বিজ্ঞাপন

বিপদে ভরসা ৯৯৯

January 22, 2018 | 9:01 am

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : কল্যাণপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের গেটের ওপর দাঁড়িয়ে ১৮ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঝালাইয়ের কাজ করছিলেন দুজন শ্রমিক। বিদ্যুতের মূললাইন থেকে সংযোগ নিয়ে কাজ করছিলেন তারা। একপর্যায়ে দুটো তার একসঙ্গে লেগে যাওয়ায় এক শ্রমিক মারাত্মকভাবে আহত হন। আমি ফোন দিলাম ৯৯৯ এ। ফোন দেবার ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি উপস্থিত, তারা উদ্ধার করেছে আহত ছেলেটিকে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ফেসবুকে এই কথা লিখেছেন সাংবাদিক মোস্তফা মল্লিক।

ওই ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ঘটনার সময়ে আশেপাশের অসংখ্য মানুষ ছবি তুলছে, দেখছে। মনে হলো ৯৯৯ এর কথা। এই প্রথম ফোন দিলাম ৯৯৯-এ। স্যার সম্বোধন করে একজন নারী জানতে চাইলেন ‘কি করতে পারি আপনার জন্য?’

পুরো ঘটনা বলার পর ফায়ার সার্ভিসে আপনাকে ট্রান্সফার করে দিচ্ছি বলে কিছুক্ষণ পর তিনিই বলেন, ‘অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার আপনাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের লোক যাচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

মোস্তফা মল্লিক বলেন, এরই মধ্যে চলে গেছে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। দেখলাম, ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি ছেলেটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে।

একইভাবে গত ১২ জানুয়ারি অ্যাক্টিভিস্ট এবং নির্মাতা পিকলু চৌধুরী ফেসবুকে জানান তার নিজের অভিজ্ঞতার কথা। সেখানে তিনি লেখেন, গুলশান এক নাম্বারে এক শিশুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এক দম্পতি। কিন্তু শিশুটি বাসা খুঁজে পাচ্ছে না। সঙ্গে থাকা দম্পতি চেষ্টা করছিলেন শিশুটির নাম, বাবা-মায়ের নাম এবং ঠিকানা জানার। কিন্তু শিশুটি কেবল ঠিকানা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছিল না। পরে সেখানে আরও অনেকে জড়ো হন, তারাও চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুই হচ্ছিল না।

পিকলু চৌধুরী লিখেন, আমার হঠাৎ ‘৯৯৯’ এর কথা মনে হলো। কল দিলাম, তারা বিস্তারিত শুনলেন এবং গুলশান পুলিশকে জানালেন। আমাদের অবাক করে দিয়ে গুলশান থানার তদন্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন কল দিলেন মাত্র ১ মিনিটের মাথায়। তিনি জানালেন একজন সাব ইন্সপেক্টরসহ গাড়ি পাঠানো হয়েছে। বাচ্চাটির পরিবারকে খুঁজে পেতে সব ধরনের চেষ্টা তারা করবেন। আরও অবাক করে দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশের গাড়ি এলো এবং বাচ্চাটিকে বুঝে নিল। এর পর পুলিশ খুঁজে পায় শিশুটির বাবা-মাকে, পুলিশ শিশুটিকে তারে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

বিজ্ঞাপন

গত ২৩ ডিসেম্বর শ্বাসকষ্টে ভোগা বোন রুবি আক্তারকে নিয়ে রাত ২টার সময় কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান ভাই নুর নবী সুমন। কিন্তু সেখানে গিয়ে হাসপাতালের দরজা বন্ধ পান এই ভাইবোন। অনেক ডাকাডাকি করেও তারা হাসপাতালের দরজা খোলাতে পারেননি, খুঁজে পাননি কাউকে।

আর তখন সুমন ফোন দেন ৯৯৯-এ। ২০ মিনিটের মধ্যে সেখানে হাজির হন পুলিশ। আর এর পর হাসপাতালের দরজা খোলা থেকে শুরু করে চিকিৎসক ডেকে সব ধরনের ব্যবস্থা করেন তারা। তারা ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন কি না পরে তারা জানতে সুমনকে ফোনও করেন।

এভাবেই এখন মানুষ উপকৃত হচ্ছে ন্যাশনাল ইমারজেন্সি সার্ভিস ৯৯৯ এ কল দিয়ে। গত ১২ ডিসেম্বর অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পুলিশি সেবা ও ফায়ার সার্ভিস সেবা নিয়ে উদ্বোধন হয় ৯৯৯ সার্ভিসের। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এই সার্ভিসের উদ্বোধন করেন।

পুলিশ সদর দফতর থেকে বলা হয়, জনগণের কাছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পৌঁছানোর লক্ষ্যেই জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ চালু হয়েছে। ৯৯৯ এ কল করে দেশের যে কোনও নাগরিক পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেস সেবা নিতে পারবেন। সম্পূর্ণ ফ্রিতে যে কোনও মোবাইল ও ল্যান্ড ফোন থেকে এ নম্বরে কল করতে পারেন দেশের মানুষ।  উদ্বোধন হবার পর থেকে গত ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৮ দিনে এই ৯৯৯ এ কল ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৭২১ টি।

বিজ্ঞাপন

৯৯৯ কার্যালয় থেকে জানা যায়, প্রতিদিন এখানে মোট বিশ হাজারের মতো কল আসে।

মোট ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৭২১ টি কলের মধ্যে সমাধানযোগ্য কল ছিল ২ হাজার ১২২টি। অগ্নিকাণ্ড সংক্রান্ত কল ছিল ৫০৪টি, যেগুলোকে হট কল বলা হয়। ৭৩৫ টি কল ছিল নারীর, ৩ হাজার ৩৪১ টি কল ছিল শিশুর, মিসড কল ছিল ৫৮ হাজার ৩৩৯টি, ব্ল্যাঙ্ককল ছিল ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮২টি, বিরক্তিকর কল ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার এবং পুলিশের বিভাগীয় কল ছিল ৫৩৫টি।

শুধুমাত্র কল করে সাহায্য চাওয়াই নয়, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও বিভিন্ন হাসপাতালের ফোন নম্বর ও লোকেশন ম্যাপও রয়েছে ৯৯৯ এর মোবাইল অ্যাপস ও ওয়েবসাইটে।

কল সেন্টারের দায়িত্বে থাকে পুলিশ পরিদর্শক মো. জালিস মাহমুদ সারাবংলাকে বলেন, প্রতিদিন তিন শিফটে ভাগ করে কাজ হয় এই ন্যাশনাল ইমারজেন্সি সার্ভিস কল সেন্টারে। একইসঙ্গে এখানে ২৪ টি ফোনকল রিসিভ করা যায়, সে হিসেবে প্রতি শিফটে কল ট্রাকার রয়েছেন ২৪ জন, কল ডিসপার্চার ৩ জন এবং সুপারভাইজার রয়েছেন ২ জন।

মূলত ফায়ার সার্ভিস, জরুরি অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশি সেবার জন্য এই ৯৯৯ কাজ করলেও সেখানে অনেক বিষয় নিয়েই কল করেন মানুষ। যেগুলোর সমাধান কোথায় হবে কিংবা কোথায় অভিযোগ করা যাবে সে বিষয়েও আমরা তাদেরকে পরামর্শ দিয়ে থাকি বলেন জালিস মাহমুদ।

তবে বিরক্তিকর এবং অনেক বেশি ফেক কল আসে জানিয়ে জালিস মাহমুদ বলেন, মানুষ বোঝে না এই কল সেন্টার কেবলমাত্র জরুরি সার্ভিসের জন্য। তবে যারা কল করে আমাদের নষ্ট করে তাদেরকে অতি শিগগিরই আইনে আওতায় আনা হবে।

এই সার্ভিস সর্ম্পকে মানুষ এখনও তেমন করে জানে না মন্তব্য করে জালিস মাহমুদ বলেন, প্রতিটি স্কুল-মাদ্রাসায় ক্লাস শুরু হবার আগে যেমন শপথ পড়ানো হয়, তেমনি করে যদি এসব ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ‘ট্রিপল নাইন’ নাম্বারটি সর্ম্পকে জানানো হয় তাহলে দেশে সমস্যার সমাধান হবে। তাই এ সর্ম্পকে সচেতনতা জরুরি-মানুষ যেন জানতে পারে, যে কোনও জরুরি বিপদের সময়ে তাদের পাশে আছে এই ৯৯৯।

সারাবাংলা/জেএ/একে/জেডএফ

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন