বিজ্ঞাপন

বিদেশি লিগে বাংলাদেশের ফুটবলাররা খেলতে পারেন না কেন?

January 18, 2019 | 10:44 pm

।। জাহিদ-ই-হাসান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকাঃ এক দশক আগেও বিদেশের লিগে দেশের ফুটবলারদের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। শেখ আসলাম, মোনেম মুন্না ও সাব্বিররা মাঠ মাতিয়েছেন বিদেশের মাটিতে। তার আগে ফুটবল কিংবদন্তি ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন হংকং পেশাদার লিগ দাঁপিয়েছেন। কাল পরিক্রমায় বিদেশি লিগে বাংলাদেশের ফুটবলারদের চাহিদা কমে গেছে। সেখানে প্রতিবেশি দেশগুলোর ফুটবলাররা ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের লিগে জায়গা করে নিচ্ছেন।

প্রশ্নটা তাই স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে- কেন বিদেশি লিগে খেলতে পারছেন না বাংলাদেশের ফুটবলাররা?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দিন দিন অবনমন হচ্ছে দেশের ফুটবলের। ফুটবল বিশ্বব্যাপী একটা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। সেখানে বিদেশি ক্লাবগুলো পূর্ণ প্রতিযোগিতার বাজারে ভালো ফুটবলারই দলে ভেড়ায়। সেখানে বাংলাদেশের ফুটবলের মানদণ্ড সেই মানের দাঁড়ায় নি। যার ফলে প্রোডাক্ট হিসেবে দেশের ফুটবলাররা উন্নত লিগে যেতে পারছেন না।

বিজ্ঞাপন

দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছেঃ

বিশ্বজুড়ে সিংহভাগ দেশের ফুটবলাররা পাড়ি জমান উন্নত লিগে। ক্লাবগুলোর চুক্তি করছেন ফুটবলারদের। সঙ্গে। এশিয়ার চিত্রটা একই। কোরিয়া-জাপান-ইরানের মতো দেশগুলোর ফুটবলাররা জায়গা করে নিচ্ছেন উন্নত বিদেশি লিগে। দক্ষিণ এশিয়ায় ফুটবলটার সার্বিক চিত্রটাও একই। ইউরোপের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে না পারলেও এগিয়ে যাচ্ছে এই অঞ্চলের খেলোয়াড়রাও।

পাকিস্তানের কথাই ধরুন। ফিফার নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা এই দেশের ফুটবলাররা মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া  ও ডেনিস লিগে খেলছেন। তাদের মধ্যে গোলরক্ষক ইউসুফ বাট, জেশ রহমান, ইয়াকুব আইজাজ বাট, নাভিদ রহমান, হাসান বাশির (ভাইস ক্যাপ্টেন), আদনান মোহাম্মদ, আব্দুল্লাহ কাজী, সাকিব হানিফ বিভিন্ন লিগে খেলছেন।

বিজ্ঞাপন

নেপালের তিন ফুটবলার মালদ্বীপ, অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশের লিগে খেলছেন। শ্রীলঙ্কারও একজন বাইরে লিগে খেলছেন। কয়েক লাখ মানুষের ছোট্ট আয়তনের ভুটানেরও চারজন ফুটবলার বাইরে খেলছেন। চেনচো গেইলশেনতো রীতিমত ভারতের তারকাই বনে গেছে। আইএসএল  মাতাচ্ছেন, তাছাড়া দেশটির দাওয়া, দর্জি, ওয়াংচুকরা ভারতের লিগে খেলছেন।

প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতও বিভিন্ন টুর্নামেন্টসহ ফ্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগ করে পেশাদার ফুটবলকে এগিয়ে নিয়েছে অনেকখানি। ফোরলানের মতো বিশ্বমানের ফুটবলাররা আইএসএল  খেলে গেছেন। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় ভারতের ফুটবল হয়েছে চাঙা। দেশটির বর্তমান র্যাঙ্কিং তারই প্রতিচ্ছবি। এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলছেন সুনীল ছেত্রীরা। সেখানে বাংলাদেশতো ৩৮ বছর ধরে ‘যোগ্যতাই অর্জন’ করতে পারছেন না।

বিদেশি লিগে বাংলাদেশের ফুটবলাররাঃ

আশির দশকে হংকং পেশাদার লিগে খেলেছিলেন দেশের ফুটবল কিংবদন্তি কাজী সালাউদ্দিন। তারপরে তারই উত্তরসূরী সাব্বির, শেখ আসলাম ও মোনেম মুন্নার মতো ফুটবলাররা ভারত মাতিয়েছেন। তার এক দশক পরে ২০১৪ সালে ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগে খেলার সুযোগ হয় দেশের জাতীয় দলের তারকা ফুটবলার মামুনুল ইসলাম মামুনের। যদিও অ্যাথলেটিকো দ্য কলকাতার হয়ে বেঞ্চ গরম করতে হয়েছে মামুনকে। নামতে পারেন নি একটি ম্যাচও। এর মাঝে গেল বছর নেপালের দ্বিতীয় স্তরের লিগে খেলে এসেছেন গোলরক্ষক নুরুল করিম।

বিজ্ঞাপন

হাতে গোনা এই পাঁচ-ছয়জন ফুটবলার ছাড়া কোনও ফুটবলারই বিদেশি লিগের অংশ হতে পারেন নি। তবে,পুরুষ ফুটবলাররা না পারলেও দেশের দুই নারী ফুটবলার খেলেছেন ভারতের প্রথম নারী ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগে। সাবিনা খাতুন ও কৃষ্ণা রাণী রায় খেলেছেন সেথু এফসির হয়ে।

কি করতে হবে বাংলাদেশ ফুটবলের?

ভারত মাতানো দেশের তারকা ফুটবলার শেখ আসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘যদি তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবলার তৈরি করা না যায় তাহলে কোয়ালিটিফুল প্লেয়ার আসবে না। আমাদের লিডারশিপে ফুটবল যতটুকু এগোনোর কথা তার থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। দেশের কোন ফুটবলার বাইরে খেলার মানে হচ্ছে এ দেশের ফুটবলটা উন্নত হচ্ছে। কিন্তু সে সুযোগ দেখছি না আপাতত।

তৃণমূল পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না নিলে ফুটবলের যেমন উন্নতি হবে না তেমনি দেশি ফুটবলারদের বাইরে চাহিদা হবে না বলে মনে করছেন তিনি, ‘আমাদের দেশের ফুটবলের যে স্টাটাস তাতে অদূর ভবিষ্যতে কোন ফুটবলারের বিদেশের লিগে খেলার সুযোগ দেখছি না। সূর্য যখন উঠে সবাই দেখতে পায়। সেই সূর্য এখন অস্তমিত প্রায়।’

আরও পড়ুন:

অপেক্ষার প্রহর ফুরাবে কবে?

জাতীয় ফুটবলারদের পারিশ্রমিক নেই কেন?

সারাবাংলা/জেএইচ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন