বিজ্ঞাপন

বিলবোর্ড নেই, ব্যানার-পোস্টারও রাখবেন না চট্টগ্রামের মেয়র

April 18, 2018 | 12:00 pm

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নির্বাচিত হওয়ার পর বিলবোর্ডের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। টানা অভিযান চালিয়ে বিলবোর্ডমুক্ত করেছিলেন চট্টগ্রাম নগরীকে। মেয়র এবার নগরীর যত্রতত্র পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, ডিসপ্লে, সাইনবোর্ড লাগানোর বিরুদ্ধে অভিযানে নামছেন।

যারা পোস্টার-ব্যানার লাগিয়েছেন, তাদের সেগুলো নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এরপর ২ মে থেকে নগরীজুড়ে একযোগে শুরু হবে অপসারণ।

চট্টগ্রাম নগরজুড়ে লাগানো ব্যানার-পোস্টারের প্রায় সবই সরকাদলীয় নেতাদের। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বেও আছেন। নিজ দলের নেতাকর্মীদের বিরাগভাজন হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও মেয়র এই ব্যাপারে অনড় অবস্থান নিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত ‘গ্রীণ সিটি, ক্লিন সিটি’ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ হিসেবে পোস্টার-ব্যানার অপসারণের এই কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

মেয়র বলেন, পুরো নগরীতে আমরা সবুজায়ন এবং সৌন্দর্য্যায়নের কাজ শুরু করেছি। এর মধ্যে যত্রতত্র ব্যানার-পোস্টার, প্ল্যাকার্ড লাগানো হচ্ছে। এই অবস্থায় নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের কাজটা তো পণ্ডশ্রমে পরিণত হচ্ছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন ফোরামে এই বিষয়ে কথা বলেছি। সবার সহযোগিতা চেয়েছি। কিন্তু এতে কাজ হচ্ছে না। যেহেতু আমাদের অনুরোধে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে অপসারণ ছাড়া বিকল্প নেই। এছাড়া আমাদের আইনেই আছে যত্রতত্র পোস্টার-ব্যানার লাগানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, ২ মে থেকে সব ধরনের পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, সাইনবোর্ড, ডিসপ্লে অপসারণে মাঠে নামবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সাথে থাকবে সিটি করপোরেশনের কনজারভেন্সি টিম। ৪১ ওয়ার্ডে একযোগে কাজ শুরু হবে। তিন সদস্যের একটি মনিটরিং টিম থাকবে প্রত্যেক ওয়ার্ডে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলররাও সরাসরি এই কার্যক্রম তত্তাবধান করবেন।

সিটি করপোরেশন আইন, ১৯৯০ এর ৯২ ধারার ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যত্রতত্র পোস্টার-ব্যানারসহ প্রচারপত্র সেঁটে দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইনের আওতায় ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান আছে বলে জানিয়েছেন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, যেসব পোস্টারে নাম-ঠিকানা থাকবে না, সেগুলো আমরা খুলে নিয়ে যাব। যাদের নাম-ঠিকানা পাওয়া যাবে, তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করব।

বিজ্ঞাপন

মেয়র জানিয়েছেন, নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। সেই স্থানের নাম পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নগরবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
সিটি করপোরেশন করবিধি, ১৯৮৬ এর ৭৪ ধারা মোতাবেক কর পরিশোধ করে যে কেউ সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে নিজস্ব বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন মেয়র।

চট্টগ্রাম নগরীতে দেওয়ালে, খুঁটিতে এবং দড়ি দিয়ে টেনে সড়কের উপরে লাগানো পোস্টার-ব্যানারের অধিকাংশই নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এমনকি ছাত্রলীগের নেতাদের লাগানো। এর মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীতা ঘোষণা করে পোস্টার আছে। চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ লাগিয়েছেন সরকারের গত নয় বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের লাগানো পোস্টার-ব্যানারও আছে বিভিন্ন অলিগলি ও মূল সড়কে।

নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে লাগানো পোস্টার-ব্যানার নিয়ে আপত্তি আছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি নেতাদেরও।

নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর সারাবাংলাকে বলেন, মামলায় হাজিরা দিতে দিতে আমাদের দিন যাচ্ছে। বাসায় থাকতে পারছি না। পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। আরেকপক্ষ কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তফসিল ঘোষণার আগেই নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে পোস্টার-ব্যানার লাগাচ্ছে। এভাবে তো নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না।

দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক ধরে চট্টগ্রাম নগরীজুড়ে ছিল বিশাল বিশাল বিলবোর্ড। বিলবোর্ডের কারণে পাহাড়, নদী এবং সাগরঘেরা চট্টগ্রাম নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঢাকা পড়েছিল বলে ক্ষোভ ছিল নগরবাসীর। খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ বিশিষ্টজনদের পক্ষ থেকে এবং বিভিন্ন মহল থেকে সেগুলো অপসারণের আহ্বান এসেছিল। ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ ও সিটি করপোরেশন যৌথভাবে বিলবোর্ড অপসারণের কাজ শুরু করেও পিছিয়ে যায়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিলবোর্ড ব্যবসার একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল চট্টগ্রাম মহানগরের যুবলীগ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের। এজন্য রাজনৈতিক বাধায় বিলবোর্ড অপসারণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের জুলাইয়ে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন দায়িত্ব নেওয়ার পর বিলবোর্ড অপসারণ কার্যক্রমে গতি আসে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে মাসখানেক ধরে অভিযান চালিয়ে পুরো নগরীকে বিলবোর্ডমুক্ত করা হয়। অপসারণ করা হয় হাজারেরও বেশি বিলবোর্ড।
তবে সেসময় অভিযোগ উঠেছিল, বিলবোর্ড ব্যবসার সঙ্গে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা যুক্ত থাকায় দায়িত্ব নিয়েই সেগুলো দ্রুত অপসারণ করেছিলেন মেয়র নাছির।

এবারও পোস্টার-ব্যানার অপসারণের কাজ শুরুর আগে থেকেই নগর আওয়ামী লীগে প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা অভিযোগ করে আসছেন, সিটি করপোরেশনের কর্মীরা বেছে বেছে তাদের পোস্টার-ব্যানার খুলে ফেলছেন।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, দারুল ফজল মার্কেটে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে আইল্যান্ডে তিনদিন ধরে হিযবুত তাহরীরের ব্যানার ঝুলছিল। সেটা অপসারণ করা হয়নি। হিযবুত তাহরীরের পোস্টার, জামায়াত-শিবিরের পোস্টার, খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে বিএনপি নেতাদের লাগানো পোস্টার অক্ষত থাকছে। আর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের পোস্টার তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরীতে বিভিন্ন দেওয়ালে মেয়রের অনুসারীদের ব্যানার-পোস্টারও শোভা পাচ্ছে। সেগুলো অপসারণ করা হবে কি না, নাকি শুধুমাত্র বিরোধীদের পোস্টারগুলোই সরানো হবে-রাজনৈতিক এমন বিতর্ক এড়িয়ে পোস্টার-ব্যানারমুক্ত নগরী গড়তে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি মেয়র।

সারাবাংলা/আরডি/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন