বিজ্ঞাপন

‘বিচার ব্যবস্থায় নারীরা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন’

August 18, 2018 | 9:21 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, বিচার পাওয়া প্রতিটি মানুষের মানবিক অধিকার হলেও নারীরা বিচার ব্যবস্থায় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিন্তু কাঙ্ক্ষিত বিচার পাচ্ছে না। প্রতি ১০০ জনে ৯৮ জন বিচার পায় না- এ তথ্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তাই বিচারকার্যের সঙ্গে জড়িত সবার মানসিক পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি।

শনিবার (১৮ আগস্ট) ‘নারীদের জন্য বিচারব্যবস্থা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক ডেইলি স্টারের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সভাটি গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা (জিএসি) ও অক্সফ্যাম এর সহায়তায় ‘ক্রিয়েটিং স্পেস টু টেক অ্যাকশন অন ভায়োলেন্স অ্যাগেইন্সট উইমেন অ্যান্ড গার্লস’ প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত হয়।

সকলের সমন্বয়ে, সব তথ্য উপাত্ত নিয়ে এবং করণীয় নির্ধারণ করে একটি সুপারিশমালা তৈরির উপর ড. কাজী রিয়াজুল হক গুরুত্বারোপ করে সরকারের সঙ্গে আলোচনার কথা বলেন তিনি। যতদিন বিচারহীনতার সংস্কৃতি বজায় থাকবে, বিচারিক দীর্ঘসূত্রিতা দূর না হবে ততদিন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না বলেও জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

মতবিনিময় সভায় নারীদের বিলম্বিত বিচার প্রক্রিয়া বিষয়টি প্রাধান্য পায়। সেখানে বক্তারা বলেন, ‘নারী বিষয়ক অধিকাংশ মামলায় দ্রত বিচারের তেমন কোন চিত্র পাওয়া যায় না কিন্তু বিলম্বিত বিচার যেনো নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী যখন মামলা পরিচালনা করে তখন অপরপক্ষে প্রভাবশালী আইনজীবী থাকায় মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের কাছে যথেষ্ট গুরুত্ব পায় না। ধর্ষণের মতো মামলায় জামিনের ঘটনা ঘটে, খুনের ঘটনায় আপোষের উদাহারণ চলে আসে।’

বক্তারা বলেন, ‘শিশু আইনের ১৭ (১) ধারার সীমাবদ্ধতার কারণে শিশু রিশার মামলার কালক্ষেপণ হচ্ছে, মামলা ঝুলে আছে। আবার রূপা হত্যা মামলা উচ্চ আদালতে ৭-৮ মাস পেরিয়ে গেলেও কোন অগ্রগতি হয়নি। এমনকি কোনো শুনানির তারিখও পড়েনি।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের ওমেন সার্পোট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের উপ-পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘পুলিশ নির্ধারিত সময়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়ে আদালতে পাঠায় কিন্তু আসামি জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়। শুধু পুলিশকে অভিযুক্ত না করে সবাই মিলে এক সাথে কাজ করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘রূপা ও রিশার মামলায় অপরাধী তেমন প্রভাবশালী নয় তবু বিচারকার্যে ধীর গতি, দীর্ঘসূত্রিতা।’

সভা প্রধানের বক্তব্যে আমরাই পারি জোটের জাতীয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির বলেন, ‘বিচারব্যবস্থা ও মনমানসিকতা পরিবর্তন করা সময়ের দাবি। নারীদের জন্য সমান অধিকার, সমান সুযোগের ন্যায় নারীর জন্য আইনিব্যবস্থা, সুযোগ-সুবিধা, বিচারব্যবস্থা সমান হওয়া বাঞ্ছনীয়।’

জোটের নির্বাহী সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক তার বলেন, ‘এজাহার লেখা থেকে তদন্ত, তদন্ত রিপোর্ট থেকে আদালতে বিচারের জন্য ধর্না দেয়া প্রতিটি পর্যায়ে নারীদের হয়রানীর শিকার হতে হয়। একইসঙ্গে পুলিশি ব্যবস্থা, আইনজীবীদের মানসিকতা, মেডিকেল টেস্ট, বিচারিক প্রক্রিয়ার বাঁধা পেরিয়ে ন্যয্য বিচার পাওয়া নারীর জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে।’

অপরদিকে, সাংবাদিক কুররাতুল আইন তাহমিনা একটি গবেষণা থেকে জানান, নারী নির্যাতনের মামলায় সাজা হয়েছে মাত্র ২.৫৫ শতাংশ আসামির, ৫৫ শতাংশ মামলা খালাস হয়ে যায় এবং ৪১ শতাংশ মামলায় আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘নারী নির্যাতন মামলায় আপোষ করার হারও বেশি, এতে পুলিশও সাহায্য করে।’

বিজ্ঞাপন

মতবিনিময় সভায় পরিবেশ আদালতের বিচারক মো. শওকত হোসেন বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিচারব্যবস্থার জন্য যে বাজেট দেওয়া হয় তা অপ্রতুল এবং সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থার জন্য তা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নয়।’

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন নারী সংগঠনের নেত্রী, সরকারি-বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধি, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক, প্রতিবন্ধী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/জেএ/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন