বিজ্ঞাপন

বিএনপি নেতারা কে কোথায় ঈদ করবেন

August 21, 2018 | 5:37 pm

।। আসাদ জামান, স্পেশাাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। কিন্তু এই আনন্দ নানাজনের কাছে নানারকম। বিশেষ করে রাজনীতিবিদদের ঈদ সব সময় এক রকম হয় না। ক্ষমতায় থাকলে তাদের একরকম ঈদ, ক্ষমতার বাইরে থাকলে হয় আরেক রকম। টানা ১২ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি নেতাদের ঈদ গত কয়েক বছর ধরে নিরানন্দেই কাটছে।

বিগত ৪/৫ বছর মামলা, জেল-জরিমানা, গ্রেফতার-হুলিয়ায় জর্জরিত দলটির নেতারা খুব একটা স্বস্তিতে ঈদ করতে পারেননি। তবে এবারের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রয়েছেন কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিগত বছরগুলোর মতোই লন্ডনে। এমন পরিস্থিতিতে থাকছে না দলের পক্ষ থেকে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের আয়োজনও।

কিন্তু তারপরও থেমে থাকবে না বিএনপি নেতাদের ঈদ। ব্যথিত মন নিয়ে নিরানন্দ ঈদ করবেন তারা। নির্বাচনের বছর ঈদুল আজহাকে প্রচার-প্রচারণার সুযোগ হিসেবেও নেবেন কেউ কেউ। দলের বেশিরভাগ শীর্ষ নেতা নিজ নিজ এলাকায় কোরবানি করতে যাবেন। কেউ বা গ্রামের কোরবানি করে ঢাকায় ফিরবেন। কেউ আবার ঢাকায় কোরবানি করে গ্রামে যাবেন।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্রমতে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে নির্দেশ রয়েছে নির্বাচনের বছর হওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতা এবং সম্ভব্য এমপি প্রার্থীরা যেন নিজ নিজ এলাকায় ঈদ করেন। যতদূর সম্ভব সাধারণ মানুষের সঙ্গে সখ্য ও হৃদ্যতা বাড়ানোর। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এই নির্দেশ মতো এবার ঈদে বেশিরভাগ নেতা নেতা নিজ নিজ এলাকায় ঈদ করবেন।
গত এপ্রিলে মায়ের মৃত্যুর পর জুনে অনুষ্ঠিত ঈদুল ফিতর ঢাকায় করতে হয়েছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। ওই ঈদে দলের নেতাকর্মী, সমর্থকদের নিয়ে নাজিমুদ্দীন রোডের কারারের সামনে যান তিনি। সেখানে বন্দি খালেদা জিয়ার প্রতি সমবেদনা জানাতেই ছিল এই আয়োজন।

তবে এবার মির্জা ফখরুলের ঈদ করার কথা ছিল নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে। ঈদ উপলক্ষে কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের সিনিয়র নেতাদের সাক্ষাৎ করার সুযোগ দেওয়া হতে পারে— এমন সম্ভাবনা থেকে শেষ পর্যন্ত ঢাকাতেই ঈদ করছেন মির্জা ফখরুল। তাই ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের টিকেট করা থাকলেও সেটি শেষ মুহূর্তে বাতিল করেছেন তিনি।

বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান সারাবাংলাকে জানান, দলের সাধারণ নেতা-কর্মী, সমর্থক শুভাকাঙক্ষী এখনো বিশ্বাস করেন খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়েই ঈদ করবেন তারা। আর যদি সেটা না হয় তাহলে ঈদের নামাজ শেষে সকাল ১১টায় জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন তারা। সেখান থেকে সবাই মিলে নাজিমুদ্দীন রোডের পুরোনো কারাগারে যাবেন। জেলগেটের সামনে কিছু সময় অবস্থান করবেন তারা। ঈদের আনন্দঘন দিনে দলের চেয়ারপারসনকে গভীর সমবেদনা জানাবেন তারা।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঈদ করবেন ঢাকায়। ঈদের নামাজ শেষে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতে যাবেন তিনি। এর পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে নাজিমুদ্দীন রোডের পুরোনো কারাগারে যাওয়ার কথা রয়েছে তার। স্থায়ী কমিটির আরেক প্রবীণ সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ঈদ করবেন নির্বাচনি এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রবীণ রাজনীতিক তরিকুল ইসলাম ঈদ করবেন নির্বাচনী এলাকা যশোরে। তার ইসলামের ছোট ছেলে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত শনিবার (১৮ আগস্ট) সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এরইমধ্যে যশোরে পৌঁছে গেছি। পরিবারের সবার সঙ্গে এখানেই ঈদ করব।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ঈদ করবেন ঢাকায়, ড. মঈন খান ঈদ করবেন নির্বাচনী এলাকা নরসিংদীর পলাশে, নজরুল ইসলাম খান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস ঈদ করবেন ঢাকায়।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঈদ করবেন চট্টগ্রামে। বরাবরই তিনি চট্টগ্রামে ঈদ করে থাকেন। নির্বাচনের বছরে কোরবানী ঈদ নিজ এলাকাতেই করতে চান বিএনপির এই নীতিনির্ধারক। তবে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় নতুন একটি মামলা হওয়া নির্বিগ্নে ঈদযাপন তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তার নিকটজনেরা।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ যথারীতি ঈদ করবেন ভারতে। অনুপ্রবেশের দায়ে ২০১৫ সাল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে আছেন তিনি। গত ৩ বছরে ৬টি ঈদ সেখানেই করতে হয়েছে তাকে। এবারও সেখানেই ঈদ করতে হবে তাকে।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রবীণ রাজনীতিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ঈদ করবেন ঢাকায়। গুলশান জামে মসজিদের ঈদের নামাজ শেষে স্ত্রীর কবর জিয়ারত করবেন তিনি। এরপর বাসায় নিজের নির্বাচনী এলাকা থেকে আসা নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি।

দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম ঈদ করবেন ঢাকায়। বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের তো আর ঈদ নেই। ঢাকাতেই থাকব। ঈদের নামাজ শেষে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করতে যাব।’

ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দীন আহমেদ ঈদ করবেন ঢাকায়। বনানী মসজিদে নামাজ শেষে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতে যাবেন তিনি। সেখান থেকে যাবেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পুরোনো কারাগারে। সারাবাংলাকে মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘ঈদের নামাজ আদায় শেষে দলীয় প্রোগ্রামে যোগ দেব।’

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাদা মিয়া, জয়নুল আবদীন ফারুক ঢাকায় ঈদ করবেন। নয়াপল্টন কার্যালয়ে অবস্থান নেওয়া বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর ঈদ নিজ দফতরেই হচ্ছে। দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঈদ করবেন ঢাকায়, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুও ঈদ করবেন ঢাকায়।
বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব ঈদ করবেন ঢাকায় আর সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে ঈদ করতে হবে কারাগারে। ঈদুল ফিতরের দুই দিন আগে উত্তরার বাসা থেকে আটক হন তিনি।
মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ঈদ করবেন ঢাকায়। সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদও ঈদ করবেন ঢাকায়। মহিলা দলের এই দুই কাণ্ডারি ঈদের দিন জেল গেটে যাবেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার জন্য। বিকেলে নির্বাচনী এলাকায় ধামরায়ে যাবেন সুলতানা আহমেদ।

এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল ঢাকায় ঈদ শেষে নিজ এলাকায় যাবেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ঈদ করবেন ঢাকায়।

তবে বিএনপি নেতারা যে যেখানেই ঈদ করুন না কেন, খুব একটা আনন্দঘন হচ্ছে না তাদের ঈদ। দলের চেয়ারপারসন কারাগারে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রয়েছেন নির্বাসনে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। ঈদের পর কেমন পরিস্থিতি তাদেরকে মোকাবেলা করতে হবে— তা নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়।

সারাবাংলা/জেডএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন