। কী হয়েছে জানি না। তবে তাদের কথা  সাংঘর্ষিক। একদিকে বলছেন, আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। অন্যদিকে বলছেন, খবরদার কোনো সভা-সমাবেশ কিন্তু করতে দেব না। কোনো ঘরোয়া বৈঠকও করতে দেব না। আপনাদের সব নেতা-কর্মীকে মামলা দেব। তাদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ পাঠাব।’

‘সেই জন্যই বলি, প্রতারণা বলতে যেটা বোঝায়, সেটার চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে আওয়ামী লীগ’— বলেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

তিনি বলেন, ‘আমরা আশাবাদী। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র প্রিয়। বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচার পছন্দ করে না। আমরা ১৯৬৯ দেখেছি, এর আগে ১৯৬২ দেখেছি। তারও আগে ১৯৫২ সাল দেখেছি। স্বাধীনতার পর আমরা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন দেখেছি। শেষ পর্যন্ত জনগণের বিজয় হয়েছে। এবারও খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে আসবেন। জনগণের বিজয় হবে।’

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি আমির হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবীব লিংকন, এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বিএনপির সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহম্মদ রহমতউল্লাহ।

সারাবাংলা/এজেড/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন